আজ পবিত্র আশুরা; ত্যাগ চাই, মর্সিয়া-ক্রন্দন চাই না

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২১, ০০:৪৪

‘ওয়া হোসেনা ওয়া হোসেনা কেঁদে তাই যাবে দিন
ফিরে এল আজ সেই মহরম মাহিনা
ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহিনা।’

আজ আরবি হিজরি ১৪৪৩ সালের মহররম মাসের ১০ তারিখ। পবিত্র আশুরা। মুসলিম জাহানের শোকের দিন। এই দিনেই অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে কারবালা প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদত বরণ করেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)- এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)।

আশুরা নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘মহররম’ কবিতায় লিখেন,
‘নীল সিয়া আসমান লালে লাল দুনিয়া -
আম্মা লাল তেরি খুন কিয়া খুনিয়া,
কাঁদে কোন ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে?
সে কাঁদনে আসু আনে সিমারের ও ছোরাতে।...’

মুয়াবিয়ার শাসনামল পর্যন্ত কোরাঈশ আর মুয়াবিয়া সম্রাজ্যের মধ্যে দেখা দেয়নি তেমন কোনও বিরোধ। বাঁধ সাধে মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর। অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেন তাঁর ছেলে ইয়াজিদ। এ জন্য ষড়যন্ত্র ও বলপ্রয়োগের পথ বেছে নেন তিনি। 

এর আগেই বিষপান করিয়ে হত্যা করা হয় মহানবী (সা.)-এর আরেক দৌহিত্র হজরত ইমাম হাসান (রা.)কে। ইয়াজিদীদের হাতে অবরুদ্ধ হয় পরিবার-পরিজন। ৭২ জন সঙ্গীসহ নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করেন হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)। অসহায় নারী ও শিশুদের পানি পর্যন্ত পান করতে দেয়নি নিষ্ঠুর ইয়াজিদীরা। তখন থেকেই প্রতিবছর কারবালা প্রান্তরের সেই শোকাবহ ঘটনার স্মরণে ১০ মহররম পালিত হয় পবিত্র আশুরা।

এদিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে মুসলিমদের শিয়া সম্প্রদায়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য তাজিয়া মিছিল। দেশের শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষরাও যুগ যুগ ধরে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে পালন করে আসছে এই পবিত্র দিনটিকে। যেখানে বিশেষ কোনও নিরাপত্তার প্রয়োজন হতো না।

তবে ২০১৫ সালের পর থেকে অনেকাংশে বদলে যায় এই চিত্র। দিনটিকে ঘিরে সরকারিভাবে নেওয়া হয় নানান নিরাপত্তা বেষ্টনী। ওই বছর রাজধানীতে আশুরার আগের রাতে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে হত্যা করে উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। নামাজরত একজন মুসল্লিকে হত্যার ঘটনাও ঘটে বগুড়া জেলায় এক শিয়া মসজিদে। তখন থেকেই আশুরার দিন সরকারিভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়।

করোনাভাইরাস মহামারির ফলে গত বছর আশুরায় অনুমতি দেওয়া হয়নি তাজিয়া মিছিলের আয়োজনের। তাই রাস্তায় তাজিয়া মিছিল বের না করে হোসেনি দালানে অবস্থিত ইমামবাড়া চত্বরে তাদের সীমিত কর্মসূচি আয়োজন করে শিয়া সম্প্রদায়।

এ বছর টানা দুইবারের লকডাউন দিয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করায় হোসেনী দালান থেকে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি পালিত হবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

পুলিশ বিভাগ জানায়, কাল ঢাকা সহ সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে পবিত্র আশুরা পালিত হবে। বিদ্যমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে রাজধানীতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম আশুরার মূল চেতনা। ইমাম হোসাইন (রা.) ও তাঁর অনুসারীদের ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য এ সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই মহররমের শিক্ষা। ইসলামের ইতিহাসে এ আত্মত্যাগ মুসলিম জাতির জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত। নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়। আশুরার যে ত্যাগের চেতনা, তাকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারলে পৃথিবী থেকে হিংসা বিদ্বেষের অবসান ঘটবে বলে মনে করেন ধর্মীয় নেতারা।

শিয়া ছাড়াও মুসলিম জাতির সুন্নি, ওয়াহাবিসহ সকল সম্প্রদায় স্ব-স্ব নিয়মে পালন করে থাকে এই পবিত্র দিনটিকে। অনেকে এই দিনে সিয়াম সাধনা ও প্রার্থনায় কান্নাভরা চোখে পরমেশ্বরের নিকট মানবজাতির জন্য ক্ষমা ও সুন্দর স্বাবলীল দোজাহানের প্রার্থনায় মশগুল হন। মসজিদে-মসজিদে বন্ঠণ করেন শিরনী-সালাদ। ধনী ব্যক্তিরা সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষদের মধ্যে করে থাকেন দান দক্ষিণা। এ দিনের শিক্ষায় নিজেদের আলোকিত করতে করা হয়ে থাকে ওয়াজ মাহফিলেরও আয়োজন।

সাহস২৪.কম/জেএস/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত