বার্সার ক্যারিয়ারে মেসির প্রথম লাল কার্ড, চ্যাম্পিয়ন বিলবাও

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ১৩:৫৯

বার্সেলোনায় মেসির ১৭ বছরের ক্যারিয়ার। ম্যাচ খেলেছেন ৭৫৩টি। এই ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেন বার্সেলোনার আর্জেন্টাইন মহাতারকা লিওনেল মেসি। স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে ইনাকি উইলিয়ামসের গোলে কাতালান ক্লাব বার্সেলোনাকে হারিয়ে শিরোপা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অ্যাতলেটিকো বিলবাও।

রবিবার (১৭ জানুয়ারি) বার্সার মাঠ স্তাদিও ডি লা কারতুজা স্টেডিয়ামে রোনাল্ড কোম্যানের শিষ্যদের ৩-২ গোলে হারিয়েছে বিলবাও।

যদিও এদিন ফরাসি ফরোয়ার্ড আঁতোয়া গ্রিজম্যানের গোলে প্রথমে এগিয়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা। তার দুই মিনিট পরে সমতায় ফেরে বিলবাও। পরে আবারও গ্রিজম্যানের গোলে এগিয়ে যায় কাতালানরা। কিন্তু ম্যাচে শেষ মিনিটে ও অতিরিক্ত সময়ে দুই গোল করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বিলবাও।

এদিন ম্যাচের একদম শেষের দিকে লাল কার্ড দেখেন বার্সার মহাতারকা মেসি। পিছিয়ে থাকা বার্সেলোনার অধিনায়ককে প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড় পথ আটকে দেয়ার চেষ্টা করলে এক ধাক্কায় তাকে ফেলে দেন মেসি। প্রথমে রেফারির চোখ এড়িয়ে যায় ঘটনাটি। পরে ভিএআর দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে সরাসরি লাল কার্ড দেখান মেসিকে। এই লাল কার্ডের সিদ্ধান্তের পর মেসি বা তার সতীর্থদের তেমন প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। টিভিতে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে তারা রেফারির এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। এই ঘটনার কারণে ঘরোয়া ফুটবলে চার ম্যাচ পর্যন্ত নিষিদ্ধ হতে পারেন লিওনেল মেসি।

তার আগে বার্সার ফিকে হতে বসে নতুন বছরটা শিরোপা দিয়ে রাঙানোর স্বপ্ন। নির্ধারিত সময় শেষে অতিরিক্ত তৃতীয় মিনিটে তৃতীয় গোল হজম করে বসে রোনাল্ড কোম্যানের দল। সেই গোল আর শোধ করতে পারেনি তারা। রেফারির শেষ বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে তৃতীয়বারের মতো স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে বিলবাও। শেষবার তারা এই শিরোপা জিতেছে ২০১৫ সালে আর বার্সা জিতেছে ২০১৮ সালে।

তবে এই ম্যাচ জিতলে ১৪তম বারের মতো স্প্যানিশ সুপার কাপ জেতা হতো বার্সোলোনার। আর এটা হতো বার্সার নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যানের প্রথম শিরোপা। আর হতে পারতো এটা লিওনেল মেসির বার্সার হয়ে সম্ভাব্য বিদায়ী মৌসুমের শিরোপা।

বিলবাওয়ের বিপক্ষে পূর্ণ শক্তির দলই নামিয়েছিলেন কোম্যান। ম্যাচের শুরু থেকেও আধিপত্য বিস্তার করেও খেলছিল বার্সা। সেই সুবাদে প্রতমে এগিয়ে কাতালানরা। ম্যাচের ৪০ মিনিটে দলকে এগিয়ে দেন ফরাসি ফরোয়ার্ড গ্রিজম্যান। কিন্তু কাতালান জায়ান্টরা সেই ব্যবধান বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি। তার দুই মিনিট পরেই সমতায় ফেরে বিলবাও। ম্যাচের ৪২ মিনিটে বিলবাওয়ের হয়ে গোলটি করেন ওস্কার ডি মার্কোস। এই সমতা নিয়েই বিরতিতে যায় দুই দল।

বিরতি থেকে ফিরে এসে আবারো গ্রিজম্যানের গোলে ফের এগিয়ে যায় বার্সা। ম্যাচের ৭৭ মিনিটে জর্ডি আলবার পাস থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়ে নিজের জোড়া গোল পূর্ণ করেন ফরাসি ফরোয়ার্ড।

কিন্তু এই ব্যবধানও ধরে রাখতে পারেনি বার্সা বাহিনী। ম্যাচের একদম শেষ মিনিটে অর্থাৎ ৯০ মিনিটে বিলবাওয়ের স্প্যানিশ ফুটবলার আজিয়ের ভিয়ালিব্রে ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে গোল করে দলকে সমতায় ফিরিয়ে খেলা টিকিয়ে রাখেন। এতে ২-২ গোলের সমতায় নিয়ে অতিরিক্ত সময়ের খেলা শুরু হলে ম্যাচের ৯৩ মিনিটেই ইনাকি উইলিয়ামসের গোলে আবারো এগিয়ে যায় অ্যাতলেটিক বিলবাও।

পরে ম্যাচের বাকি সময়ে এই গোলটি আর শোধ দিতে পারেনি বার্সা। উল্টো ম্যাচের ১২১+১ মিনিটের মাথায় মেজাজ হারিয়ে বিলবাও’র আসিয়েরকে অহেতুক আঘাত করে বসেন মেসি। তাতে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।

লিওনেল মেসির বার্সেলোনা ক্যারিয়ারে এটা প্রথম লাল কার্ড হলেও আর্জেন্টিনার হয়ে এর আগে দুইবার লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তিনি। মজার তথ্য হচ্ছে, লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথমবার মাঠে নেমে এক মিনিটের মধ্যে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছিলেন।

২০০৫ সালে হাঙ্গেরির বিপক্ষে এই ঘটনা ঘটে। এরপর ২০১৯ সালে কোপা আমেরিকায় চিলির বিপক্ষে একটি ম্যাচে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় লাল কার্ড দেখেন লিওনেল মেসি।

শেষ পযর্ন্ত আর সমতায় ফিরে ম্যাচটি টাইব্রেকারে নিয়ে যেতে পারেনি বার্সা। শিরোপা উৎসবে মেতে ওঠে সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে হারানো অ্যাতলেটিকো বিলবাও। এই শিরোপাটি নিয়ে বিলবাওয়ের তৃতীয় শিরোপা।