বার্সার বিদায়, ক্যাম্প ন্যুয়ে ফ্রাঙ্কফুর্টের ৩০ হাজারেরও বেশি সমর্থক

কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাঠে জার্মান ক্লাব আইনট্রাখট ফ্রাঙ্কফুর্টের বিপক্ষে হেরে ইউরোপা লিগ থেকে বিদায় নিয়েছে কাতালান ক্লাব বার্সেলোনা। দ্বিতীয় লেগের ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছে বার্সার মাঠ ক্যাম্প ন্যুয়ে। কিন্তু মাঠের ভেতরের সমর্থকদের উপস্থিতি দেখে কে বলবে খেলা হয়েছে বার্সার ঘরের মাঠে। বার্সার সমর্থকদের চেয়ে ফ্রাঙ্কফুর্টের সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল বেশি।

বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) দিবাগত রাতে বার্সার মাঠ ক্যাম্প ন্যুয়ে ইউরোপা লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে বার্সেলোনাকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে ফ্রাঙ্কফুর্ট। প্রথম লেগে ফ্রাঙ্কফুর্টের মাঠে ১-১ গোলের ড্র করেছিল জাভি হার্নান্দেজের শিষ্যরা। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলের অগ্রগামিতায় সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলল ফ্রাঙ্কফুর্ট। অথচ, গত ১৫ ম্যাচ পর্যন্ত অপরাজিত ছিল বার্সেলোনা।

লিওনেল মেসিকে ছাড়া এবারই প্রথম মৌসুম বার্সেলোনার। চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বেই বিদায়ের পর ইউরোপা লিগে নেমে যেতে হলো দলটিকে। সেখানেও শেষ আটেই বিদায় তো হলোই, তাতে ঘরের মাঠে জিততে না পারার একটা অস্বস্তিও যোগ হলো। শেষ ষোলোর প্লে-অফে নাপোলি আর শেষ ষোলোতে গালাতাসারাইয়ের সঙ্গে ঘরের মাঠে ড্র করলেও দ্বিতীয় লেগে প্রতিপক্ষের মাঠে জিতে পরের রাউন্ডে উঠেছিল বার্সা। কোয়ার্টার ফাইনালে লেখা হলো উল্টো গল্প। প্রতিপক্ষের মাঠে ড্রয়ের পর নিজেদের মাঠে হেরেই গেল!

ক্যাম্পে ন্যুয়ে ম্যাচ শুরুর চতুর্থ মিনিটে ফিলিপ কস্তিচের পেনাল্টিতে এগিয়ে যায় সফরকারিরা। পরে ৩৬ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ফ্রাঙ্কফুর্ট। কস্তিচের কাছ থেকে বল পেয়েই বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শটে গোল করে দলকে ব্যবধান বাড়ান কলম্বিয়ান ফরোয়ার্ড রাফায়েল বোরে। এতে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ফ্রাঙ্কফুর্ট। এরপর দ্বিতীয়ার্ধের ৬৭ মিনিটে আবারো গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়ে নিজের জোড়া গোল পূর্ণ করেন ফিলিপ কস্তিচ। ৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে ম্যাচটা পুরোপুরি বার্সেলোনার নাগালের বাইরে নিয়ে যায় ফ্রাঙ্কফুর্ট।

এরপর ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছিল বার্সেলোনা। ৮৪ মিনিটে বুসকেতসের গোল বাতিল হয়ে যায় অফ সাইডের কারণে। সেই বুসকেতসই যোগ করা সময়ে ব্যবধান কমান। খেলার একেবারে অন্তিম মুহূর্তে পেনাল্টি থেকে মেম্ফিস ডিপাই গোল করলেও দেরিটা একটু বেশিই হয়ে গিয়েছিল বার্সেলোনার জন্য। অবশেষে ৩-২ গোলের পরাজয় নিয়ে ইউরোপা লিগের চলতি আসর থেকে বিদায় নিতে হলো বার্সেলোনাকে।

বার্সেলোনা ডিফেন্ডার রোনাল্ড আরাউহোর কাছে পুরো ব্যাপারটিই লজ্জার। তার মতে, ভুলের মাশুল দিয়েছে বার্সেলোনা, ‘এ ম্যাচটা হারা বিরাট লজ্জার ব্যাপার। আমরা কিন্তু খুব খারাপ খেলিনি। কিন্তু ম্যাচে তিনটা ভুলের শাস্তি আমরা পেয়েছিল তিনটা বাজে গোল খেয়ে।’

বার্সেলোনা মাঠ ক্যাম্প ন্যুয়ে ফ্রাঙ্কফুর্টের ৩০০০০ হাজারেরও বেশি সমর্থক।

তবে এ ম্যাচে অ্যাওয়ে দলের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫০০০ টিকেট। কিন্তু মাঠে উপস্থিত ছিল ৩০ হাজারেরও বেশি সমর্থক। প্রায় পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে ছিল সাদা জার্সিতে সয়লাব। কোনো সন্দেহ নেই যে বার্সার সমর্থকরা তাদের টিকেট বিক্রি করে দিয়েছেন প্রতিপক্ষের কাছে। যার প্রভাব স্পষ্টতই পড়েছে ম্যাচে। ম্যাচ শেষে সে কথা স্বীকারও করে নিয়েছেন বার্সেলোনার কোচ জাভি হার্নান্দেজ।

বিষয়টি লজ্জাজনক জানিয়ে তদন্ত করবেন বলে জানিয়েছেন বার্সা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা। তিনি বলেছেন, আমরা খুবই উদ্বিগ্ন যে আজ একটি বড় লজ্জার ঘটনা ঘটেছে, যা ঘটতে পারে না। যা ঘটেছে এরজন্য আমাদের হাতে রয়েছে। আমাদের এটা ঠিক করা প্রয়োজন এবং আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব তবে যা ঘটেছে তা লজ্জাজনক।

চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রায় সব শিরোপা লড়াই থেকেই ছিটকে গেছে। একমাত্র ইউরোপা লিগই ছিল শেষ আশা। কারণ লা লিগার আট রাউন্ড বাকি থাকলেও পরিষ্কার ১২ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে আছে রিয়াল মাদ্রিদ। অতিরিক্ত নাটকীয় কিছু না হলে সেখানে কোনো আশাই নেই তাদের।

বলা হয়ে থাকে ম্যাচে দ্বাদশ খেলোয়াড়ের ভূমিকা পালন করে থাকেন সমর্থকরা। বার্সার ক্ষেত্রে যেন ঠিক তাই করেছেন ফ্রাঙ্কফুর্টের ভক্তরা। অথচ এটা হওয়ার কথা ছিল তাদের জন্য। ম্যাচ শেষে বার্সা কোচ বলেছেন, 'আমি এখানে ৭০ থেকে ৮০ হাজার কিউল আশা করেছিলাম কিন্তু সেখানে তা ছিল না।'

ফ্রাঙ্কফুর্টের সমর্থকদের দেখে রীতিমতো বিস্মিত বার্সেলোনার ডিফেন্ডার রোনালদ আরাহো, 'আমি স্টেডিয়ামে এতো জার্মান সমর্থক দেখে অবাক হয়েছি। ক্লাবের অবশ্যই বিষয়টি দেখা উচিৎ।'