শুভ জন্মদিন তারুণ্যের প্রতীক শহীদ শেখ কামাল

প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২২, ২১:১৯

বিল্লাল হোসেন রামিন

ক্রীড়া, সঙ্গীত, রাজনীতি, সংগঠন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, সেনাবাহিনী ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে মাত্র ২৬ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে যে মানুষটা রেখে গেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান আজ সেই মানুষটার ৭৩ তম জন্মবার্ষিকী। বলছি বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের কথা। শেখ কামাল যদি এখন বেঁচে থাকতেন, তাহলে উনার বয়স হত ৭৩। উদ্দীপ্ত তারুণ্যের অগ্রদূত, হাসিখুশি আনন্দের প্রতীক এই মানুষটি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের বুলেটের আঘাতের প্রথম শহীদ। খুনি ঘাতক চক্র শেখ কামালকে হত্যার মধ্য দিয়ে শুধু এক প্রতিশ্রুতিশীল তারুণ্য বা যুব অহংকারকেই হত্যা করেনি, হত্যা করেছিল ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের এক সম্ভাবনাময় নেতৃত্বকে।

বঙ্গবন্ধুর রক্ত যার ধমনীতে বহমান ছিল, মাত্র ২৬ বছরের জীবনে তিনি দেশের জন্য রেখে গেছেন অনবদ্য অবদান, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল সম্পর্কে আমরা তরুণ প্রজন্ম কতটুকু জানি? কতটুকু জানতে দেয়া হয়েছে আমাদের?

সেই দিন মোশতাকগংদের ভয়ানক কালোথাবায় তিনি শহীদ না হলে হয়ত ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ থাকত বিশ্বের সব দেশ থেকে এগিয়ে। হয়ত তিনি হয়ে উঠতেন একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ! আজ যদি শেখ কামাল বেঁচে থাকতেন, তাহলে ইতিহাস হয়তোবা অন্যভাবে লেখা হতে পারতো, এই স্বপ্নবাজ মানুষটি হতেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা।

১৯৭৫ সালের পর থেকেই শেখ পরিবারকে বাংলার ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার নানা চেষ্ঠা করা হয়েছে যার বহু প্রমাণ ইতিহাসের নানা ক্ষেত্রে পাওয়া যায় সেখানে আপনার আমার পক্ষে শেখ কামাল কি ছিলেন, কেমন ছিলেন, কি ছিল তাঁর স্বপ্ন, সেটা জানার কথা না।

আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যেভাবে স্থান করে নিয়েছে বিশ্বকাপে তাঁর চেয়ে ভাল অবস্থানে থাকত বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং ফুটবল টিম উভয়ই। অবাক হচ্ছেন! অবাক হওয়ার কিছু নেই কারণ শেখ কামালের পক্ষে এটা অসম্ভব ছিলনা। ‘আবাহনী’ চার অক্ষরের এই শব্দটা এপার বাংলা, ওপার বাংলা তথা বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে বসবাসরত সব বাঙালিই একবার হলেও শুনেছেন যদি না শুনে থাকেন, তাহলে বিষয়টা বিশাল লজ্জার বটে। আবাহনী বাংলাদেশের একটি ফুটবল ক্লাবের নাম।

দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার স্টেডিয়াম খা খা করলেও, শুনেছি, সে সময় আবাহনী বনাম মোহামেডান ক্লাবের খেলা হলে স্টেডিয়ামে জায়গা পাওয়া ছিল কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আর এই আবাহনী ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা হলেন শেখ কামাল। খেলাধুলায় বিপ্লব করে সমাজ পরিবর্তন করার চেষ্টা যিনি করেছিলেন। একটি ক্লাব কীভাবে পুরো দেশকে ক্রীড়াঙ্গনে নেতৃত্ব দিতে পারে তার উদাহরণ তাঁর রেখে যাওয়া এই আবাহনী ক্লাব।

লেখক হাসান শরীফ তার ‘পরের জন্মে মুক্তিযোদ্ধা হতে চাই’ শীর্ষক লেখায় শেখ কামাল সম্পর্কে লিখেছেন, ‘ছোটবেলা থেকেই শেখ কামাল ছিলেন প্রচন্ড ক্রীড়ানুরাগী। শাহীন স্কুলে পড়ার সময় স্কুল একাদশে নিয়মিত ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল খেলতেন। আজাদ বয়েজ ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে নিয়মিত খেলেছেন। দীর্ঘদেহী কার্যকর ফাস্ট বোলার হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন তিনি।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেখ কামাল শুধু খেলোয়াড় হিসাবে নয়, ক্রীড়া সংগঠক হিসাবেও আত্মপ্রকাশ করেন। ফুটবল খেলায় তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা উপমহাদেশেই পশ্চিমা স্টাইলে বিপ্লব এনেছিলেন। সেই ১৯৭৩ সালে আবাহনীর জন্য বিদেশী কোচ বিল হার্ট কে এনে ফুটবল প্রেমিকদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন! তখন ক্লাব তো দুরের কথা, এই উপমহাদেশে জাতীয় দলের কোনো বিদেশী কোচ ছিলনা।

শুধু গান গাইলেও উনি বাংলাদেশের বড় তারকা হয়ে বেঁচে থাকতেন আমাদের মাঝে, তার একটা বড় উদাহরণ হচ্ছে। তিনি নিজ দায়িত্বে ‘স্পন্দন’ নামে স্বাধীন বাংলাদেশে একটি ব্যান্ডদল গঠন করেছিলেন। এ গানের দলের মাধ্যমে তিনি পল্লীগীতি আর আধুনিক নানা সঙ্গীত যন্ত্রের মধ্যে সমন্বয় করে দেশের সঙ্গীত জগতে বিপ্লব ঘটাতে চেয়েছিলেন।

১৯৬৯-র গণ-অভ্যুত্থান ও ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে পালন করেছেন বীরোচিত ভূমিকা। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ারকোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশনন্ড লাভ করেছিলেন শেখ কামাল। তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এমএজি ওসমানির এডিসি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

মাত্র ২৬ বছরের জীবনে শেখ কামাল ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। ছাত্রলীগের একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। যার প্রমাণ মিলে জনাব মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু এর লেখায় তিনি ‘স্মৃতির পাতায় শেখ কামাল’ শিরোনামে একটি লেখায় উল্লেখ করেন, “স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনী ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্ধালয়ে সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে পুনরায় শিক্ষা জীবনে ফিরে আসেন কামাল  ভাই। এই সময় কামাল ভাই ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। এই কমিটির সভাপতি ছিলেন শেখ শহীদুল ইসলাম আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এম এ রশিদ। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে সরাসরি ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ দেখাশুনা করতেন কামাল ভাই। কামাল ভাই দিনের শেষে প্রায়ই ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের অফিসে এসে আমাদের খোঁজ খবর নিতেন। ঢাকা মহানগরের কর্মীরা ছিল তাঁর প্রানের চেয়েও বেশি।”

২৬ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে যিনি দাপিয়ে বেরিয়েছেন ক্রীড়া অঙ্গন থেকে সাংস্কৃতিক অঙ্গন, রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ।  স্বাধীন বাংলাদেশের উদ্দীপ্ত তারুণ্যের অগ্রদূত এবং বহুমাত্রিক গুণে-গুণান্বিত এই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, বাঙালির চিন্তা-চেতনায় ও জাতির ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন।

অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারী, উদ্দীপ্ত কর্মনিষ্ঠ, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা মানুষটির জন্মদিনে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

বিল্লাল হোসেন রামিন

সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

লেখকদের নামঃ