ইংল্যান্ডকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে ভারত

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২১, ১৯:৩৫

সাহস ডেস্ক

ওয়াশিংটন সুন্দর ও আক্সার প্যাটেলের জুটিতে বড় লিড পেল ভারত। স্পিনবান্ধব উইকেট বিবেচনায় যা ইংল্যান্ডের সামনে হয়ে উঠল পাহাড়সম। বরাবরের মতো চলল জো রুটদের বিবর্ণ ব্যাটিং প্রদর্শনী, চলল আক্সার ও রবীচন্দ্রন অশ্বিনের ছড়ি ঘোরানো। তাদের নৈপুণ্যে ইনিংস ও ২৫ রানে জিতল বিরাট কোহলির দল। তারা পেল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরের ফাইনালের টিকিট।

শনিবার (৬ ফ্রেবুয়ারি) আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে দুদলের চার ম্যাচ সিরিজের শেষ টেস্টের নিষ্পত্তি হলো তিন দিনে। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের ২০৫ রানের জবাবে শনিবার মধ্যাহ্ন বিরতির আগে ভারত অলআউট হয় ৩৬৫ রানে। ১৬০ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নামা সফরকারীরা তৃতীয় সেশনে গুটিয়ে যায় মাত্র ১৩৫ রানে। ফলে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলেন কোহলিরা।

ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে আক্সার ও অশ্বিন মিলে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে তারা ভাগাভাগি করে নেন ১০ উইকেট। ৪৮ রান খরচায় বাঁহাতি স্পিনার আক্সারের শিকার ৫ উইকেট। টেস্ট অভিষেকের পর ৬ ইনিংসে হাত ঘুরিয়ে চারবারই অন্তত ৫ উইকেট দখল করলেন তিনি। অভিজ্ঞ অফ স্পিনার অশ্বিন ৪৭ রান দিয়ে পান বাকি ৫ উইকেট। সিরিজে তার উইকেটসংখ্যা মোট ৩২টি, আক্সারের ২৭টি।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০১৯-২১ চক্রের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকে ফাইনালে উঠেছে ভারত। তারা পেয়েছে মোট পয়েন্টের শতকরা ৭২.২ শতাংশ। তাদের জয়ে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ার (৬৯.২ শতাংশ)। তারা চক্র শেষ করেছে তিনে থেকে। কেবল ভারত হারলেই কপাল খুলত অজিদের। আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করেছে নিউজিল্যান্ড (৭০ শতাংশ)।

আগের দিনের ৭ উইকেটে ২৯৪ রান নিয়ে খেলতে নেমেছিল ভারত। এদিন তারা যোগ করে আরও ৭১ রান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেঞ্চুরিবঞ্চিত হন সুন্দর। অন্য প্রান্তে ৫ বলের মধ্যে ৩ উইকেট পড়ে গেলে থমকে যেতে হয় তাকে। তিনি অপরাজিত থাকেন ১৭৪ বলে ৯৬ রানে। তার ইনিংসে ছিল ১০ চার ও ১ ছক্কা।

সুন্দর-আক্সারের অষ্টম উইকেট জুটিতে আসে ১০৬ রান। সেসময় তার সেঞ্চুরি প্রায় নিশ্চিত বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ৪২ রান করে আক্সার রানআউট হলে নামে বিপদ। পরের ওভারের প্রথম বলে ইশান্ত শর্মাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন বেন স্টোকস। শেষ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ সিরাজ দুই বল ঠেকিয়ে হয়ে যান বোল্ড।

স্টোকস ৮৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের পক্ষে সবচেয়ে সফল বোলার। অভিজ্ঞ পেসার জেমস অ্যান্ডারসন ৩ উইকেট নেন ৪৪ রানে। বাঁহাতি স্পিনার জ্যাক লিচ ২ উইকেট দখল করেন ৮৯ রানে।

দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটাও ভয়াবহ বাজে হয় ইংল্যান্ডের। ৩০ রানের মধ্যে তারা হারায় ৪ উইকেট। ওই ধাক্কা সামলে আর ঘুরে দাঁড়ানো হয়নি তাদের। সাতে নেমে ড্যান লরেন্সই যা একটু লড়াই করেন। ৯৫ বলে ৫০ রান আসে তার ব্যাট থেকে। তাকে বোল্ড করে ভারতকে বিশাল জয় পাইয়ে দেন অশ্বিন। এছাড়া, ইংলিশ অধিনায়ক রুটের ব্যাট থেকে আসে ৭২ বলে ৩০ রান।

পঞ্চম ওভারে পরপর দুই বলে উইকেট পান অশ্বিন। ফাঁদ পেতে ওপেনার জ্যাক ক্রলিকে স্লিপে আজিঙ্কা রাহানের ক্যাচ বানান তিনি। জনি বেয়ারস্টো ধরা পড়েন লেগ স্লিপে, রোহিত শর্মার হাতে। এরপর জোড়া শিকার ধরেন আক্সারও। তিনি নেন ডম সিবলি ও স্টোকসের উইকেট।

পঞ্চম উইকেটে প্রতিরোধের চেষ্টা ছিল রুট ও অলি পোপের। কিন্তু তারা তেমন এগোতে পারেননি। ৩৫ রানের জুটি গড়ে ৩ বলের মধ্যে সাজঘরের পথ ধরেন দুজনই। ইংল্যান্ডের ইনিংস সর্বোচ্চ জুটি আসে সপ্তম উইকেটে। বেন ফোকসকে নিয়ে ৪৪ রান যোগ করেন লরেন্স। তার হাফসেঞ্চুরি কেবল ভারতের জয়ের অপেক্ষাকেই দীর্ঘায়িত করে।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল মাঠে গড়াবে হবে আগামী ১৮ জুন। শিরোপা নির্ধারণী লড়াইয়ের ভেন্যু ক্রিকেটের তীর্থস্থান খ্যাত লর্ডস। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ২০৫

ভারত প্রথম ইনিংস: (আগের দিন ২৯৪/৭) ১১৪.৪ ওভারে ৩৬৫ (সুন্দর ৯৬*, আক্সার ৪৩, ইশান্ত ০, সিরাজ ০; অ্যান্ডারসন ৩/৪৪, স্টোকস ৪/৮৯, লিচ ২/৮৯, বেস ০/৭১, রুট ০/৫৬)

ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: ৫৪.৫ ওভারে ১৩৫ (ক্রলি ৫, সিবলি ৩, বেয়ারস্টো ০, রুট ৩০, স্টোকস ২, পোপ ১৫, লরেন্স ৫০, ফোকস ১৩, বেস ২, লিচ ২, অ্যান্ডারসন ১*; সিরাজ ০/১২, আক্সার ৫/৪৮, অশ্বিন ৫/৪৭, সুন্দর ০/১৬)

ফল: ভারত ইনিংস ও ২৫ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: রিশভ পান্ত।

সিরিজ: চার ম্যাচের সিরিজে ভারত ৩-১ ব্যবধানে জয়ী।

সূত্র: দি ডেইলি স্টার বাংলা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত