উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ

সেই বায়ার্নকে হারিয়েই সেমিফাইনালে নেইমার-এমবাপ্পেরা

প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২১, ১৩:৪৯

ক্রীড়া ডেস্ক

পিএসজি মানেই সেরা ফুটবল তারকাদের মেলা। ইউরোপের সেরা কাপ উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা ঘরে তোলার জন্য তারকা মেলার মধ্যে রেকর্ড দাম দিয়ে নেইমারকে কিনে নিয়েছিল পিএসজি। সাথে যোগ হল ফরাসি ফরোয়ার্ড কিলিয়ান এমবাপ্পে। গত মৌসুমে এই সেরা তারকাদের নিয়েই চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছিল প্যারিসের ক্লাবটি। কিন্তু সেবার জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ ছিল জ্বলজ্বল। তারকায় ঠাসা পিএসজিকে হারিয়ে ইউরোপের সেরা হয়েছিল জার্মান ক্লাবটি। চ্যাম্পিয়নস লিগের স্বপ্ন আর সত্যি করতে পারেনি পিএসজির সেরা তারকারা। রানারআপ হয়েই ফিরেছে প্যারিসের দলটি। কিন্তু চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে আবারো সেমিফাইনালে উঠেছে পিএসজি, তাও আবার সেই বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে।

মঙ্গলবার (১৩ এপিল) দ্বিবাগত রাতে পার্ক দেস প্রিন্সেস স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে হ্যান্সি ফ্লিকের দল বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরেছে মাওরিসিও পচেত্তিনোর পিএসজি। হেরেও অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে প্যারিসের দলটি। এর আগে প্রথম লেগে বায়ার্নের মাঠে তাদেরকেই ৩-২ গোলে হারিয়েছিল নেইমার-এমবাপ্পেরা। দুই লেগ মিলিয়ে ৩-৩ গোলের সমতা হলেও প্রতিপক্ষের মাঠে বেশি গোল করার সুবাদে সেমিফাইনালে চলে গেল পিএসজি। তবে বায়ার্নের জিততে হলে পিএসজিকে ২ গোলে হারাতে হতো।

এদিন বলের দখলে কিংবা শট নেওয়ায় বায়ার্নই দাপট দেখিয়েছে ম্যাচে, কিন্তু পরিষ্কার সুযোগ বেশি পেয়েছে পিএসজি। নেইমার বেশ কয়েকবার গোলবঞ্চিত হয়েছেন, কখনো নয়্যারের কারণে, তো কখনো বায়ার্নের গোলপোস্টের কারণে। পিএসজির আরেক তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে তো গোলের জন্য এতই মরিয়া ছিলেন যে, মোট ৬ বার অফসাইড হয়েছেন ম্যাচে - যা এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে এক ম্যাচে কোনো খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ।

প্রথমার্ধেই চারবার নেইমার গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন, এর মধ্যে তিনটি তো গোল হতে হতে বেঁচেছে। বায়ার্ন গোলকিপার নয়্যার দুবার ফেরালেন নেইমারকে, এর মধ্যে একবার পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে রুখেছেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের শট। এরপর তিন মিনিটে দুবার নেইমারের গোলের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পোস্ট। ম্যাচের ৩৭ মিনিটে নেইমারের দারুণ শট বারের কোণে লেগে ফিরেছে। ৩৯ মিনিটে এমবাপ্পের পাস পেয়ে নেইমার যখন নয়্যারকে এড়িয়ে শট নিয়েছিলেন, সেটি ফিরেছে সাইডপোস্টে লেগে।

তার পরের মিনিটেই পিছিয়ে পরে পিএসজি। ম্যাচের ৪০ মিনিটে ডেভিড আলাবার শট ফিরিয়ে দিয়েছিলেন পিএসজি গোলকিপার কেইলর নাভাস, কিন্তু লাফিয়ে ওঠা ফিরতি বল হেড করে জালে জড়ান এই মৌসুমেই পিএসজি ছেড়ে বায়ার্নে যাওয়া স্ট্রাইকার এরিক ম্যাক্সিম চুপো-মোতিং। প্রথম লেগেও বায়ার্নের দুই গোলের প্রথম গোলটি করেছিলেন এরিক ম্যাক্সিম চুপো-মোতিং। পিএসজির বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে ২ গোল করলেন ক্যামেরুনের এই ফরোয়ার্ড। গত মৌসুম পর্যন্ত পিএসজির জার্সিতে চ্যাম্পিয়নস লিগে ১০ ম্যাচ খেলে গোল করেছিলেন একটি!

এরপর ম্যাচের শেষদিকে গিয়ে পিএসজির পক্ষে একবার নেইমার বল জালের প্রবেশ করান। কিন্তু সেটি বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের কারণে। এরপরও সুযোগ আসে নেইমারের সামনে। কিন্তু তিনি তা কাজে লাগাতে পারেননি। তবে ফিনিশিং ব্যর্থতা বাদ দিলে সারা ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেছেন নেইমার। যে কারণে তার হাতেই ওঠে ম্যাচসেরার পুরস্কার।

ম্যাচ শেষে বায়ার্ন গোলকিপার মানুয়েল নয়্যার গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা আজ রাতের পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়িনি। এখানে ১-০ গোলের জয়টা প্রাপ্যই ছিল। কিন্তু মিউনিখের ফলটাই (প্রথম লেগে ৩-২) ছিল খারাপ। আজকের ম্যাচের আগেই তাই আমরা পিছিয়ে ছিলাম।’

চোটের কারণে ক্লাবের গোলমেশিন রবার্ট লেভানডফস্কিকে হারানোই কি বায়ার্নের এভাবে বাদ পড়ার কারণ? নয়্যার তা স্বীকার করছেন, আবার করছেনও না, ‘প্রথম লেগে এত এত সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে না পারাটা খুব বিরক্তিকর ছিল। লেভানডফস্কিকে কি আমরা মিস করেছি? আজ যারা খেলতে পারেনি, তাদের সবাইকেই আমরা মিস করেছি। পিএসজির মতো মানসম্পন্ন একটা দলের বিপক্ষে এটা (এত খেলোয়াড়কে না পাওয়া) কঠিন।’ লেভানডফস্কি ছাড়াও উইঙ্গার সার্জ নাব্রিকেও দুই লেগে পায়নি বায়ার্ন।

এদিকে ফরাসি চ্যানেল আরএমসি স্পোর্তকে নেইমার বলেছেন, ‘হারলেও আমি অনেক খুশি। আমরা গ্রেট একটা দলের বিপক্ষে খেলেছি, ইউরোপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ওরা। কিন্তু আমরা আবার সেমিফাইনালে উঠেছি।’

নেইমার আরো বলেন, ‘আমরা এখন সত্যিকারের একটা দল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে আমরা পরের রাউন্ডে উঠে গেছি। এখন আমরা আরও বড় কিছুর দিকে তাকাতেই পারি।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত