ওয়ানডে সিরিজ

এক ম্যাচ হাতে রেখেই বাংলাদেশের সিরিজ জয়

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:৫৩

ব্যাট হাতে সুর বেঁধে দিলেন লিটন দাস আর মুশফিকুর রহিম। অনবদ্য এক সেঞ্চুরির স্বাদ নিলেন লিটন দাস। মুশফিক অল্পের জন্য এ স্বাদ গ্রহণ করতে পারলেন না, করেছেন ৮৬। তাদের কাঁধে চড়ে রানের পাহাড়ে চাপা পড়ল আফগান। উইকেট পাওয়া সাত টাইগার বোলারদের সামনে পাত্তাই পেল না সফরকারিরা। অবশেষে ৮৮ রানের বড় ব্যবধানে আফগানিস্তানকে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ।

শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৮৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এতে সিরিজের ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে তামিমের দল।

এদিন টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাগতিক অধিনায়ক তামিম ইকবাল। আগে ব্যাট করতে নেমে আফগানদের ৩০৭ রানের লক্ষ দেয় বাংলাদেশ।

রিয়াজ হাসানকে রানআউট করেন আফিফ

বড় লক্ষে ব্যাট করতে নামা আফগানদের শুরুতেই রানআউটের ফাঁদে ফেলে মোস্তাফিজরা। দ্বিতীয় ওভারে মোস্তাফিজের প্রথম বলে ওপেনার রিয়াজ হাসানকে সরাসরি থ্রোতে রানআউট করেন আফিফ হোসেন। তখন আফগানদের দলী রান ৯।

আরেক ওপেনার রহমাত শাহকে সঙ্গ দিতে নামেন হাসমতউল্লাহ শাহিদি। দলীয় ১৬ রানের মাথায় শাহিদিকে ফেরান শরিফুল। চতুর্থ ওভারে শরিফুলের পঞ্চম বলে মুশফিকের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ৫ রান করে ফেরেন শাহিদি।

এরপর দলীয় ৩৪ রানের মাথায় আজমাতুল্লাহ ওমরজাইকে ফেরান সাকিব। ১০তম ওভারে সাকিবের প্রথম বলে স্ট্যাম্বিং হয়ে ফেরেন রহমাত শাহকে সঙ্গ দিতে নামা আজমাতুল্লাহ ওমরজাই (৯)। ১০ ওভার শেষে আফগানিস্তানের ৩ উইকে ৩৬ রান।

এরপর রহমত শাহকে সঙ্গ দিতে নামেন নাজিবুল্লাহ জার্দান। ১৩তম ওভারে অর্ধশতক পেরেল আফগানরা। সাকিবের করা প্রথম তিন বলে এক রান, পরের দুই বলে একটি সিঙ্গেল ও একটি ডাবল এবং শেষ বলে সিঙ্গেলে অর্ধশতক পার করে আফগানিস্তান।

পরে বলে আসেন মিরাজ। তবে আগের ম্যাচে কম খরজ করা মিরাজের শুরুটা তেমন ভালো হলো না। প্রথম ওভারে এসেই দিলেন দুটি চারের মাধ্যমে ৯ রান। চার দুটি মেরেছে নাজিবুল্লাহ জার্দান। দ্বিতীয় বলে কাট করে এবং চতুর্থ বলে ব্যাকওয়ার্ড পাঞ্চে চারদুটি মারেন নাজিবুল্লাহ।

মূলত নাজিবুল্লাহ জার্দানকে ঘায়েল করতেই মিরাজকে আনা হয়েছিল বলে। সেই পরিকল্পনা প্রায় সফল করেছিলেন মিরাজ। প্রথম ওভারে দুই চার খেলেও দ্বিতীয় ওভারে নাজিবুল্লাহকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেছিলেন তিনি। আম্পায়ারও তাদের আবেদনে সাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু নাজিবুল্লাহ রিভিউ নেন। রিপ্লেতে দেখা যায় বল প্যাডে লাগার আগে নাজিবুল্লাহর ব্যাটের কানায় লাগে। বেঁচে যান নাজিবুল্লাহ।

২০ ওভারে শতক পেরেল আফগানিস্তান।
২০তম ওভারে মিরাজের তৃতীয় বলে ১ রান নিয়ে ১০০ রান হয়ে গেল আফগানিস্তানের। ৩ উইকেট হারিয়ে আফগানদের ১০২ রান। এই সময় বাংলাদেশেরও ছিল ১০২ রান ২ উইকেট হারিয়ে।

রহমত শাহর অর্ধশতক
৬৯ বলে অর্ধশতক পেয়ে গেলন রহমত শাহ। প্রথম ম্যাচে একটু বেশি রক্ষণাত্মক খেলা রহমত আজ হাত খুলে খেলেছেন। মিরাজের বলে চার মেরে অর্ধশতক তুলে নিয়েছেন রহমত।

অর্ধশতক করা রহমত শাহকে বোল্ড করেন তাসকিন আহমেদ

এরপরই রহমত শাহর বিদায়
অর্ধশতক করার পরের ওভারেই বিদায় নিলেন রহমত। তাসকিনের বল লাইনে পড়ে হালকা সিম মুভমেন্ট করেছে। আর এতে রহমতের বেল উড়িয়ে দিয়েছে তাসকিনের বল। ফেরার আগে ৭১ বলে ৪ চারে ৫২ রান করেন রহমত শাহ। তখন দীলয় রান ৪ উইকেটে ১২৩।

নাজিবুল্লাহকে সঙ্গ দিতে নামে মোহাম্মন নবী। এদিকে ওভারের প্রথম বলে আবারও তাসকিনের উইকেট। ২৫তম ওভারের প্রথম বলে অর্ধশতক করা রহমতকে ফিরিয়ে ছিলেন তাসকিন। এবার ২৯তম ওভারের প্রথম বলে নাজিবুল্লাহকেও ফেরালেন তিনি। তাসকিনে বলে মুশফিকের গ্লাভসে ধরা পরেন নাজিবুল্লাহ। ফেরার আগে ৬১ বলে ৭ চারে ৫৪ করেন তিনি।

এবার সাকিবের আঘাত
নাজিবুল্লাহ ফেরার পরে মোহাম্মদ নবীকে সঙ্গ দিতে নামেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। কিন্তু ৩২তম ওভারে সাকিবের তৃতীয় বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ৭ রান করেন গুরবাজ।

এরপর নবীকে সঙ্গ দিতে নামেন রশিদ খান। দলের ১৫০ রান পার করেন তারা। ৩১ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান আফগানদের।

এরপর নবীকে ফেরালেন মিরাজ
৩৮ তম ওভারে মিরাজের তৃতীয় বলে লং অফে আফিফ হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নবী। ফিরে যাওয়ার আগে ৩৮ বলে ৩ চারে ৩২ রান করেন মোহাম্মদ নবী।

মোস্তাফিজের বলে ছক্কা, চার বোল্ড!
৪১তম ওভারের প্রথম বলটা প্যাডের ওপর কাটার মেরেছিলেন মোস্তাফিজ, ফ্লিকে সেটিকে সীমানার বাইরে ফেললেন রশিদ খান। পরের বলে আবার কাটার মোস্তাফিজের, তবে এবার অফ স্টাম্পের বাইরে। কাভার ড্রাইভে এবার চার মারলেন রশিদ। এবার সঠিক সবাবটা দিয়ে দিলেন কাটারমাস্টার। তৃতীয় বলে এবারও কাটার দিলেন ফুল লেংথে। এক পা পেছনে সরে ফ্লিক করতে গিয়ে ইয়র্ক বানালেন রশিদ। ব্যাটে বল আর লাগাতে পারেননি, অবশেষে স্টাম্পেই আঘাত হানে মোস্তাফিজের কাটার। ফেরার আগে ২৬ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ২৯ রান করেন রশিদ খান।

৪১তম ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ২০৬ রান আফগানদের। বাকি ৯ ওভারে জিততে লাগবে ১০১ রান। হাতে ২ উইকেট। কিন্তু ১২ রানের মাথায় বাকি দুই উইকেট হারায় আফগানিস্তান। উইকেট দুটি নেন মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ হোসেন। এতেই ২১৮ রানে থেমে যায় আফগানিস্তান। ৮৮ রানের জয় নিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন আহমেদ ও সাকিব আল হাসান ২টি করে এবং মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন ১টি করে উইকেন নেন।

টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছেন তামিম ইকবাল

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।

দলের হয়ে ওপেনিংয়ে নামেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। তবে ম্যাচে শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি বাংলাদেশ দলের। ৩৮ বলে ৩৮ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন তামিম-লিটন। যদিও সে জুটির অর্ধেকের বেশি রান যোগান হয়েছে অতিরিক্ত থেকে। এরপরই তামিমকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে আউট করে জুটি ভাঙেন ফজল হক। ফেরার আগে ২৪ বলে ২ চারে ১২ রান করে ফেরেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

এরপর লিটনের সঙ্গী হতে নামেন সাকিব আল হাসান। লিটনের সঙ্গে ৫২ বলে ৪৩ রানের একটি অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন সাকিব। তবে তামিমের মতো এ ম্যাচে সুবিধা করতে পারেননি বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডা। ১৬তম ওভারে রাশিদ খানের দ্বিতীয় বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাকিব। ফেরার আগে ৩৬ বলে ২ চারে ২০ রান করেন তিনি।

লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম

এরপরই লিটনকে সঙ্গ দিতে নামেন মুশফিকুর রহিম। নেমে যোগ্য সঙ্গই দিয়েছেন তিনি। দুজনে মিলে খেলেছেন ৩১ ওভার। করেছেন ২০২ রানের দুর্দান্ত জুটি। এরপর ইনিংসের ৪৭তম ওভারে ফরিদ আহমেদের টানা দুই বলে দুজনেই আউট হয়ে ফেরেন। আউট হওয়ার আগে রশিদ, মুজিব, নাবিদের মতো স্পিন ত্রয়ীকে রীতিমতো পাড়ার বোলার বানিয়েছেন লিটন-মুশফিক। তাদের ৮৩ রানে শুরু করা তৃতীয় উইকেট জুটি থামে ২৮৫ রানে। ২০২ রানের এই জুটি তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ।

লিটন দাস

এই সর্বোচ্চ জুটি ভাঙার আগে নান্দনিক সব শটে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন দাস। ইনিংসের ৪১তম ওভারে রাশিদকে ডিপ এক্সট্রা কাভার দিয়ে চার মেরে শতকের স্বাদ পান তিনি। পরে ৪৭তম ওভারে ফরিদ আহমেদের দ্বিতীয় বলে মুজিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ১২৬ বলে ১৬ চার ২ ছক্কায় ১৩৬ রান করেন লিটন দাস।

মুশফিকুর রহিম

তার পরের বলেই ফেরেন মুশফিক। ৪৭তম ওভারে ফরিদ আহমেদের তৃতীয় বলে ফারুকির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ৯৩ বলে ৯ চারে ৮৬ রান করেন মুশফিকুর রহিম। মাত্র ১৪ রানের জন্য সেঞ্চুরিটি করতে পারলেন না তিনি। যদিও সেঞ্চুরি মিসের দিনে সতীর্থ সাকিবকে টপকে গেছেন মুশফিক। একদিনের ক্রিকেটে ৬৬৩০ রান নিয়ে সর্বোচ্চ সংগ্রাহকের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন সাকিব। আজ এই ইনিংসটি খেলে ৬৬৭০ রান নিয়ে সাকিবকে টপকে গেছেন মুশফিক।

এরপর ক্রিজে থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন। শেষ পর্যন্ত দুজনেই অপরাজিত থাকেন। ৯ বলে ৬ রান করেন মাহমুদউল্লাহ ও ১২ বলে ১টি চারের সাহায্যে ১৩ রান করেন আফিফ। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।

আফগানদের হয়ে ফরিদ আহমেদ ২টি এবং ফজলহক ফারুকি ও রশিদ খান ১টি করে উইকেট নেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন লিটন দাস।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত