‘ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস’ দেখাল বাংলাদেশ

প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২১, ১৬:১১

সাহস ডেস্ক

কথায় আছে ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস! তাই হলো। উইকেট তুলে নেওয়া যখন সমস্যা তখন ক্যাচ মিসের মহড়া। তাসকিন নিজেকে দুর্ভাগা মনে করতেই পারেন। তার বলে মুশফিক সহজ ক্যাচ ফেলার পর মিঠুন কাভারে ফেলেছেন একটা হাফ চান্স। এর পরপরই মেহেদীর ক্যাচ মিস। মেহেদী ডিপ মিড উইকেটে তার বলেই আরও একটি ক্যাচ নিতে পারতেন, যদি ঠিক সময়মতো তিনি বলটা দেখতেন। আর এই ক্যাচ মিসের মহড়ায় ম্যাচটাই হারল বাংলাদেশ।

টাইগারদের দেয়া ২৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দারুন এক সেঞ্চুরি করেন টম ল্যাথাম। তবে তার সেঞ্চুরিটি হতো না, যদি শেখ মেহেদী তার সহজ একটা ক্যাচ মিস না করতেন। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ল্যাথামের এই সেঞ্চুরিতে ভর করেই বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড।

মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) ক্রাইস্টচার্চের হাগলি ওভালে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে কিউইরা। এতে টানা জয়ে ২-০তে এগিয়ে স্বাগিতকরা। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি বাংলাদেশকে জিজতে হবে, তা না হলে তো হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফিরবে টাইগরার।

২৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৫৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়েছিল নিউজিল্যান্ড। মোসাফিজের কাটারে মার্টিন গাপটিল এবং তরুন শেখ মেহেদী হাসানের অফ ব্রেকে বোকা হয়ে ফেরেন হেনরি নিকোলসের পর উইলি ইয়ং। এতে ২৭১ রানটা নিউজিল্যান্ডে কাছে অনেক দূরের মনে হয়েছিল। তখন আকাশে উড়ছিল বাংলাদেশ।

কিন্তু ডেভন কনওয়ে আর টম ল্যাথাম দুইজন দুই প্রান্ত থেকে ম্যাচটি ধরে ফেলেন। গড়েন ১১৩ রানের জুটি দারুন ঝুটি। এতে ব্যাচটি স্বাগতিকদের নিয়ন্ত্রণ চলে আসে, তখনই বড় আঘাত। তামিমের ডাইরেক্ট থ্রোতে রান আউট হলেন কনওয়ে। উইকেটে জমে যাওয়া কনওয়ের ফেরাটা নিউজিল্যান্ডের জন্য বড় আঘাতই। ৯৩ বলে ৭ চারে ৭২ রান করেন কনওয়ে।

তবে আর একটি উইকেট তুলে নিলে আরো বিপদে পড়বে কিউইরা। তখনই নতুন উইকেটে আসা জিমি নিশামের ক্যাচ ফেলে সে আশা দূরে ঠেলে দেন মুশফিকুর রহিম।

তবে জিমি নিশামও বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। কাটার মাস্টার মোস্তাফিজের বলে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৩০ রান করে ফেরেন নিশাম। ততক্ষণে ম্যাচটি পুরোপুরি কিউইদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

এদিকে অধিনায়ক টম ল্যাথামও সেঞ্চুরির কাছাকাছি চলে গেছেন। পরে নামা ড্রাই মিচেলকে নিয়ে নিজের সেঞ্চুরি তুলে নেন এবং দলকে সিরিজ নিশ্চিত করেন অধিনায়ক টম ল্যাথাম। ১০৮ বলে ১০ চারে ১১০ রানের সেঞ্চুরিটি করেনে ল্যাথাম। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার পঞ্চমতম সেঞ্চুরি।

টাইগারদের হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান ও শেখ মেহেদী হাসান ২টি করে উইকেট নেন।

এর আগে টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানায় নিউজিল্যান্ড। আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা।

নিজেদের ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শুরু করেছিলেন অধিনায়ক তামিম। কিন্তু সেটি ধরে রাখতে পারেননি লিটন। ম্যাট হেনরির করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে এক্সট্রা বাউন্স করা ডেলিভারিতে পুল খেলতে চেষ্টা করেন লিটন। কিন্তু ব্যাটে-বলে ঠিকভাবে সংযোগ হয়নি। যে কারণে ধরা পড়ে যান শর্ট স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো উইল ইয়ংয়ের হাতে। রানের খাতাই খুলতে পারেননি এ ড্যাশিং ওপেনার।

এরপর নামের সৌম্য সরকার। তামিমের সাথে জুটি গড়েন সৌম্য। এই জুটির দেখেশুনে খেলার বদৌলতে প্রথম ১০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ২৬ রান করতে পারে বাংলাদেশ। তবে সৌম্যও বেশিক্ষণ থাকতে পারেন নি। ৪৬ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ৩২ রান করে স্যান্টনারের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য সরকার।

দলীয় ৮৫ রানের মাথায় সৌম্যের বিদায়ের পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে দারুণ খেলেছিলেন মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবাল। তাদের জুটির রান পৌঁছে গিয়েছিল পঞ্চাশের দোরগোড়ায়। কিন্তু তখনই ক্রিকেট মাঠে ফুটবলের স্কিল নিয়ে হাজির হন নিউজিল্যান্ডের অলরাউন্ডার জিমি নিশাম।

ইনিংসের ৩১তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি আলতো করে খেলেন মুশফিক। বল বেশিদূর যায়নি, ছিল স্ট্যাম্পের পাশেই। রানের সুযোগ ভেবে দৌড় শুরু করেন তামিম। কিন্তু পপিং ক্রিজে পৌঁছানোর আগেই বলের ওপর ছোট্ট কিকে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন নিশাম। রিপ্লে'তে দেখা যায় তামিমের ব্যাট তখন পপিং ক্রিজের বেশ বাইরে। এতে রান আউট হয়ে ফেরেন ওপেনার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ফেরার আগে ১০৮ বলে ১১ চারে ৭৭ রান করেন তামিম। তবে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে নিজের পঞ্চাশতম হাফসেঞ্চুরি মাইলফলক পূরণ করেই ফেরেন বাঁহাতি এই ওপেনার।

২১২ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তামিমের এটি ৬৩তম পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস। এর মধ্যে ১৩টি রয়েছে সেঞ্চুরি। আর বাকি ৫০টি পঞ্চাশ রানের ইনিংস। সেঞ্চুরি কিংবা ফিফটির পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের আর কেউই তামিমের ওপরে নেই। এই ইনিংস খেলার পথে দুইটি রেকর্ডে সাকিব আল হাসানকে পেছনে ফেলেছেন তামিম। এতদিন ধরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫টি পঞ্চাশ রানের ইনিংস ছিল তামিম ও সাকিবের। আজ সেটি ছাড়িয়ে ষষ্ঠ পঞ্চাশ রানের ইনিংস খেললেন তামিম। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের মালিকও হয়ে গেলেন তামিম। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২ সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিতে সাকিব করেছেন ৬৩৯ রান। এখন সেটি ছাড়িয়ে ৬৫৫ রান হয়ে গেছে তামিমের।

এরপর ব্যাটিংয়ে আসেন মিঠুন, সঙ্গী হিসেবে তখন ধুকতে থাকা মুশফিক। শুরু থেকেই হাত খুলে মারতে থাকেন মিঠুন। তামিম যেখানে শেষ করেন, ঠিক সেখান থেকেই যেন শুরু করেন ৩০ বছর বয়সী এ ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।

এরমধ্যে উইকেট হারান মুশফিক। ৫৯ বলে ৩ চারে ৩৪ রান করে স্যান্টনারের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। তারপরে আসেন মাহমুদউল্লাহ। তিনিও বেশিক্ষণ সময় দিতে পারেননি। মাত্র ১৬ নার করে ফেরেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। এরপরে মেহেদী হাসান ৭ রান করে ফিরলে সাইফুদ্দিন ৭ রান করে নটআউট থাকেন।

এদিকে মিডল অডার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন অজপারিত থাকেন ৭৩ রান করে। যেখানে তিনি খেলেছেন ৫৭ বল। ছক্কা মেরেছেন দুটি ও চার মেরেছেন ৬টি। অবশেষে ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রান করে বাংলাদেশ।

স্বাগতিকদের হয়ে স্যান্টনার ২টি এবং বোল্ট, ম্যাট হ্যানরি ও জেমিসন ১টি করে উইকেট নেন।

ম্যাচসেরা হয়েছেন কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: তামিম ৮৮, সৌম্য ৩২, মুশফিক ৩৪, মিঠুন ৭৩*।
নিউজিল্যান্ড: কনওয়ে ৭২, ল্যাথাম ১১০*, নিশাম ৩০।

আগামী ২৬ মার্চ (শুক্রবার) সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারবেকি বাংলাদেশ?

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত