৯ বছর পর হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেল বাংলাদেশ

প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৮:৩০

সাহস ডেস্ক

শেষ উইকেটে আবু জায়েদ আসার পরই দায়িত্বটা নিজের কাঁধে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। শেষ উইকেট হওয়ায় দিনে ওভারের সংখ্যা বাড়ানো হলো। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ১ উইকেট, বাংলাদেশের ৪৩ রান—এই সমীকরণে এসে জ্বলে উঠলেন মিরাজ। কর্নওয়ালকে এগিয়ে এসে দুটি ছক্কা মারলেন, তিনটি চারও মারলেন। এর মধ্যে পরপর দুই ওভারে একটি করে চার ও ছক্কা। বাংলাদেশের রান ২০০ পেরোল। খেলায় তখন টান টান উত্তেজনা। বাংলাদেশের প্রয়োজন ধীরে ধীরে নেমে আসছে—৩৯, ২৯, ১৮....। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের তো তখন শুধু একটা ভালো বলেরই অপেক্ষা।

সেটি এল ওয়ারিকানের হাতে। ইনিংসের ৬২তম ওভারের তৃতীয় বলে। স্লিপে ক্যাচ উঠল মিরাজের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে। ৫৬ বলে ৩১ রান করে মিরাজ আউট। এতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেও হেরে দীর্ঘ ৯ বছর পর হোয়াইওয়াশের লজ্জায় পড়ল স্বাগতিক বাংলাদেশ। এর আগে চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট জিততে জিততে হেরেছিল স্বাগতিকরা।

রবিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৩১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২১৩ রানেই অলআউট হলো বাংলাদেশ। এতে ১৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।

আগের দিনের করা ৪১/৩ রান নিয়ে রবিবার চতুর্থ দিনে মিরপুরে ব্যাটিংয়ে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলীয় ৫০ রানে আউট হন আগের দিনের নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে খেলতে নামা জোমাল ওয়ারিক্যান। এরপর ২৩ রানের ব্যবধানে ফেরেন কাইল মেয়ার্স ও জার্মেইন ব্লাকউড। সপ্তম উইকেটে জসুয়া ডি সিলভাকে সঙ্গে নিয়ে ৩১ রানের জুটি গড়েন এনক্রুমা বোনার। ৬ উইকেটে ১০৪ রান করা উইন্ডিজ এরপর মাত্র ১৩ রানের ব্যবধানে হারায় ৪ উইকেট।

প্রথম ইনিংসে ৪০৯ রান করা উইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট ১১৭ রানে। বাংলাদেশ দলের হয়ে তিন স্পিনার তাইজুল ইসলাম ৪, নাইম হাসান ৩, মেহেদী হাসান মিরাজ নেন এক উইকেট। দুই উইকেট শিকার করেন পেসার আবু জায়েদ রাহী।

২৩১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। এই দুই উদ্বোধনী জুটিতে ১৪ ইনিংসে প্রথমবার ৫০ পেরিয়েছে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি। সৌম্যর (১৩ রান) বিদায়ে ৫৯ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙে, কিন্তু অন্য প্রান্তে আগ্রাসী তামিম যেন চতুর্থ দিনেই বাংলাদেশকে জিতিয়ে দেওয়ার পণ করে নেমেছিলেন! তার ‘ওয়ানডে গতির’ ব্যাটিং দেখে তেমন মনে হওয়াই স্বাভাবিক! টেস্ট ক্যারিয়ারের ২২তম ফিফটিতে তামিম পৌঁছেছেন ৪৪ বলে, ৯ চারে।

তামিমকে দিয়ে শুরু। ১৩তম ওভারে সৌম্য আউট হওয়ার পর যেখানে নতুন ব্যাটসম্যানকে পথ দেখাবেন, তা নয়, ২৫ বল পর তামিম ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে এলেন। সিরিজজুড়ে ব্যর্থতায় দলে নিজের অন্তর্ভুক্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়া নাজমুল হোসেন স্কোরারদের বেশিক্ষণ বিরক্ত করলেন না। চা-বিরতির আগে শেষ বল বনে যাওয়া রাকিম কর্নওয়ালের হঠাৎ বাউন্স পাওয়া ডেলিভারিতে যখন শর্ট লেগে ক্যাচ দিলেন নাজমুল, তার নামের পাশে রান ১১।

এরপর মুমিনুল-মুশফিকের জুটি দিয়ে শুরু। চা-বিরতির পর দুজনে দলের রান ১০০ পার করে দিলেন। বাংলাদেশ তখন মুশফিক-মুমিনুলের ৫৩ বলে ২৩ রানের জুটিতে ভরসা মানছে। কিন্তু ওয়ারিক্যানের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে মুশফিক ফিরলেন, ঠিক ১৮ বল পর ফিরলেন মিঠুনও। দলের রান তখন ৫ উইকেটে ১১৮।

এরপর লিটন আর মুমিনুলে ভরসা করার পালা। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনে ক্রিজে কিছুক্ষণ সময় কাটালেন, কিছু রান এল। কিন্তু ৪৭ বলে ৩২ রানের জুটিটা ভাঙল মুমিনুল আউট হওয়ায়। ১৯ বল পর ফিরলেন লিটনও। তখনো ৭৮ রান বাকি বাংলাদেশের।

অষ্টম উইকেটে তাইজুলের সঙ্গে মিরাজের ২৯ বলে ১০ রানের জুটি, তাতে ২৫ বলে ৮ রান তাইজুলের। নবম উইকেটে নাঈম হাসানের সঙ্গে জুটি হলো ৩৪ বলে ২৫ রানের, সেখানে ২০ বলে ১৪ রান নাঈমের! এর মধ্যে আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাফেট এসে টানা দুটি বাই চার দিয়েছেন। যদিও সে দুটি ছিল ফাঁদে ফেলার চেষ্টা। যেটিতে পরে সফলও হয়েছেন ব্রাফেট। ১৮৮ রানে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে নাঈম আউট হওয়ার সময়ও মিরাজের রান ৩২ বলে ৫!

বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখানো মিরাজ শেষ ব্যাটসম্যান আবু জায়েদ রাহীকে নিয়ে ২৫ রান তুলতে সক্ষম। দলীয় ২১৩ রানে স্লিপে ক্যাচ তুলে দিয়ে মিরাজ আউট হলে তীরে গিয়ে তরী ডুবে। মাত্র ১৭ রানে হেরে যায় টাইগাররা।

ক্যারিবীয়দের হয়ে রাহকিম কর্নওয়েল ৪টি এবং জমেল ওয়ারিকান ও ক্রিগ ব্রাথওয়েট ৩টি করে উইকেট নেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন রাহকিম কর্নওয়েল এবং সিরিজ সেরা হয়েছেন এনক্রুমাহ বোনার।

এর আগে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের তিনটিতেই জিতে ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশে লজ্জা দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দুই টেস্ট সিরিজের দুটিতেই হরে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা পেয়েছে নিজেরাই।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত