অভিবাসী শ্রমিকদের সমস্যা সনাক্ত করে সম্ভাবনা আনতে হবে

প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৩, ১৪:৩১

জামাল জেনিফার

অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশও প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর নির্ভরশীল। এটি কেবল বাণিজ্য ঘাটতির ভারসাম্য মেটাতে নয়, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতেও সাহায্য করে। উপরন্তু, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য বিদেশে কর্মসংস্থান খুঁজে পেতে এবং দেশের গ্রামীণ অঞ্চলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করতে সক্ষম করে।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রায় ৯ মিলিয়ন মানুষ কর্মী হিসাবে সুদূর প্রাচ্য, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রয়েছে। এছাড়াও প্রায় অর্ধ মিলিয়ন বাংলাদেশি রয়েছে- যারা বিদেশি নাগরিকত্ব অর্জন করে সেসব দেশে বসতি স্থাপন করেছে। 

জানুয়ারিতে দেশে গত ৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে। ডিসেম্বরে এসেছিল ১ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। বিশ্লেষকরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের এ প্রক্রিয়াকে সম্ভবত উৎসাহিত করা হয়েছে। 

অনেক অর্থনীতিবিদ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। সুখের অনুভূতি যদিও কিছু সমাজবিজ্ঞানী দ্বারা প্রতিফলিত হয়নি; যারা অভিবাসী ম্যাট্রিক্সের মধ্যে অন্য বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

দুঃখজনক পরিস্থিতি হলো- প্রবাসী শ্রমিকদের নানা সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকারেলা করতে হয়। এ বিষয়ে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (RMMRU) পারিবারিক আয়-ব্যয় এবং দারিদ্রের উপর অভিবাসনের প্রভাব বিস্তার নিয়ে সাম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়, বাংলাদেশিরা উপসাগরীয় এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে ভ্রমণ করে। তারা প্রবাসী কর্মী হিসেবে চাকরির খোঁজ ও ভ্রমণের অগ্রিম খরচ মেটাতে ঋণের পথ বেছে নেয়। ঋণ নিতে বাংলাদেশে অন্য সদস্যদেরও তারা প্রভাবিত করে। সেই পরিবারে অনাকাঙ্খিত কোন হলে তা বাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ে।

বিদেশ ভ্রমণকালে নারীর নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনা সাম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তারা যৌন নির্যাতনের শিকার; যা আন্তর্জাতিক আইনীবিধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তারা জানান, যে কীভাবে তাদের বোকা বানানো হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ খাতের দুর্নীতি কমাতে এবং অধিকতর জবাবদিহিতা আনতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে।

সাম্প্রতিক কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ (CHRI) গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি উপসাগরীয় দেশগুলিতে ২৪ হাজার ৫৭০ জনেরও বেশি ভারতীয় শ্রমিক মারা যায়।

আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সৌদি আরবে এ সময়ে ১০ হাজার ৪১৬ এবং বাহরাইনে ১ হাজার ৩১৭ জন মারা গেছেন।

পরিসংখ্যান যাইহোক, মৃত্যুর কারণ নিয়ে প্রশ্ন। এটা স্পষ্ট নয় যে প্রাকৃতিক এবং অসুস্থতার কারণে কর্মক্ষেত্রে তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাই ঘটনাগুলির অনুসন্ধান করতে হবে। অন্যদিকে মৃত্যুর কারণ অধ্যয়ন করতে বিশেষজ্ঞদের কমিশন গঠন জরুরী।

বিশেষ করে কাতারে অনেক মানুষের মৃত্যুতে "প্রাকৃতিক মৃত্যু" হিসেবে লেবেল লাগানো হয়। তাদের বেশিরভাগই নির্মাণ খাত এবং অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের সাথে জড়িত। এখানে শ্রমিকদের বেশিরভাগই অদক্ষ, আধা-দক্ষ এবং কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করেন। যে কারণে মুত্যুহার এসব দেশে বেশি।

তবে ভারত ও বাংলাদেশের কিছু এনজিও উদ্যোগের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে- দক্ষিণ এশিয়া থেকে প্রবাসীরা বিদেশে বিভিন্ন প্রতিকূলতার ভেতরে কাজ করেন। তাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, কাজের অবস্থা এবং শ্রমের মান সাবধানে পর্যবেক্ষণ করা দরকার বলে এনজিওগুলোর দাবি।

দেশে-দেশে সমস্যাগুলো সনাক্ত করতে পারলে সম্ভাবনাও অনেক। অনদিকে বিরুপ পরিস্থিতিতে এমন মানুষগুলোর মৃত্যুও এড়ানো যায়। তারপরেও অতিঝুঁকিপূর্ণ কাজে মৃত্যু হলে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ ‘মৃত্যু দাবি’ প্রতিরোধ করতে বাধ্য হবে।

  • জামাল জেনিফার
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

লেখকদের নামঃ