যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে সাগরের তলদেশে ছড়িয়ে পড়ছে প্লাষ্টিক বর্জ্য

প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৩, ০৯:২৩

ডা. এম আর করিম রেজা
যত্রতত্র ময়লা বা বর্জ্য না ফেলার জন্য জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে


বর্তমান পৃথিবীর মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্লাষ্টিক ছাড়া কল্পনাতীত। প্রায় সকল ধরনের মোড়ক ও বোতল প্লাষ্টিকের তৈরি। ব্যবহত প্লাষ্টিকের কিছু অংশ রিসাইকেল করা হলেও বেশিরভাগই বর্জ্য হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৪৫ কোটি টন প্লাষ্টিক বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে। প্লাষ্টিক বর্জ্য ৪০০ বছর পর্যন্ত পরিবেশে বিরাজ করে জীব ও প্রকৃতির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। উন্নত দেশে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকায় ব্যবহত প্লাষ্টিক পরিবেশে কম ছড়িয়ে পড়ে।

তবে চীন সহ এশিয়ার দেশগুলো বিশ্বের ৫১% প্লাষ্টিক দূষণকারী। প্লাষ্টিক দূষণকারী শীর্ষ দেশের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে।

প্লাস্টিক বর্জ্য (বিসফেনল-এ, ফথেলেটস, বিসফেনোন, অর্গানোটিনস, পার ও পলি ফ্লোরোঅ্যালকাইল এবং ব্রোমিনেটেড ফেইম রিটারডেন্টস ইত্যাদি) মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশে নিঃসরণ করে।

প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। এই বছর এই দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় 'প্লাষ্টিক দূষণ দুর করো'। প্লাস্টিক কৃত্রিমভাবে তৈরি একটি পলিমার। এটি জীবাশ্ম জ্বালানি বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা হয়।

নমনীয় ক্ষয়রোধী, দীর্ঘস্থায়ী ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে প্লাষ্টিকের তৈরি পণ্য মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে সাগরের তলদেশ থেকে মাউন্ট এভারেস্ট পৃথিবীর সর্বত্র এমনকি মেরু অঞ্চলেও প্লাষ্টিক বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে।

ইতিমধ্যেই পৃথিবীর মাটি, পানি, বায়ুমণ্ডল, বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও মানবস্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই প্লাষ্টিক দূষণ।


ন্যানো এবং মাইক্রো কণা হিসেবে এসব ক্ষতিকর পদার্থ খাদ্য চক্র ও পানির মাধ্যমে প্রাণীকুলের দেহে প্রবেশ করছে। মাইক্রো ও ন্যানো প্লাষ্টিক কণায় থাকা এসব পদার্থ যে কোন জীবের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার বিরুপ পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

প্লাষ্টিক বর্জ্য মাইক্রো ও ন্যানো কণায় থাকা ক্ষতিকর পদার্থ মানুবদেহে বিরাজমান হরমোনজনিত পরিবেশ পরিবর্তন করে শুক্রানু ও ডিম্বানু তৈরি ব্যাহত করতে পারে। স্নায়ু কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে মস্তিস্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের নানা রোগের কারণ হতে পারে।

কোষের জীনগত পরিবর্তন করে ক্যান্সার সহ আরো নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও প্লাষ্টিক পণ্যের সরাসরি সংস্পর্শে ত্বকের রোগ হতে পারে।

প্লাষ্টিকের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্য ছাড়া আধুনিক জীবন অচল। প্লাষ্টিক পণ্য নিষিদ্ধ করে দূষন নিয়ন্ত্রণ করার পদক্ষেপ সেজন্যই যৌক্তিক নয়। বহুল ব্যবহৃত প্লাষ্টিকে তৈরি পলিথিন ব্যাগ দূষণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।

পলিথিনের পরিবর্তে কাগজ, পাট বা প্রাকৃতিক তন্তের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার উৎসাহিত করতে হবে, প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যেতে পারে। তবে পলিথিন ও অন্যান্য প্লাষ্টিক দ্রব্য সহ সকল ধরনের বর্জ্যের জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার বিকল্প নেই।

যত্রতত্র ময়লা বা বর্জ্য না ফেলার জন্য জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আধুনিক বিশ্বে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে প্লাষ্টিক দূষণ।

আন্তর্জাতিক ভাবে ইতিমধ্যেই গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে সমন্বয় করে যত দ্রুত সম্ভব দেশে প্লাষ্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা উচিত।

লেখক : ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

লেখকদের নামঃ