বাঁশের ব্যাট হতে যাচ্ছে 'ক্রিকেটারদের স্বপ্ন'

প্রকাশ | ১০ মে ২০২১, ২১:১০

বিবিসি বাংলা

চামড়ার বলের সাথে উইলো কাঠের সংযোগে ঠক্ ঠক্ আওয়াজ - হ্যাঁ, অদূর ভবিষ্যতে বদলে যেতে পারে এই শব্দ। দর্শকরা শুনতে পাবেন বলের সাথে বাঁশের লড়াই।

ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তৈরি করেছেন বাঁশের ক্রিকেট ব্যাট।

ল্যামিনেটেড বাঁশের এই ব্যাট বর্তমানে চালু উইলো কাঠের তৈরি ব্যাট থেকে বেশি মজবুত, দামে সস্তা এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর না বলে বলছেন গবেষকরা।

এর 'সুইট স্পট' অর্থাৎ ব্যাটের মধ্যভাগে বলের সাথে সংযোগের জায়গাও অনেক বেশি বলে দাবি করছেন গবেষকরা।

"এই বাঁশের ব্যাট ব্যাটসম্যানদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবে, বলছেন কেমব্রিজের সেন্টার ফর ন্যাচারাল মেটেরিয়াল ইনোভেশন-এর ড. ডার্শিল শাহ। "বাঁশের ব্যাটের সুইট স্পট দিয়ে ইয়র্কার থেকে চার মারা কোন ব্যাপারই না। সব ধরনের স্ট্রোকেই এটা কাজে দেবে।"

ড. শাহ এবং বেন টিঙ্কলার ডেভিস মিলে এই বাঁশের এই প্রোটোটাইপ ব্যাট তৈরি করেছেন। জার্নাল অফ স্পোর্টস এঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি সাময়িকীতে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।

এই গবেষণায় দেখা গেছে, উইলো কাঠের তুলনায় বাঁশের ব্যাট ২২% বেশি মজবুত। ফলে ব্যাটে বল লাগার পর এর গতি যায় বেড়ে।

উইলোর তৈরি ব্যাটের তুলনায় বাঁশের ব্যাট ৪০% বেশি ভারী। তবে গবেষকরা বলছেন ব্লেডের ওজন তারা কমিয়ে আনতে পারবেন।

উইলো ব্যাটের সাথে বলের সংযোগের পর ব্যাটসম্যান যে কম্পন অনুভব করেন, বাঁশের ব্যাটের ক্ষেত্রে কোন হেরফের ঘটবে না বলে তারা বলছেন।

চীনের একটি মোসো বাঁশের ঝাড়

উইলো কাঠের সঙ্কট
ভাল মানের উইলো কাঠ ক্রমশই দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে, গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, উইলো গাছ বড় হতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগে।

সেই তুলনায় 'মেসো' জাতের বাঁশ পাকতে সময় নেয় পাঁচ থেকে ছয় বছর।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকায় এই বাঁশ প্রচুর জন্মে।

"ক্রিকেট এমনিতেই আপনাকে প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যায়। কারণ আপনি কয়েক ঘন্টা ধরে থাকেন সবুজ মাঠে," বলছেন সহ-গবেষক বেন টিঙ্কলার ডেভিস, "কিন্তু টেকসই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এই খেলা আরও বেশি পরিবেশ-বান্ধব হয়ে উঠতে পারে।"

"আমরা এক সুবর্ণ সুযোগ খুঁজে পেয়েছি যেটা ব্যবহার করে স্বল্প আয়ের দেশগুলো এখন সস্তায় ব্যাট তৈরি করতে পারবে।"

ভারতের কাশ্মীরে তৈরি হচ্ছে উইলো কাঠের ব্যাট

ক্রিকেট আইনে পরিবর্তন ঘটবে?
ঐতিহ্যগতভাবে ক্রিকেট খেলার নিয়মকানুন তৈরি করে আসছে লন্ডনের মার্লিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)। ব্যাটের গঠন প্রকৃতিও নির্ধারণ করেছে এই ক্লাব।

সেই আইন অনুযায়ী, ক্রিকেট ব্যাটের ব্লেড তৈরি হতে হবে শুধুমাত্র কাঠ দিয়ে।

বাঁশের ব্যাট দিয়ে প্র্যাকটিস করছেন বেন টিঙ্কলার-ডেভিস

ফলে ভবিষ্যতে বাঁশের ব্যাট নিয়ে পিচে নামতে হলে এমসিসির সেই আইনে পরিবর্তন ঘটাতে হবে। কারণ বাঁশ কাঠ নয়, এটা বিশেষ জাতের ঘাস।

ড. ডার্শিল শাহ বলছেন, এনিয়ে এমসিসিকেই ভাবতে হবে। তবে তিনি মনে করেন, বাঁশের ব্যবহার নিয়ে খুব একটা বিতর্ক হবে না। কারণ ব্যাটের হাতলে বেত ব্যবহার করা হয়, যেটি বাঁশেরই একটি জাত।

ক্রিকেটে বাঁশের ব্যাট ব্যবহার সম্পর্কে এমসিসির তরফে এখনও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।