নিল আর্মস্ট্রং: বিমান চালানোর নেশা থেকে অ্যাপোলো-১১

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৯, ১০:০১

নিল আর্মস্ট্রং একজন শান্ত, স্ব-বর্ণিত ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন যিনি বিশ্বব্যাপী নায়ক হয়ে উঠেছিলেন। একজন সুপ্রতিষ্ঠিত ইউএস পাইলট হিসাবে তিনি প্রথম চাঁদে পা রাখেন এবং আর্মস্ট্রং এর ভাষায় যা ছিলো, “মানবজাতির জন্য এক বিশাল অগ্রযাত্রা”।

নিল আর্মস্ট্রং ১৯৩০ সালের ৫ আগষ্ট জন্মগ্রহন করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর স্টেফান কনিগ আর্মস্ট্র ও ভায়োলা লুইসা দম্পতির প্রথম সন্তান নিল আর্মস্ট্রং। তার বাবা ছিলেন একজন অডিটর।

বিমান চালনার নেশা ছিল খুব তার। বাবা অডিটর থাকার সুবাদেই বিমান চালনার প্রতিযোগীতা দেখতে যেতে পারতেন। আগ্রহটাও চড়ে বসেছিল বেশ করে। তাইতো গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাওয়ার আগেই মাত্র ষোল বছর বয়সেই পেয়ে যান বিমান চালানোর সনদ।

উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠ চুকালে নিল আর্মস্ট্রং মার্কিন নৌবাহিনী থেকে বৃত্তি পান।  পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। পরে ১৯৪২ সালে তিনি মার্কিন নৌ-বাহিনীতে বিমান চালক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫২ সালে নৌবাহিনী থেকে বের হয়ে আর্মস্ট্রং যোগদেন ন্যাশনাল এডভাইসরী কমিটি ফর এয়ারনেটিক্স (ন্যাকা) -য়।

পঞ্চাশ-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে আর্মস্ট্রং নাসার ফ্লাইট রিসার্চ সেন্টার, এডওয়ার্ডস, ক্যালিফোর্নিয়ায় স্থানান্তরিত হন, যেখানে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার এডওয়ার্ডস এয়ার ফোর্স বেসে একজন বৈমানিক গবেষক হিসেবে যোগদান করেন। সেসময় নিল আর্মস্ট্রং অনেক অগ্রগামী হাই স্পিড বিমানের পাইলট হিসাবে নিজের সক্ষমতা দেখাতে সক্ষম হোন।

১৯৬৬, ১৬ মার্চ। আর্মস্ট্রং তার প্রথম মহাকাশযানের যাত্রা করেন জেমিনি-৮ এর কমান্ড পাইলট হিসেবে। সাথে ছিলেন ডেভিড স্কট । সেখানে তাদের মূল কাজটা ছিলো মহাকাশে দুইটি যানকে মিলিত করা। 

জুলাই ১৯৬৯ সাল।  আর্মস্ট্রং, বাজ অলড্রিন এবং মাইকেল কলিন্স অ্যাপোলো-১১ এর মাধ্যমে ইতিহাসে নাম লিখলেন প্রায় বিশ লক্ষ মাইল দুরত্ব পাড়ি দিয়ে চাঁদে ভ্রমণ করে। গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য তাদের লেগেছিল চার দিন।

তারিখটা ঠিক ২০ জুলাই, ১৯৬৯। নিল আর্মস্ট্রং এর বয়স ৩৮। এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। প্রথমবারের মতো চাঁদে  মানুষ এঁকে দিল তার পদচিহ্ন। আর্মস্ট্রং তখন উচ্চারণ করলেন তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি,  “That’s one small step for (a) man, one giant leap for mankind” অর্থাৎ “এটি একজন মানুষের জন্য ক্ষুদ্র একটি পদক্ষেপ, কিন্তু মানবজাতির জন্য এক বিশাল অগ্রযাত্রা”।

মানুষের চাঁদে অভিযান নিয়ে যেমন বিতর্কের সুর বেজেছে তেমনি আর্মস্ট্রংকে নিয়েও কম আলোচনা হয়নি। বেশ কিছু সময় ধরেই ইন্দোনেশিয়া, মালোয়েশিয়া ও মিশরের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রোপাগান্ডায় ছড়িয়ে পড়ে আর্মস্ট্রং ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন। যেখানে চাঁদে ভ্রমণ সংক্রান্ত কিছু অবান্তর ধারনার আশ্রয় নেয়া হয়। বিষয়টি এমন ভাবে ছড়াতে শুরু করে যে আর্মস্ট্রং বাধ্য হোন মার্কিন সরকারের সাহায্য নিতে। পরবর্তীতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট অভিযুক্ত তিন দেশসহ আরোও বেশকিছু দেশে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়ে এই তথ্য ছড়ানো বন্ধ করতে অনুরোধ করেন।

নিল আর্মস্ট্রং একবার ঢাকা সফরে এসেছিলেন। সালটা ১৯৬৯, ২৭ অক্টোবর। বিকেলে ঢাকা এয়ারপোর্টের (বর্তমান তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর) অবতরণ করে চন্দ্র বিজয়ীদের বহনকারী বিমান। ভারতের মুম্বাই থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের(বাংলাদেশ) প্রশাসনিক রাজধানী ঢাকা এসে পৌঁছায় তারা। নভোচারীদের সঙ্গে ছিলেন তাদের স্ত্রীরা। বিমানবন্দরে ঢাকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের কর্মকর্তারা আর এক ঝাঁক সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ উপস্থিতি ছিল। তুমুল করতালি ও মুহুর্মুহু আনন্দধ্বনির মধ্যে তাদের মোটর শোভাযাত্রা করে নিয়ে যাওয়া হয় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে।

২০১২ সালের ২৫ আগস্ট মারা যান দুনিয়া কাঁপানো এই নভোচারী।

চাঁদে প্রথম অভিযান নিয়ে বেশ জল ঘোলা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে নানাবিধ কারণেই। কিন্তু নিল আর্মস্ট্রং একটা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন ভবিষ্যতের কোন ইতিহাস লেখনীতে।