তামিমের সেঞ্চুরি

এক যুগ পর হোয়াইটওয়াশের স্বাদ পেল বাংলাদেশ

প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২১, ০০:৪৩

তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে স্বাগতিক জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম ম্যাচে লিটন দাস, দ্বিতীয় ম্যাচে সাকিব আল হাসান এবং তৃতীয় শেষ ম্যাচে তামিম ইকবাল, টপ অর্ডারের এই তিন ব্যাটারের কাছে ধবলধোলাই হয়েছে জিম্বাবুয়ে।

সর্বশেষ ২০০৯ সালের পর বিদেশের মাটিতে আবারো হোয়াইটওয়াশের স্বাদ পেল টাইগাররা। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করেছিল সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। একযুগ পর আজ বিদেশের মাটিতে হোয়াইটওয়াশের স্বাদ পেলো তামিম ইকবালের বাংলাদেশ।

আজ মঙ্গলবার হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা।

এদিন স্বাগতিকদের দেওয়া ২৯৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪৮ ওভারে ৫ উেইকেট হারিয়ে ৩০২ রান করে জয় তুলে নিয়েছে তামিম ইকবালের দল।

তবে ব্যাট হাতে শুরুটা ভালোই করেছিল ওপেনার তামিম-লিটন। করে ৮৮ রানের দারুন একটি জুটি। আর এতেই হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম ইকবাল। ৪৬ বলে হাফসেঞ্চুরিটি করেন তিনি। প্রথম ২৩ বলে করেন ১৪ রান, পরের ২৩ বলে করেন ৩৬ রান। এতে ৪টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন।

হাফসেঞ্চুরির পর তামিম ইকবালকে সংবর্ধনা জানান লিটন দাস

তবে বেশি দূর এগোতে পারেনি লিটন দাস। মাত্র ৩২ রান করে ফিরে যেতে হয়েছে তাকে। প্রথমবার বোলিং করতে আসা ওয়েসলি মাধভেরেকে অফস্টাম্পের বাইরে থেকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে টপ-এজড হয়ে ধরা পড়েন স্কয়ার লেগেই। যাওয়ার আগে ৩৭ বল খেলে ৩টি চারে ৩২ রান করেন ডানহাতি এই ওপেনার।

তামিমের সাথে জুটি বাঁধতে নামে সাকিব আল হাসান। বাঁধেন তামিমের সঙ্গে ৫৯ রানের জুটি। করেন ৪২ বলে ১ চার ১ ছক্কায় ৩০ রান। এতেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ওয়ানডে রান-সংগ্রাহকের তালিকায় দুইয়ে থাকা মুশফিকুর রহিমকে ছাড়িয়ে নিজেই দ্বিতীয় আসনে বসলেন সেরা এই অলরাউন্ডার। ৬৫৮১ রান নিয়ে রান-সংগ্রাহকের সেরা তালিকার দুইয়ে ছিলেন মুশফিক। অফস্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালাতে গিয়ে কট-বিহাইন্ডের ধরা পরেন সাকিব। জিম্বাবুইয়ানদের আবেদনে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে পারেননি সাকিব, চোখে মুখে হতাশা ছিল স্পষ্ট।

এরপর নামেন মোহাম্মদ মিঠুন। তাকে নিয়ে ক্যারিয়ারের ১৪তম সেঞ্চুরিটি তুলে নেন তামিম ইকবাল। ৮৭ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছান তিনি। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর তামিমের এটি প্রথম সেঞ্চুরি। তবে চোটের কারণে এই সফরের একমাত্র টেস্ট খেলেননি এই ওপেনার। সেই চোট নিয়েই আজ করলেন সেঞ্চুরি। গত বছর মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ওয়ানডেতে সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন তামিম।

সেঞ্চুরির পর তামিম ইকবাল

এরপরই দুই বলে নেই দুই উইকেট। পানি-পানের বিরতি পর ডোনাল্ড তিরিপানোর বলে থার্ডম্যানের দিকে খেলতে গিয়ে খোঁচা দিয়ে বসলেন তামিম। ব্যাটের নিচে বল লেগে ধরা পড়লেন উইকেটরক্ষকের হাতে। ৯৭ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ১১২ রান করে ফিরলেন তামিম ইকবাল। ঠিক পরের বলে কট-বিহাইন্ড মাহমুদউল্লাহও। তিরিপানোর বলটা এবার নীচু হয়েছিল। মাহমুদউল্লাহ ব্যাট চালিয়ে হয়েছেন ইনসাইড-এজডে। তিনিও ধরা পড়লেন উইকেটরক্ষকের হাতে। এক বলে শূন্যরানে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ।

তামিম-মাহমুদউল্লাহকে ফিরিয়ে ত্রিপানোর উল্লাস

এরপর নামলেন নুরুল হাসান। তিনি মিঠুনের সাথে জুটি বেঁধে ভরসা দিচ্ছিলেন। বাঁধেন ৬৪ রানের জুটি। এ ছাড়া আজ চারটি জুটিই পঞ্চাশ পেরিয়েছে। সর্বশেষটি নুরুল হাসান ও মোহাম্মদ মিঠুনের। তামিম ফিরলেও বাংলাদেশকে আশা জুগিয়ে যাচ্ছিলেন এ দুজন। জয় তখন দৃষ্টিসীমায়। শেষ ৪২ বলে প্রয়োজন ৩২ রান। আর ধৈর্য ধরতে পারলেন না মিঠুন। ওয়েসলি মাধভেরেকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে একেবারে সীমানায় টেন্ডাই চাতারা হাতে ধরা পরেন। ৫৭ বলে একটি চারের সাহায্যে ৩০ রান করে ফেরেন মিঠুন। ভাঙেন নুরুলের সঙ্গে তার ৬৪ রানের জুটি।

এরপর নামেন আফিফ হোসেন। আর উইকেট ফেলতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। নুরুল আর আফিফের ৩৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে জয় তুলে নিয়ে মাঠ ছাড়েন তারা। সোহান ৩৯ বলে ৬ চারে ৪৫ রান আর আফিফ হোসেন ১৭ বলে ৩ চার ও এক ছক্কায় ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন।

জিম্বাবুয়ের হয়ে ডোনাল্ড ত্রিপানো ও ওয়েসলি মাধেভেরি ২টি করে এবং লুক জঙ্গি একটি উইকেট নেন।

টসে জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

এর আগে টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.৩ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৯৮ রান সংগ্রহ কারে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে।

আজ ওপেনিংয়ে ছিলেন রেজিস চাকাভা ও তাদিওয়ানশে মারুমানি। সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাঁচ নম্বরে নেমেছিলেন চাকাভা। সে পজিশনে করেছিলেন হাফসেঞ্চুরি। জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ে একমাত্র উজ্জ্বল দিক তার পরের উন্নতি হলো। নামলেন তিন নম্বরে। সেখানে করলেন ২৬ রান। আজ তৃতীয় ও সিরিজের শেষ ম্যাচে চাকাভা এলেন ওপেনিংয়েই। ওপেনিংয়ে চাকাভা আর মারুমানি করেন ৩৮ রানের জুটি।

তখনই সাকিবের ব্রেকথ্রু সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন মারুমানি। করেন একটি ছক্কায় ৮ রান। এরপর নামে অধিনায়ক ব্রান্ডন টেলর। চাকাভার সঙ্গে এগোচ্ছিলেন তিনি। করেন ৪২ রানের জুটি। ব্যাক্তিগত ২৮ রান করে মাহমুদউল্লাহর বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন টেলর। এর মাঝেই একটি মাইলফলকে পৌঁছান তিনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ১৫০০ রান হয়ে গেল তার। কোনো প্রতিপক্ষের সঙ্গে টেলরের এর পরের সর্বোচ্চ রান ৭৭৬, পাকিস্তানের বিপক্ষে।

এদিকে ২০০ মাইফলকে পৌঁছালেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ২০০ ওয়ানডে খেলার কীর্তিটা করেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। পরে সে তালিকায় যুক্ত হয়েছেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। হারারেতে আজ ৫ম বাংলাদেশী হিসেবে ২০০তম ওয়ানডে খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ

মাইলফলকের দিনে একটা পুরোনো স্মৃতিও ফিরল মাহমুদউল্লাহর। তাসকিন আহমেদ-মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমানের পর দ্বিতীয় পরিবর্তিত বোলার হিসেবে এলেন তিনি। শেষ ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এতো আগে বোলিং করেছিলেন এই অলরাউন্ডার।

আজ বোলিংয়ে ফিরে উইকেট নিলেন মাহমুদউল্লাহ। মাহমুদউল্লাহর বল জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে মিড-অফে তামিম ইকবালের হাতে ধরা পড়েন টেলর। ৩৯ বলে ৩ চারে ২৮ রান করে ফেরেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির পর এই প্রথম এ সংস্করণে উইকেট পেলেন মাহমুদউল্লাহ।

এরপর নামেন ডিওন মায়ার্স। তাকে নয়ে দলিয় ১০০ রান তুলেন চাকাভা, ৪টি চারে করেন হাফসেঞ্চুরি। এটি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি, সিরিজেই দ্বিতীয়। এরপরেই আবারো উইকেট পেলেন মাহমুদউল্লাহ। তার বলে নীচু হওয়া ডেলিভারিতে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ডিওন মায়ার্স। ৩৮ বলে ৩৪ রান করে ফেরেন তিনি। ২০১৯ সালের পর আজই প্রথম ওয়ানডেতে দুটি উইকেট পেলেন।

পরে মোস্তাফিজের বলে ৩ রান করে ফেরেন ওয়েসলি মাধেভেরে। তারপর চাকাভার সঙ্গে জুটি বাঁধেন সিকান্দার রাজা। কিন্তু সেঞ্চুরি করা হলো না চাকাভার। তাসকিনের দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড হন তিনি। ৯১ বলে ৭ চার ১ ছক্কায় ৮৭ রান করেন রেগিস চাকাভা।

সেঞ্চুরি করতে পারলেন না চাকাভা

এরপর নামের রায়ান বার্ল। তাকে নিয়ে আক্রমণাত্মক খেলে সিকান্দার রাজা। করে ফেলেন ক্যারিয়ারের ১৭তম হাফসেঞ্চুরি। রায়ান বার্লের সঙ্গে ১১২ রানের জুটি গড়েন তিনি। পরে ৫৪ বলে ৭ চার ১ ছক্কায় ৫৭ রান করে মোস্তাফিজের বলে মোসাদ্দেকের হাতের ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সিকান্দার রাজা।

এরপর রায়ান বার্লও করেন হাফসেঞ্চুরি। ৪৩ বলে ৪ চার ও ৪ ছক্কায় ৫৯ রান করে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বার্ল। পরে লুক জঙ্গি ৪ রান করে অপরাজিত থাকলেও বাকি তিন জন ত্রিপানো শূন্য, চাতারা ১ ও মুজারাবানি শূন্য রানে আউট হন। ইনিংসের তিন বল বাকি থাকতে সব উইকেট হারিয়ে ২৯৮ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে।

বাংলাদেশের হয়ে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মোস্তাফিজুর রহমান ৩টি করে, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২টি এবং তাসকিন আহমেদ ও সাকিব আল হাসান ১টি করে উইকেট নেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম ইকবাল এবং সিরিজ সেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত