লিটনের একশ ও সাকিবের পাঁচে বাংলাদেশের জয়

প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২১, ২০:২৬

ওপেনিংয়ে ফিরেই সেঞ্চুরি করেছেন লিটন দাস। এদিকে বল হাতে ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তাদের নৈপুন্যে স্বাগতিক জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বিশাল জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।

শুক্রবার (১৬ জুলাই) হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকদের ১৫৫ রানে হারিয়েছে টাইগাররা।

এদিন টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। যদিও টসে হারার পর টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছিলেন, হাররে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে প্রথম ঘণ্টায় বোলারদের জন্য থাকে বাড়তি সুবিধা। তাই টস জিতলে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্তই নিতাম।

তামিম ইকবাল

তবে তার কথাই যেন খেটে গেলো। শুরুটাও হলো বাজেভাবে। রানের খাতা খুলতে না খুলতেই উইকেট হারায় টাইগাররা। তৃতীয় ওভারের মুজারাবানির প্রথম বলে শূন্য রানে আউট হন ওপেনার তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের রানের চাকা তখনো ঘোরেনি। ৭ বলে শূন্য রান করে রেগিস চাকাভাকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তামিম।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৯তম বারের মতো শূন্য রানে আউট হন তামিম। যা কি না মাশরাফি বিন মর্তুজাকে ছাড়িয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশিবার শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ড। শুধু তাই নয়, তিন ফরম্যাট মিলেও বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ডাকের মালিক এখন তামিম ইকবাল।

সাকিব আল হাসান

অধিনায়কের বিদায়ের পর তিন নম্বরে ব্যাটে নামেন সাকিব আল হাসান। নেমেই প্রথম বলে স্ট্রেইট ড্রাইভে চার মেরে দলীয় রানের খাতা খোলেন তিনি। তামিম-লিটন সুবিধা করতে না পারলেও, শুরু থেকেই উইকেটে ব্যস্ত সময় পার করতে থাকেন সাকিব। কিন্তু বেশিক্ষণ এটি চালিয়ে নিতে পারেননি তিনি। ইনিংসের নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে মুজুরাবানির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। সাকিব ফেরার আগে ২৫ বলে ৩ চারে ১৯ রান করেন।

সাকিবের পর মিঠুনের শুরুটাও ছিল আশা জাগানিয়া। কিন্তু বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন অফ ড্রাইভের পর জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলা শটে কট বিহাইন্ড হন তিনি। মিঠুন ১৯ বলে ৪ চারে ১৯ রান করেন। মিঠুনের মতোই ফিরে গেলেন মোসাদ্দেক, করেছিলেন মাত্র ৫ রান। তখন ৭৪ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

লিটন দাস ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত

এসময় নামেন দলের অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। লিটনের সঙ্গে গড়েন জুটি। দারুণ খেলে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি তুলে নেন লিটন। মাহমুদউল্লাহ তার প্রথম ১৮ রান তুলেন কোনো বাউন্ডারি ছাড়াই। ছক্কা মেরে পৌঁছান বিশের ঘরে। এরপর টানা পাঁচ ওভার আটের ওপর করে রান নিয়েছেন দুজনে। জুটিটি সেঞ্চুরির কাছেই পৌঁছে গিয়েছিল, করেছিল ৯৩ রানের জুটি। শেষ পর্যন্ত আর এগোতে পারেনি মাহমুদউল্লাহ। স্লো বাউন্সারে বিভ্রান্ত করে তাকে নেন লুক জঙ্গি। আউট হওয়ার আগে ৫২ বলে ১ ছক্কায় ৩৩ রান করেন এই অলরাউন্ডার।

মাহমুদউল্লাহর পর নামেন আফিফ হোসেন। তবে একের পর এক আসা যাওয়ার মধ্যে থাকলেও ঠান্ডা মাথায় দেখেশুনে খেলে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছায় লিটন। চাপের মধ্যে থেকেও নিজের সেঞ্চুরিটি করে ফেলেন এই ডানহাতি ওপেনার। এ নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চারটি সেঞ্চুরি করে ফেললেন তিনি। এর মধ্যে তিনটিই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

কিন্তু সেঞ্চুরি করার পর বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারলেন না লিটন। রিচার্ড এনগারাভার শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে টপ এজ হয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১১৪ বলে ৮টি চারে ১০২ রান করে ফেরেন ডানহাতি এই ওপেনার।

লিটন দাসের সেঞ্চুরি উদযাপন

লিটনের পর নামেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে লিটন চলে যাওয়ার পর ঝর তোলেন আফিফ। ৩৫ বলে ১ চার ২ ছক্কায় ৪৫ রান করে লুক জঙ্গির বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন আফিফ। এরপর ২৫ বলে ১ চার ১ ছক্কায় ২৬ লুক জঙ্গির বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর তাসকিন ১ রানের আউট হলে সাইফউদ্দিন ৮ এবং শরিফুল ইসলাম শূন্য রানে অপরাজিত থাকেন।

জিম্বাবুয়ের হয়ে লুক জঙ্গি ৩টি, মুজারাবানি ও নাগারাভা ২টি করে এবং চাতারা ১টি উইকেট নেন।

অলআউট জিম্বাবুয়ে

 

বাংদেশের দেওয়া ২৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২৮.৫ ওভারে ১২১ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। দলের হয়ে শুধু মাত্র রেগিস চাকাভা বড় স্কোর করেছেন। তিনি হাফসেঞ্চুরি করে সাকিবের বলে ক্যাচ আউট হন। আউট হওয়ার আগে ৫১ বলে ৪ চার ২ ছক্কায় ৫৪ রান করেন রেগিস চাকাভা।

এর আগে অধিনায়ক ব্রেন্ডান ম্যাককালাম ৩১ বলে ৩ চারে ২৪ রান করে সাকিবের বলে ক্যাচ আউট হন। তারপরে ২৪ বলে ৩ চারে ১৮ রান করে শরিফুলের বলে ক্যাচ আউট হন ডিওন মায়ার। এছাড়া আর কেউ ভালো স্কোর করতে পারেনি। অবশেষে ২৮.৫ ওভারে ১২১ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে।

সাকিব আল হাসান

বাংলাদেশের হয়ে ৯.৫ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে ৫টি উইকেট তুলে নেন সাকিব আল হাসান। এটা তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় ৫ উইকেট। আর বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেটের তালিকায় মাশরাফি বিন মর্তুজাকে টপকে গেলেন সাকিব। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সাকিবের এটি ২৭০তম উইকেট। মাশরাফির বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে উইকেটের সংখ্যা ২৬৯। ক্যারিয়ারে মাশরাফিরও ওয়ানডে উইকেট ২৭০টি হলেও এশিয়া একাদশের হয়ে একটি পেয়েছিলেন তিনি।

এছাড়া তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন লিটন দাস।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত