করোনাযুদ্ধে কতটা বদলাবে বাংলাদেশ?

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২০, ১৬:১৬

করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বের দুর্দশার এক মহাকাব্যের নাম। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও হু হু করে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। দেশে দেশে শিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি, অর্থনীতি সব থমকে গেছে এই মহাশক্তিশালী দানবের হুঙ্কারে। করোনা দ্রুত গতিতে পাল্টে দিচ্ছে মানুষের প্রাত্যহিক জীবন। মানুষের জানা জগতের যাবতীয় সামাজিক নিয়মনীতি, মানুষের মেধা ও মননকে মৌলিকভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে করোনা। বাংলাদেশে লকডাউন শুরুর আগের এবং পরের যে ছবি তার মধ্যে আকাশজমিন ফারাক। বদলে গেছে সামাজিক দৃশ্যপট। জীবনযাত্রার চেনা ছবির বদল ঘটেই চলেছে। আরও বদলে যাবে। 

ভাবতে ভয় হয়। করোনা ভবিষ্যত পৃথিবীকেই পাল্টে দেবে নাতো? প্রশ্ন উঠে, এই ভয়াবহ সময় কাটিয়ে বাংলাদেশ কি ফিরবে তার আগের ছন্দে? করোনাকালে তৈরি হওয়া অভ্যাসের চর্চা লকডাউনের পরে বহাল থাকবে তো? করোনাযুদ্ধের পর ঠিক কী ধরনের বাংলাদেশে ফিরবো? আগামীর বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্দাজ করতে বর্তমান সময়টায় একটু চোখ বুলিয়ে নিলে ব্যাপারটা আরও খোলাসা হয়ে যায়। চলতি করোনাযুদ্ধে বাংলাদেশে বিজ্ঞানসম্মত সুস্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা ও ডিজিটাল সুশাসন, শৃঙ্খলা মানুষের অঙ্গিভূত হয়ে গেছে। করোনাকালে শারীরিক উপস্থিতির বদলে ভার্চুয়াল উপস্থিতি বা ডিজিটাল প্রযুক্তি মানুষের জীবনে আরও বেশি প্রয়োজন বলে অনুভূত হচ্ছে। করোনাযুদ্ধের অনেক আগে বাংলাদেশ ডিজিটাল হওয়ায় এই দূর্যোগে নানান ঝক্কি মোকাবেলার কাজ অনেকটাই সহজ হয়েছে। করোনাযুদ্ধে ডিজিটাল প্রযুক্তি কতটা যে দরকার তা লকডাউনে গৃহবন্দি বাংলার ১৮ কোটি মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ডিজিটাল হওয়ার কারণে লকডাউনে প্রত্যন্ত গ্রামের অসহায় গৃহবন্দি মানুষ প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য, প্রনোদনা, অনুদানের টাকা পাচ্ছেন মোবাইলে, হাতে হাতে, ঘরে বসে। করোনাকালে জোরদার হয়েছে ডিজিটাল ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার, অনলাইন ব্যাংকিং। ঘরে বসেই নগদ, বিকাশ, ইউক্যাশ, শিউর ক্যাশ প্রভৃতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুহূর্তেই আপনজনদের কাছে পাঠানো যাচ্ছে টাকা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ কোটি। লকডাউনের মধ্যে ১৫ দিনে যুক্ত হয়েছে ২৬ লাখ নতুন মোবাইল অ্যাকাউন্ট। কল্পনা করা যায়? দেশের এই লকডাউনে শারীরিক উপস্থিত না হয়ে স্মার্টফোন নামক ছোট্ট ডিজিটাল যন্ত্র দিয়ে সহজে অনায়াসে করা যাচ্ছে কত শত কাজ? সবার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ, এমন দূর্যোগে শরীর-স্বাস্থের খোঁজ খবর, অনলাইন বাজার সদাই, কেনাকাটা ইত্যাদি। ডিজিটাল বাংলাদেশে প্রযুক্তির গোড়ায় চাপিয়ে দেওয়ার কারণে তরুণ প্রজন্ম হা হা করে ছুটছে প্রযুক্তির সঙ্গে। ঘরে ঘরে ডিজিটাল নানান আউটসোর্সিং পেশায় এই প্রজন্ম নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে। দেশে ছয় কোটির বেশি লোক ব্যবহার করছে ফেসবুক। লকডাউনে সবকিছু অবরূদ্ধ থাকলেও আটকে নেই ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসা। অনলাইন বিজনেসে এই প্রজন্ম দৈনন্দিন জিনিসপত্রের অর্ডার দিচ্ছে। লকডাউনে বাংলাদেশের বিভিন্ন অফিস, প্রতিষ্ঠান বাসা থেকে কাজ করার ডিজিটাল উপায়- ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ মডেল অনুসরণ করছে। শুধু কি তাই? এদেশের স্কুল শিক্ষার্থীরাও এই লকডাউনে ঘরে বসে অনলাইনে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিচালনায় খুদে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ প্রোগ্রামের আওতায় সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস ইতোমধ্যে দেশব্যাপী সব মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। বাংলাদেশের প্রযুক্তিবান্ধব রাস্ট্রনায়ক, ভয়-ডরহীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাযুদ্ধে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ঢাকায় বসে সারাদেশের মানুষের সঙ্গে সরাসরি ডিজিটাল সংযুক্ত হয়ে সার্বক্ষণিক পাশে থেকে করোনাযুদ্ধের পরিস্থিতি নিজেই মনিটরিং করছেন। করোনাযুদ্ধে মনোবল চাঙ্গা রাখতে তিনি বাড়তি অক্সিজেন জোগাচ্ছেন। দু:সময়ে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ভার্চুয়াল পাশে পেয়ে দেশবাসী হচ্ছেন অভিভূত ও প্রেরণাদীপ্ত! প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক করোনাযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছেন সশস্ত্রবাহিনী, পুলিশ, চিকিৎসক, নার্সসহ সর্বস্তরের সাহসী জনতা। প্রধানমন্ত্রীর কারণেই এই মহামারীকালে নানান ক্ষেত্রে দ্রুত সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। যা সত্যিই প্রশংসার ও গৌরবের। 

তাই নিশ্চিত বলা যায়, বাংলাদেশে ডিজিটাল সুশাসনের বাকি কিছুর পূূর্ণ রূপায়ণ হয়তো বাঙালি দেখতে পাবে অচিরেই, লকডাউন উঠার পর। লকডাউন উঠে গেলে রাস্ট্রযন্ত্রের সকল অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে হু হু করে বেড়ে যাবে এই ডিজিটাল তথ্য বিনিময় ও প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম। বাংলাদেশে ৫-জি’র কল্যাণে বিগ ডেটা, আইওটি’র ব্যবহার বেড়ে যাবে। আগামীর বাংলাদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত অনেকটাই হয়ে যাবে অনলাইনে। নতুন নতুন ডিজিটাল অ্যাপস সমাধান করবে মানুষের প্রাত্যহিক যাবতীয় দরকারী কাজ। বর্তমান সময়ের প্রয়োজনে নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সেবাপ্রাপ্তির সুবিধার জন্যেই ‘মোবাইল ট্র্যাকিং’ ব্যবহার হয়তো বাংলাদেশেও অতি আবশ্যক হয়ে উঠবে। চাই কী, গণতান্ত্রিক নির্বাচন, ভোটের প্রচার, এমনকি ভোটের কাজ সম্পাদনের কাজও করতে পারে অনলাইন অ্যাপস। ৫-জি এলে বাংলাদেশে খুব দ্রুত শিল্প বিপ্লব ঘটবে। করোনার মতো আগামীতে স্পর্শকাতর রোগের মহামারীতে জীবন বাঁচাতে ও নিরাপত্তা কাজে বাংলাদেশেও ব্যাপকভাবে রোবটের ব্যবহার হবে জরুরি প্রয়োজন। তাই বাংলাদেশে আগামী দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বেশ কিছু চাকরি নিয়ে নেবে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

বিশ্বাস হচ্ছে না? তবে ক’দিন আগেকার দৃশ্যপট খেয়াল করুন। গ্রীষ্মের খররোদে যখন একটার পর একটা গাড়ি হু-হু করে ধুলা উড়িয়েছিলো, তখনই-বা ঠিক কতজন মাস্ক ব্যবহার করেছিলেন? রাস্তায় আগে ধুলা উড়ার ধোঁয়াটে দৃশ্য- বাস, গাড়ি বা বাইকে চেপে যাওয়ার সময় হাজার হাজার মানুষ দেখেছেন। বড়জোর সে সময়টুকু নাকে-মুখে রুমাল চাপা দেয়া হতো।  সতর্কতা বলতে এতটুকুই ছিলো তখন। সামাজিক দূরত্ব কি জিনিস- তখন ছিলো অজানা। এই প্রেক্ষিত থেকে মানুষের আজকের যে সতর্ক  অবস্থান, তা ছবিবদল তো বটেই! এবার ভাবুন তো, এখন যারা বারবার বাড়িতে সাবান দিয়ে বা স্টেরিলাইজার দিয়ে হাত ধুচ্ছেন, তাদের কতজন প্রাক-করোনা পর্বে দোকানে ফাস্টফুড পিজা বা রাস্তার টং দোকানের ফুচকা খাওয়ার আগে সতর্ক ভাবে হাত ধুয়েছেন? অথচ আমরা, এই মানুষগুলোই যেনো স্বঘোষিত নাগরিক অধিকার ভেবে পথঘাটের যত্রতত্র থুথু আর পানের পিক ফেলে বিমূর্ত চিত্র অংকন করেছি। এবছর ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় করোনা। এর পূর্ববর্তী সময়ের ছবি যদি একবার ফিরে দেখা যায়, তবে সেটা বিশ্বায়ন পরবর্তী প্রভাবে অভ্যস্থ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ছবি। সেই ছবিতে আত্মীয়তা রয়েছে, কিন্তু অবকাশ নেই। দূরত্ব নেই, কিন্তু দৌঁড় রয়েছে। শিশু-কিশোর রয়েছে, কিন্তু শৈশব-কৈশোর নেই। সে ছবিতে সমাজ মুখ্যতঃ সামাজিক বৃত্তের মাধ্যমে বাঁধা। এই পর্যায়ে আট থেকে আশি মূলত সামাজিক মাধ্যমেই মিলেমিশে একাকার। সেই সময়ে সময়, বর্তমান সময়ের নিময়মাফিকই ছিলো। দিন-রাত, সপ্তাহ-মাস এবং বছর কেউ তার নিজস্ব নিয়ম বদলে ফেলেনি। সময় ঠিক নিজের বাঁধাধরা নিয়মে থাকলেও তখন নিজের, প্রিয়জনের আর নিজের পরিবারের জন্য সময় তেমন একটা মিলতো না। ‘সময় নেই’ শব্দবন্ধ তখন মিথ হয়ে গিয়েছিলো বললে এতোটুকু ভুল বলা হবে না। 

সময় যখন নিজেই নিজের আগে দৌঁড়ানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিলো, ঠিক তখনই করোনাভাইরাস এক মুহুর্তে সমস্ত ছবিটাই বদলে দিলো। বারবার অন্তত বিশ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। একান্ত প্রয়োজনে লকডাউন চলাকালীন সময়ে যদি বাসা, বাড়ির বাইরে বেরোতেই হয়, তাহলে নাক-মুখ মাস্ক বা কোনও কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া। সে সময় একজন যেনো অন্যজনের থেকে সামাজিক দূরত্ব, অর্থাৎ নূন্যতম নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখেন ইত্যাদি। ঠিক এখান থেকেই শুরু হয় প্রাক-করোনা পর্বের চিত্রবদল। যদি ধরে নেয়া হয় যে, লকডাউন চলার এই সময়ে যারা বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছেন, তারা সবাই অত্যন্ত সচেতন এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করছেন। তাহলে ঠিক কী চিত্র দেখা যাবে আগামীর বাংলাদেশে? এদের সবারই নাক-মুখ মাস্ক বা রুমাল বা অন্যও কোনও কাপড়ে ঢাকা রয়েছে। তারা বাজারে বা ওষুধের দোকানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন। কেউ কেউ এক ধাপ এগিয়ে। গ্লাভসও পরেছেন। কেউ আরও বেশি এগিয়ে। পিপিই পরে নিয়েছেন। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ‘করোনার টিকা বা কার্যকর চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবন না হওয়া পর্যন্ত এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে হবে।’ লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। হয়তো আরও বাড়ানোর দরকার হতে পারে। সুতরাং এই সতর্ক মানুষরা যে সেই সময় পর্যন্ত এসব সতর্কতা মেনে চলবেন, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। 

গবেষকদের ধারণা, লকডাউন পুরোপুরি উঠে যাবার পর মানুষের দু’টো শ্রেণি তৈরি হবে। সচেতন এবং অসচেতন। যারা অসচেতন, তারা লকডাউন চলার সময় বহুবারই দৃশ্যদূষণ ঘটিয়েছেন। সোজা কথায়, এরা এখনও সতর্ক হতে শেখেননি। কিন্তু এদের তুলনায় সচেতন মানুষের সংখ্যাটা অনেক বেশি হবে। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর তারা কী করবেন? ভীড়ে ঠাসা কোনও বাজার বা হাটের ছবি দেখে অনেকেই এখন আঁতকে উঠছেন। লকডাউন উঠে যাওয়ার পরও বাজার-হাট-দোকানে অনেকেই নিশ্চয় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে চাইবেন। বাংলাদেশে তখনও থাকবে সচেতন, ডিজিটাল প্রযুক্তিবান্ধব আর প্রযুক্তিবিমূখ অসচেতন সেকেলে মানুষ। আশংকা হয়- এই দু’য়ের সংঘাত ভয়ংকর হবে না তো? এই পর্বে ‘সামাজিকতা’ শব্দটাও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারে। শিশু-কিশোর, তাদের লেখাপড়া, খেলাধুলা, শিক্ষক, মা-বাবা বা গুরুজন কাউকে কেউ সালাম, হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি, আদাব, কদমবুচি, প্রণাম জানাতে এলে রীতি ভেঙে তখন কি নিষেধ করতে হবে? বিলাসিতা, বিনোদন, অহেতুক খরচ এগুলো কি আগামী দিনে সত্যিই উঠে যাবে? ধর্মীয় রীতিনীতি, দৈহিক সামাজিক যোগাযোগের পর্ব কি সীমাবদ্ধ হয়ে আসবে? ঈদ, নামাজ, মিলাদ, ওরস, ওয়াজ মাহফিল, পূঁজা-পার্বণ, ইস্টার উৎসব, গির্জার প্রার্থনা, জন্মদিন, বিয়ে, গায়ে হলুদ, বৈশাখ ইত্যদির মতো নানান ধর্মীয় ও সামাজিক হাজারো অনুষ্ঠান বা আমন্ত্রণে অংশগ্রহণ করা নিয়েও রয়ে যায় বিস্তর আশংকাজনক গুরুত্বপূর্ণ অমীমাংসিত জিজ্ঞাসা। 

লকডাউন শিথিল করার প্রথম এবং প্রধান শর্ত সর্বস্তরে র‌্যাপিড টেস্ট। বাংলাদেশে এখন পূর্ণদ্যোমে টেস্ট করার কাজে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো ক’দিন আগে করোনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত কিটসও ছিলোনা বাংলাদেশের হাতে। টেস্টিং কিটস ও পিপিই’র স্বল্পতার কারণে টেস্ট করার গতি ছিলো মন্থর। ভ্যাক্সিন হিরো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্রুত পদক্ষেপের ফলে টেস্টিং কিট, পিপিই আমদানী এবং নমুনা পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। রোগীর সংস্পর্শে আসা সমস্ত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে তাদেরও টেস্ট করার কাজ পালাক্রমে চলছে। এই টেস্ট একদিন ‘জিরো ট্রান্সমিশনে’ পৌঁছবে। আর সেদিন হবে বাংলাদেশের করোনাযুদ্ধ জয়ের দিন। গবেষকদের মতে, ‘যে কোন ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করতে এমনিতেই কিছুদিন সময় লেগে যায়।’ তাই শুধুমাত্র অপেক্ষা আর কটা দিন। সবাই ঘরে থাকলে, সতর্ক হলে বাংলাদেশ উতরে যাবে এই করোনা বিপদ। কেটে যাবে নানাবিধ সমস্যার কালো মেঘের দুর্দিন। ফিরে আসবে সোনালী আলোর ফুরফুরে আগামী দিন। 

করোনাযুদ্ধকে কেন্দ্র করে আজকাল বাংলাদেশের গ্রামের মানুষজন মুখে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া শিখে ফেলেছেন। যা দেখে মুগ্ধ হতে হয়। করোনাযুদ্ধের এ ক’দিনে গড়ে তোলা অভ্যাস যদি ভবিষ্যতেও চালু রাখতে পারি, তাহলে আমাদের সুস্থতা আমরাই অনেকটা নিশ্চিত করতে পারবো। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে জাতিসংঘের দেয়া লক্ষমাত্রা অর্জনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা দেখিয়েছে বর্তমান বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রামীন স্বাস্থ্য-পয়ঃনিষ্কাশন অবকাঠামো ভারতের চেয়ে অনেক উন্নত। অন্যদেশের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের জীবাণূ প্রতিরোধের শক্তি দশগুণ বেশি। এবার করোনাযুদ্ধে নতুন যেসব স্বাস্থ্য সচেতনতার অভ্যাস গড়ে উঠেছে, সেসব অভ্যাস বহাল রাখা গেলে এদেশে অনেক রোগ নির্মূলের পাশাপাশি সামাজিক স¤প্রীতিও বাড়বে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে গড়আয়ু বৃদ্ধিসহ নানাকিছুতে নাটকীয় অগ্রগতি ঘটে যাবে আগামী দিনে। জীবন আর জীবিকার কারণে আজ হোক কাল হোক, লকডাউন উঠে গেলেও নিশ্চয়ই তখন সরকারি সতর্কবার্তা থাকবে। তাতে যদি নিজেদের অনেকটা বদলেও নিতে হয় তা হলেও মেনে নিতে হবে। পরিবেশ ও সময়টা ভিন্নরকম। আমাদের জীবন ও স্বাস্থ্যব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটাতে হবে। আমরা কতদিন এবং কতটা সতর্ক থাকতে পারবো, তার উপর নির্ধারিত হবে আমাদের ভবিষ্যৎ। তাই সমাজ সচল রাখতে নতুনভাবে বাঁচার পথ অনুসন্ধানের জন্য বাংলার মানুষকে প্রস্তুত হতে হবে এখনই।

লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

লেখকদের নামঃ