দিল্লিতে যা ঘটছে তা ‘দাঙ্গা’ নয়

প্রকাশ | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৪:১৪

আলী রীয়াজ

দিল্লিতে যা ঘটছে তা ‘দাঙ্গা’ নয়, একে যারা দাঙ্গা বলছেন তারা ইচ্ছায় বা অজ্ঞতাবশত ভারতের গেরুয়া বাহিনীর ভাষ্যকার হচ্ছেন| একে ’সিএএ-বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষ’ বলতে আমি নারাজ| যা ঘটছে তা হচ্ছে রাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট গেরুয়া সন্ত্রাসী আক্রমণ-মুসলিম জনগোষ্ঠী তার প্রথম লক্ষ্যবস্ত কিন্তু একমাত্র লক্ষ্যবস্ত নয়| আগামীতে অন্যরাও আক্রান্ত হবেন| লক্ষ্যবস্ত হচ্ছে বহুত্ববাদী ভারত|

দিল্লিতে হামলা ও হত্যাকান্ড হিন্দু রাষ্ট্র তৈরির পর্যায়ক্রমিক পদক্ষেপের একটি| ৩৭০ ধারা বাতিল, এনআরসি, সিএএ- এগুলো হচ্ছে সেই পদক্ষেপের অংশ; তারই ধারাবাহিকতায় ভারতের নাগরিকদের মধ্যে যারা বহুত্ববাদে বিশ্বাসী তাদের বিরুদ্ধে এখন সশস্ত্রদের লেলিয়ে দেয়া হয়েছে, পুলিশ গেরুয়া বাহিনীর সঙ্গেই আছে|

দিল্লির নির্বাচনে প্রত্যাখ্যাত হয়ে জিঘাংসায় মত্ত বিজেপি ও সংঘ পরিবার এখন দেখাতে চাইছে শক্তির প্রয়োগেই তারা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে| যে কোনো বাধাকে তারা বল দিয়ে মোকাবেলা করবে| সারা দেশে গত নির্বাচন পাওয়া সাঁইত্রিশ শতাংশ ভোটের জোর নয়, বিজেপি এখন আদর্শিক ফ্যানাটিকদের ওপরেই নির্ভরশীল; তাদেরকেই লেলিয়ে দিয়েছে|

দিল্লির কেজরিওয়াল প্রশাসনের ভূমিকা এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে| গত কয়েকমাসে ভারতের নাগরিকদের এক বড় অংশ যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন, দিল্লিতে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকছেন - রাজপথে থাকছেন তাদের এই অসম সাহসিকতাকে শুভেচ্ছা| দিল্লিতে হত্যাকাণ্ডের রক্তের দাগ লেগে আছে মোদির হাতে-তাকে যারাই বুকে টেনে নিচ্ছেন, ট্রাম্পের মতো যারা তাকে জড়িয়ে ধরছেন/ আগামীতে ধরবেন তাদেরকেও এই হত্যার দায় নিতে হবে|

মনে রাখা দরকার যে, এই লড়াই কেবল ভারতের নাগরিকদের নয়-এর ভবিষ্যতের সংগে দক্ষিণএশিয়ার দেশগুলোর নাগরিকদের স্বার্থ জড়িত| ভারতে হিন্দুত্ববাদী মোদীর উত্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ার অপরাপর দেশের ওপরে ভারতের আচরণের প্রভাব পড়েছে, পড়ছে এবং পড়তে থাকবে| সেই কারণেই এই লড়াইয়ের পক্ষে দাঁড়ানো, সহমর্মিতা প্রকাশ এবং ভবিষ্যতে মোদী এবং সঙ্ঘ পরিবারের উপস্থতিতেই প্রতিবাদ জানানোর জন্যে প্রস্ততি দরকার|

আলী রীয়াজ, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির (আইএসইউ) রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক।