ইউরো ২০২০

টাইব্রেকারে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে ফাইনালের মঞ্চে ইতালি

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২১, ০৬:০৩

ক্রীড়া ডেস্ক

রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে নির্ধারিত সময়ের শেষে অমীমাংসিত থেকে যায়। এরপর অতিরিক্ত সময়েও অমীমাংসিত ম্যাচটি গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেও ছড়ায় রোমাঞ্চ। টাইব্রেকারের প্রথম শটে গোল করতে দুই দলই ব্যার্থ হয়। তবে ইতালির ৫ম তম অর্থাৎ শেষ শটটি যখন মিডফিল্ডার জর্জিনহো নিতে আসেন তখন ৩-২ গোলে এগিয়ে ইতালি। ঠাণ্ডা মাথায় জর্জিনহো যেভাবে শটটি নিলেন, ওই মুহূর্তে এর চেয়ে ভালোভাবে স্নায়ু ধরে রাখা যেত না। আর সেই পেনাল্টি শটেই হলো ইতালির বাজিমাত। ৪-২ গোলে স্পেনকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেছে ইতালি।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম সেমিফাইনালে প্রথমে ১-১ গোলে ড্র করার পর টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে স্পেনকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে রবের্তো মানচিনির দল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইতালির একমাত্র গোলটি করেন ফেদেরিকো চেসিয়া এবং স্পেনের একমাত্র গোলটি করেন আলভারো মোরাতা।

এ নিয়ে ২০১২ সালের পর আবারও ইউরোর ফাইনাল মঞ্চের টিকিট কাটল ইতালি। ইতালিয়ানরা এ পর্যন্ত যেকোন মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছে দশবার। এর মধ্যে চারবার হয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং একবার হয়েছে ইউরো চ্যাম্পিয়ন।

এদিন ম্যাচ শুরু থেকেই আক্রমণে ছিল স্পেন। তবে ভালো সুবিধা করতে পারেনি তারা। এদিকে শুরু থেকেই ইতালিকে ছন্নছাড়া দেখা গিয়েছিল। প্রথমার্ধের অধিকাংশ সময়েই খেলার নিয়ন্ত্রণ ছিল স্পেনের হাতে। ১৩ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যাওয়ার সুযোগও পেয়েছিল স্পেন। কিন্তু স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড পেদ্রির পাস অয়ারজাবাল রিসিভ করতে ব্যর্থ হলে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়। তবে প্রথমার্ধ গোলশূন্যতে শেষ হলেও দ্বিতীয়র্ধে ফিরে প্রথম গোল করে ইতালিয়ানরাই।

যদিও ইতালিয়ান লেফটব্যাক স্পিনাৎসোলার দলে ছিলেন না। তার যায়গায় চেলসির এমারসন সেভাবে অভাব পূরণ করতে পারেননি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে অনেকটা স্রোতের বিপরীতেই এগিয়ে যায় ইতালি। দানি অলমো ও জর্দি আলবার একটা আক্রমণ কোনোভাবে আটকে প্রতি আক্রমণ শুরু করে ইতালি। সেই প্রতি আক্রমণ থেকেই দুর্দান্ত এক ডান পায়ের বাঁকানো শটে ৬০ মিনিটে দলকে এগিয়ে দেন জুভেন্টাসের উইঙ্গার ফেদেরিকো কিয়েসা। এর আগে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে এই ওয়েম্বলিতেই গোল করেছিলেন কিয়েসা।

এরপর বদলি নামা মোরাতার বদৌলতেই বেঁচে থাকে স্পেন। ফিনিশিং ব্যর্থতার কারণে সমালোচনায় জর্জরিত হওয়া মোরাতা আজ ফিনিশিংটা দিয়েছিলেন অসামান্য। ম্যাচের ৮০ মিনিটে ড্রিবল করে এগিয়ে গিয়ে বাঁ পাশে থাকা অলমোর দিকে বল বাড়ালে অলমো আবার দারুণভাবে পাস দেন মোরাতাকে। সেখান থেকে বিচক্ষণতার সাথে ইতালিয়ান গোলরক্ষক দোনারুমাকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান মোরাতা। এই গোলে ফার্নান্দো তোরেসকে ছাড়িয়ে ইউরোতে স্পেনের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে গেলেন আলভারো মোরাত।

এর আগে দুই দলই গোলের সুযোগ নষ্ট করেছে। তবে ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আর কোনো গোল না হলে এই ১-১ গোলের ড্র নিয়ে অমীমাংসিত থেকে যায় ম্যাচটি। এরপর গড়ায় অতিরিক্ত সময়ের ৩০ মিনিটে। এই অতিরিক্ত সময়ের মধ্যেও অমীমাংসিত থেকলে ম্যাচটি গড়ায় টাইব্রেকারে। রোমঞ্চকীয় টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে স্পেনকে হারিয়ে নয় বছর পর ফাইনালের টিকিট কাটল ইতালি।

এর আগে এই দুই দল ইউরোতে মুখোমুখি হয়েছে ছয়বার, এর মধ্যে পাঁচবারই অমীমাংসিত থাকার কারণে টাইব্রেকারের টাইব্রেকারের শরণাপন্ন হতে হয়েছে।

আজ প্রথম টাইব্রেকারের প্রথম শট লোকাতেল্লি নিতে এসে মিস করার পরে স্পেনের হয়ে দানি অলমোও ব্যর্থ হয়। এরপর একে একে বেলোত্তি, মরেনো, বনুচ্চি, থিয়াগো বল জালে পাঠাতে সফল হয়েছেন। বার্নার্দেস্কিও এসে ইতালির চতুর্থ শট জালে জড়ান। কিন্তু মোরাতার শট ঠেকিয়ে দিলে পিছিয়ে পড়ে স্পেন। দুদলের চারটি শট শেষে- ইতালি ৩-২ স্পেন। বেঁচে থাকতে হলে তাই ইতালির পরের শটটা রুখতেই হতো স্পেনের। কিন্তু জর্জিনহোর শটটা রুখতে পারলেন না স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সিমোন। অবশেষে ৪-২ গোলের জয় নিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেল ইতালি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত