কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণায় নোবেল পেলেন ৩ পদার্থবিজ্ঞানী

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২০, ১৮:৩৬

সাহস ডেস্ক

মহাবিশ্বের অন্যতম বিস্ময় কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণার জন্য এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে তিন বিজ্ঞানীকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ী হিসেবে তিনজনের নাম ঘোষণা করেছে।

তাঁরা হলেন, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রজার পেনরোজ, জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর এক্সট্রাটেরিস্ট্রিয়াল ফিজিকস ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেইনহার্ড গেনজেল এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দ্রে গেজ।

এক বিজ্ঞপ্তিতে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি বলেছে, এই তিন বিজ্ঞানী তাদের গবেষণার মাধ্যমে কৃষ্ণ গহবর সম্পর্কে নতুন বোঝাপড়া সামনে এনেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘কৃষ্ণগহ্বর আপেক্ষিকতা তত্ত্বের একটি শক্তিশালী অনুমান’ শীর্ষক আবিষ্কারের জন্য রজার পেনরোজকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। তিনি নোবেল পুরস্কারের অর্ধেক পাবেন। পুরস্কারে মোট মূল্যমান ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ১১ লাখ ২৩ হাজার ডলার)। পুরস্কারের বাকি অর্ধেক পাবেন রেইনহার্ড গেনজেল ও আন্দ্রে গেজ। আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে বড় ধরনের একটি কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব আবিষ্কারের কারণে তাঁদের এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।

রজার পেনরোজ তার গবেষণার মধ্য দিয়ে দেখিয়েছেন, সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বই কৃষ্ণগহ্বরের জন্ম-প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা দেয়। আর রেইনহার্ড গেনজেল ও আন্দ্রে গেজ আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে এমন এক অদৃশ্য ও ভীষণ ভারী বস্তুর অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন, যা এর আওতাধীন তারকারাজির গতিপথকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই অদৃশ্য কিন্তু ভীষণ ভারী বস্তুটি আদতে শক্তিশালী কোনো কৃষ্ণগহ্বর বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

কিংবদন্তি বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বহু বছর আগে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব দিয়ে গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কৃষ্ণগহ্বর এই তত্ত্বের সরাসরি ধারাবাহিকতার একটি অংশ—এমন বিষয়টিই গাণিতিক যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেছেন রজার পেনরোজ। আইনস্টাইন যখন এই আপেক্ষিকতার তত্ত্ব দেন, তারপরও তিনি কখনো কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন না। মজার বিষয় হলো, এখন তার তত্ত্বের মধ্যেই এই কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্বের ইঙ্গিত রয়েছে বলে প্রমাণ হাজির করে নোবেল পেলেন রজার পেনরোজ।

ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার রজার পেনরোজ বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের ইমেরিটাস রোজ বল অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন। ১৯৩১ সালে জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানী একই সঙ্গে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াহেম কলেজের ইমেরিটাস ফেলো এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জনস কলেজের সম্মানিত ফেলো। ১৯৫৭ সালে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন।

গত ৫৬ বছরের মধ্যে ২০১৮ সালে প্রথম নারী হিসেবে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন কানাডার পদার্থবিজ্ঞানী ডোনা স্ট্রিকল্যান্ড। এর আগে, ১৯০৩ সালে পদার্থবিদ্যায় প্রথম নারী হিসেবে নোবেল পুরস্কার পান ম্যারি কুরি।

২০১৮ সালের পর এক বছরের বিরতিতে আবারও চলতি বছরে পদার্থে চতুর্থ নারী হিসেবে নোবেল পেলেন জার্মান পদার্থবিদ আন্দ্রিয়া ঘেজ। সর্বশেষ ১৯৬৩ সালে জার্মান বংশোদ্ভূত মার্কিন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী মারিয়া গ্যোপের্ট-মায়ার দ্বিতীয় নারী হিসেবে পদার্থের নোবেল পান।

কৃষ্ণগহ্বর হচ্ছে এমন এক অতিদানবীয় ভরবিশিষ্ট বস্তু, যার আকার ভরের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় ঘনত্ব থাকে অতি উচ্চ। ফলে এটি সবকিছুকেই নিজের কেন্দ্রের দিকে টেনে নেয়। এমনকি আলোও এর আকর্ষণকে অগ্রাহ্য করতে পারে না বলে এ ধরনের বস্তু থেকে কোনো আলো বের হয় না। ফলে এটি দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকে। তীব্র আকর্ষণই এর অস্তিত্বের প্রাথমিক প্রমাণ হিসেবে হাজির হয়।

নোবেল কমিটিগুলোর ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার (৭ অক্টোবর) রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স থেকে রসায়নবিদ্যায়, বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) দ্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি থেকে সাহিত্যে, শুক্রবার (৯ অক্টোবর) নরওয়ের রাজধানী অসলো থেকে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি শান্তিতে এবং সোমবার (১২ অক্টোবর) দ্য রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত