টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে কলার চারা উদ্ভাবন রাবি শিক্ষকের

প্রকাশ | ২৩ জুন ২০২২, ১৮:২৪

মারুফ হোসেন মিশন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

কলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বারমাসি ফল। প্রাচীন কাল থেকে উৎপাদিত হয়ে আসছে জনপ্রিয় এই ফলটি। তবে নানা রোগব্যাধি ও বিভিন্ন সমস্যা থাকায় বৈশ্বিক রপ্তানি শর্ত পূরণ করতে পারছে না বাংলাদেশে উৎপাদিত কলা। তবে আশার কথা ‘হার্ডেনিং’ পদ্ধতির মাধ্যমে সেসব সমস্যা নিরসন করে উন্নতমানের টিস্যু কালচার কলার চারা উদ্ভাবনে অভাবনীয় সফলতা দেখিয়েছেন বিশিষ্ট গবেষক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আনোয়ার হোসেন।

গুণী এই গবেষক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লান্ট মলিকুলার বায়োটেকনোলজি ল্যাবে এ উন্নত মানের টিস্যু কালচার কলার চারা উদ্ভাবন করেন। বর্তমানে এই পদ্ধতিতে নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে ওই চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। যার ফলে এটি রোগমুক্ত এবং চাষে ক্ষতিকারক রাসায়নিক সার, বিষ প্রয়োগের মাত্রাও কমে যায় বলে জানান এই গবেষক।

গবেষক জানান, আমাদের দেশের  কৃষকরা সাধারণত সনাতন পদ্ধতিতে কলা চাষ করেন। এতে অত্যন্ত লাভজনক ফসল হওয়া সত্ত্বেও এটি বিদেশে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। কারণ কলা ফেটে যাওয়া, গায়ে কালো দাগ পড়া, ইউনিফরমিটি (সব কলার আকার আকৃতি একই হওয়া) না থাকা, কাঁদির সব কলা এক বয়সের না হওয়া এবং কলায় মাত্রারিক্ত কীটনাশকের কারণে রপ্তানির শর্তগুলো পূরণ করা যাচ্ছে না। কিন্তু টিস্যু কালচার কলার চারা লাগালে ৬-৭ মাসের মধ্যেই কলার মোচা বের হয়। যেখানে সাধারণ চারার ক্ষেত্রে ১০-১১ মাস সময় লাগে। এ ছাড়া কাঁদির সব কলার আকার আকৃতি একই হবে এবং ফলনও বেশি হবে। এ ছাড়া এ কলার বাজার মূল্য বেশি হওয়ায় কৃষকের ৩০-৪০ শতাংশ বেশি লাভ হবে।

‘হার্ডেনিং’ পদ্ধতি সম্পর্কে অধ্যাপক আনোয়ার জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আধুনিক এ পদ্ধতিতে জীবাণুমুক্ত টিস্যু কালচার কলার চারা ব্যবহার করা হয়। সুস্থ সবল কলা গাছের স্যুট বা ফুলের টিস্যু থেকে গবেষণাগারে কাচের পাত্রে উদ্ভিদের বিভিন্ন রকমের হরমোন ও প্রয়োজনীয় খাবার ব্যবহার করে মাইক্রোস্যুট তৈরি করা হয়। পরে এই মাইক্রোস্যুটগুলোতে শিকড় তৈরি হলে ল্যাব থেকে বের করে পলি হাউজে দুই মাস ধরে বিশেষ পদ্ধতিতে বাইরের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো হয়- একে বলে হার্ডেনিং। তবে সঠিক পদ্ধতিতে হার্ডেনিং না করলে কলার চারা মাঠে লাগানোর পর মারা যেতে পারে।

তিনি আরও জানান, কয়েক বছর গবেষণা করে মেহের সাগর, রঙিলা সাগর, জি৯, অগ্নিশ্বর বা লাল কলার টিস্যু চারা উদ্ভাবন করেছেন তিনি। লাল কলার পুষ্টিগুণ সাধারণ কলার চেয়ে অনেক বেশি। বিশেষ করে এতে বিটা-ক্যারোটিন নামক রঞ্জক পদার্থ থাকে যা রাতকানা রোগ ও ক্যানসার প্রতিরোধক। ফলে এর বাজারমূল্য অনেক বেশি।

‘হার্ডেনিং’ পদ্ধতির চারা রোপণের বিষয়ে ড. আনোয়ার জানান, দেশের সব অঞ্চলেই এই চারা রোপণ করা যাবে। বাড়ির আনাচে-কানাচে বা বাণিজ্যিকভাবে এই কলার চাষ করে যে কেউ লাভবান হতে পারে। সাধারণত চৈত্র-বৈশাখ বা আশ্বিন-কার্তিকে কলার চারা রোপণ করা হয়। তবে আধুনিক পদ্ধতির এই চারা সারা বছরই পাওয়া যাবে এবং চাষ করা যাবে।

রপ্তানি যোগ্য চারা সংগ্রহের কথা জানিয়ে এ গবেষক বলেন, বর্তমানে সরকার ফল রপ্তানির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। তাই কৃষকদের রপ্তানিযোগ্য এ কলা উৎপাদন করা দরকার। যারা কলা চাষ করতে চান তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উন্নত মানের এ টিস্যু কালচার চারা সংগ্রহ করতে পারবেন বলে জানান এ গবেষক।

উৎপাদনের দিক থেকে খাদ্যশস্যের মধ্যে বিশ্বে কলার অবস্থান চতুর্থ। দক্ষিণ আমেরিকা, ভারত ও ফিলিপাইনসহ শীতপ্রধান দেশগুলোতে কলা রপ্তানি করছে। তবে এক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক রপ্তানি শর্ত পূরণ করতে না পারায় এখনো সেভাবে রপ্তানিমুখী কলা উৎপাদনে যেতে পারেনি আমাদের দেশ। 

সাহস২৪.কম/আরএস/এসকে.