চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ভাবনা

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ১৩:৪৩

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বা 4th Industrial Revolution বিষয়টি নিয়ে আলোচনাগুলো নিবিড়ভাবে খেয়াল করছি। বিভিন্ন জন বিভিন্ন আঙ্গিকে ব্যখ্যা করছেন; সেমিনার হচ্ছে, কর্মশালা হচ্ছে। ভবিষ্যতের পেশা নিয়ে চুলচেরা আলোচনা- সমালোচনা চলছে। উদ্বৃত্ত জনসংখ্যার আমাদের এই দেশে কোন পেশাটি থাকবে আর কোনটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে সেটা নিয়ে হইচই চলছে জোড়ালো ভাবে। 

কাছাকাছি এইরকম শোরগোলের মধ্যে এর আগে আরেক বার পড়েছিলাম, যখন টেলিকমে সার্কিট সুইচিং থেকে প্যাকেট সুইচিং চালু হল; IPV4 থেকে IPV6... বলা হতে থাকল (তখনকার চিন্তায়) ভবিষ্যতের সব আইপি বেজড যন্ত্রপাতির কথা, মোবাইলের সর্বগ্রাসী সম্ভাবনার কথা। গৃহস্থালিতে সোস্যাল মিডিয়া, IoT, AI সবকিছুই তখন ছিল অলীক স্বপ্ন, যা আজকের নির্মম বাস্তবতা। সে কারনেই অভিজ্ঞতা থেকে যেটা বুঝি, সেটা হলোঃ আজকের কল্পনা নিশ্চিতরূপেই আগামীকালের কঠিন বাস্তবতা।

আজও এদেশের অধিকাংশ মানুষের চোখে জীবিকা ভাবনায় ফলিত বিজ্ঞান হলো মেধাবীদের মূল যায়গা। সবচেয়ে ভালো ছাত্ররা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। তারপরের সারি তাত্ত্বিক বিজ্ঞানে, তারও পরের সারি ব্যবসা-বানিজ্যে, আর সাধারণত সব শেষের সারি যায় মানবিক বিষয়ে। প্রথাগতভাবে প্রথম শ্রেণির এই মানুষগুলো এখনও অতিমানবিক অত্মম্ভরিতায় ভোগে। 

আমি দিব্যদৃষ্টিতে দেখছি- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে প্রচলিত এই চিত্র একেবারেই পরিবর্তিত হয়ে যাবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা- আজকের প্রকৌশল, সাধারণ চিকিৎসা, রুটিন সার্জারী কিংবা ব্যাংক ব্যবস্থার রুটিন কাজ গুলো একেবারে নিজ আয়ত্বে নিয়ে নেবে। মুদ্রা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। যন্ত্র পারবে না, মানুষের দরকার হবে মানবিকতাপূর্ণ পেশাগুলোতে। আরও নিদ্রিষ্টভাবে বললে মানবিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে- দর্শন, মানবিক বিচার ব্যবস্থা এবং সৃষ্টিশীল মানবিকতায় মেধাবী মানুষের প্রয়োজন হবে। অংক আবেগতাড়িত যে বিষয়গুলির হিসেব মেলাতে পারবে না সেখানেই মূল মেধাবী মানুষদের চাহিদা তৈরী হতে থাকবে। সে হিসেবে সেবিকা, মনোবিদ, শিল্পী, সাহিত্য এবং কলাবিদদের সুবর্ণ সময় সামনে। এক কথায় সামনের দিন গুলি হবে প্রকৃত মানবিকতা সমৃদ্ধ মানুষদের। যন্ত্র দিয়ে আপনি সব সেবাই পাবেন- শান্তনা পাবেন না, যান্ত্রিক যুক্তি দানবিক হবে, কিন্তু মানবিক হবে না! তাই সময় এখন- যুক্তি সমন্বয়ী আবেগী মানুষদের। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে- সময় এখন বিনা কারণেই যে মুখ গুলো হাসিতে ভরে থাকে তাঁদের! লাভ-ক্ষতির হিসেব ছাড়াই যে মানুষটি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটি কুকুরের উদ্ধার তৎপরতায় মাতে, নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়, সময় এখন শুধুই তাঁদের!

আপনি বোকাদের এই দলে আসবেন? না, কৃত্রিম বুদ্ধিমান যন্ত্র হবেন; সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার!

লেখক: সহ-সভাপতি, ওপেন একসেস বাংলাদেশ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত