সাকিবের অভিযোগে কঠোর বিসিবি

প্রকাশ | ২২ মার্চ ২০২১, ১৩:২৭ | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২১, ১৪:৫২

অনলাইন ডেস্ক

পরশু রাতে এক ফেসবুক লাইভে সাকিবের করা বিসিবির সমালোচনার পর করণীয় ঠিক করতে কাল সন্ধ্যায় নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সভায় বসেছিলেন বিসিবি বোর্ডের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা।

তবে এমন মন্তব্য নিয়ে কোনো অনুতাপ নেই সাকিবের। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার আরেকটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘কথায় কথায় প্রসঙ্গ এসেছে, আমি প্ল্যান করে কিছু বলি না। যা মনে আসে, তা-ই বলি। যা বিশ্বাস করি, তা-ই বলি, যা ঠিক মনে করি, বলে দিয়েছি।’

রবিবার (২১ মার্চ) রাতে বাংলাদেশের এক ক্রীড়া সাংবাদিককে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সাকিব। উৎপলের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে সেই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে।

এর প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে সেটা নিয়ে সাকিব ভাবে না, ‘কী প্রতিক্রিয়া হবে, এ নিয়ে ভাবি না। আমি চিন্তা করলে বড় চিন্তা করি। আচ্ছা আপনিই বলেন, আমি যা বলেছি, তাতে কি আমার নিজের কোনো লাভ আছে? নিজের লাভ তো গাধাও বোঝে। আমি ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থে কথাগুলো বলেছি। কারো যখন বলার সাহস নাই, আমিই না হয় বললাম। আমার ব্যক্তিগত লাভের জন্য তো বলি নাই। কেউ যদি এটা ভালোভাবে নিতে চায়, তা ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে। আমরা যদি ভালো করতে চাই, বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতি চাই, তাহলে তো আমি আমার কথায় কোনো সমস্যা দেখি না।’

নাইমুর রহমান দুর্জয় বোর্ডের যে স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান, সেই হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের কার্যকরিতা ও প্লেয়ার তৈরি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাকিব। ঠিক এ বিষয় নিয়েই দুর্জয় বলেছেন, ‘খালি চোখে মনে হচ্ছে সাকিব বুঝি আকরাম ভাই আর আমার বিপক্ষে কথা বলছে। তবে আমার তো মনে হয় তার বোর্ডের বিপক্ষেই কোনো ইস্যু আছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি সত্যিই সাকিবের এইচপি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় বিস্মিত! আমি ভেবেই পাই না, কেন ও কী কারণে সাকিব এইচপি নিয়ে প্রশ্ন তুলল? তার দাবি, এইচপি নাকি প্লেয়ারাই সরবরাহ করতে পারেনি। আমার তার কাছে জানতে চাওয়া, সাকিব নিজেই তো এইচপির ক্রিকেটারদের সাথে খেলল।’

দুর্জয় জানিয়ে দেন ২০১৭-১৮তে সাদমান ইসলাম, এনামুল হক বিজয়, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, ইয়াসির আলি রাব্বি, মেহেদি হাসান মিরাজসহ ১৪ জন, ২০১৮১৯ এ সাঈফ হাসান, আফিফ হোসেন, নাঈম শেখ, সাঈফউদ্দিনসহ ১১ জন, ২০১৯-২০ এ আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, হাসান মাহমুদসহ ৮ জন এবং ২০২০-২১ এ শরিফুল ইসলামসহ ৪ জন জাতীয় দলে জায়গা করে নিয়েছে।

এ তথ্যগুলো সামনে এনে দুর্জয়ের ভাষ্য, ‘এতগুলো ক্রিকেটার যেখানে এইচপি খেলে এসেছে, সেখানে এইচপির কার্যকরিতা নিয়ে কথা বলেছে। আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এইচপির অনেক প্লেয়ার এখনই জাতীয় দলে আছে। এই তো সেদিন এইচপি আয়ারল্যান্ডের যুবাদের সাথে খুব ভাল খেলল।’

তিনি বলেন, ‘এইচপির খেলোয়াড়দের ভাল ট্রেনিং চলছে। পুরো দল একটা সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার ভেতরে আছে। মোট কথা, এইচপি ভাল অবস্থায় আছে। সব কিছু ঠিক চলছে, এমন সময়ে হঠাৎ বলা নেই, কওয়া নেই এমন তীর্যক কথাবার্তা কেন? আমার কাছে খুব অবাক লাগল! আমার মনে হয়, তার বোর্ডের বিপক্ষে কোন ইস্যু আছে।’

দুর্জয় আরো বলেন, ‘আসলে শ্রীলঙ্কা না যাওয়ার কারণে তার ইমেজ ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তা পুনরুদ্ধারের জন্যই এমন বক্তব্য বলে আমার মনে হয়।’

জানা গেছে, সাকিব গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিসিবিকে দেওয়া আইপিএলের অনাপত্তিপত্রের আবেদনে ছুটির জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ করেননি। কিন্তু পরদিন বিসিবি তাকে আইপিএল খেলার যে অনাপত্তিপত্র দেয়, তাতে ছুটির সময় উল্লেখ করা হয় ১ এপ্রিল থেকে ১৮ মে পর্যন্ত। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট দুটি ওই সময়েই।

এক ঘণ্টার চেয়ে বেশি সময় ধরে চলা লাইভে সাকিব বলেছেন, তিনি টেস্ট খেলতে চান না, কথাটা ঠিক নয়। এ বছরের অক্টোবর–নভেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠেয় টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নিজের প্রস্তুতির জন্যই তিনি চেয়েছিলেন আগামী এপ্রিল–মে মাসের আইপিএলে খেলতে।

সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই ওই সময়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে খেলা হবে না সাকিবের। টেস্ট দুটি না খেলার ব্যাপারেও ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি, ‘ম্যাচগুলো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। আমাদের আছেই এই দুটি ম্যাচ। আমরা আছি পয়েন্ট তালিকার তলানিতে। এমন নয় যে এই দুটি ম্যাচ জিতলে আমরা ফাইনাল খেলব।’

তবে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে ধন্যবাদ দিয়ে সাকিব বলেছেন, ‘উনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন (তাকে ছুটি দিয়ে)। খেলোয়াড়দের এই স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।’

উল্লেখ্য, পরশু রাতে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সেফসবুক লাইভে সাক্ষাৎকারে বোর্ডের অনিয়ম নিয়ে কথ বলেছেন। এরপর থেকেই সাকিবকে নিয়ে আলোচনায় বসেছে বিসিবি।