তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রের সম্পত্তি বেদখল!

প্রকাশ | ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১২:১৯

ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলায় কুমার নদের পাশে ছোট্ট একটি গ্রাম, নাম বাগুটিয়া। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ জানে না তাদেরই গ্রামের একটি পরিবারে জন্মগ্রহন করেছিলেন এমন একজন বিপ্লবী যাকে নিয়ে গর্ব করে সমগ্র ভারত উপমহাদেশ। যিনি অধিকার বঞ্চিত গণমানুষের বিপ্লব ও সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস। যার পর্বপুরুষের বসত ভিটে এখনো রয়েছে এই গ্রামে। গ্রামের মানুষ শুধু জানেন বাড়িটি এক সংগ্রামী মানুষের। তবে অধিকাংশ মানুষই জানে না বাড়িটির আসল ইতিহাস।

গ্রামের একপ্রান্তে কাঁচা রাস্তার পাশে চুন-সুড়কি দিয়ে গাথা ৯ রুমের পুরাতন একটি দ্বিতল বাড়ি। এলাকাবাসী জানেন বাড়িটি হিন্দু সম্প্রদায়ের কারো ছিল, এখন কিয়ামউদ্দিনের ছেলেরা বসবাস করেন। তারা কিভাবে মালিক হয়েছেন তা কেউ বলতে পারেন না। সেই সংগ্রামী মানুষটি হচ্ছেন তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী, সংগ্রামী নারী, নাচোলের রানী ইলা মিত্র। আজ ১৩ অক্টোবর তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী। শৈলকুপা উপজেলার বাগুটিয়া গ্রামে রয়েছে ইলা মিত্রের পৈত্রিক বাড়ি।

ইলা মিত্র জীবনের প্রথম দিকে কৃতী ক্রীড়াবিদ হিসেবে ভারতবর্ষে পরিচিতি অর্জন করেন। একটানা তিন বছর জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সের বাংলা চ্যাম্পিয়ন ছিলেন তিনি। বেথুন কলেজ থেকে আইএ, বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাস করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি বামপন্থি সংগঠন ছাত্র ফেডারেশন, মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি ও কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। চল্লিশের দশকে তেভাগা আন্দোলনে কৃষকদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে ইলা মিত্র রাজশাহীর নাচোল অঞ্চলে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেন। সাঁওতাল ও কৃষকদের কাছে তিনি ছিলেন ‘রানী মা’। কৃষক বিদ্রোহ সংগঠিত করার জন্য পাকিস্তান সরকারের হাতে নির্যাতিত হতে হয় এবং তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তেভাগা আন্দোলনের ইতিহাস জানতে হলে সেকালের ভূমি ব্যবস্থা বিষয়ে আগে জানা প্রয়োজন। বাংলার গ্রামীণ সমাজে বৃটিশ শাসনের আগ পর্যন্ত ভূমির মালিক ছিলেন চাষিরা। মোগল আমল পর্যন্ত তারা এক তৃতীয়াংশ বা কখনো কখনো তার চেয়েও কম ফসল খাজনা হিসাবে জমিদার বা স্থানীয় শাসনকর্তার মাধ্যমে রাষ্ট্রকে প্রদান করতেন। বৃটিশ শাসনামলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা প্রচলিত হয়। এর ফলে চাষিদের জমির মালিকানা চলে যায় জমিদারদের হাতে। জমিদাররা জমির পরিমাণ ও উর্বরতা অনুযায়ী বৃটিশদের খাজনা দিত। জমিদারদের সাথে ফসল উৎপাদনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। এ সময় জমিদার ও কৃষকদের মাঝখানে জোতদার নামে মধ্যস্বত্বভোগী একটি শ্রেণির লোক পত্তনি প্রথার মাধ্যমে জমিদারদের কাছ থেকে জমি পত্তন বা ইজারা নিত। এই জোতদার শ্রেণি কৃষকের জমি চাষ তদারকি ও খাজনা আদায়ের কাজ করতো। ফসল উত্‍পাদনের সম্পূর্ণ খরচ কৃষকেরা বহন করলেও যেহেতু তারা জমির মালিক নন সে অপরাধে উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক তুলে দিতে হতো জোতদারদের হাতে। এ ব্যবস্থাকে বলা হতো 'আধিয়ারী'।

জোতদারি ও জমিদারি প্রথা ক্ষুদ্র কৃষকদের শোষণের সুযোগ করে দেয়। খাজনা আদায়ের জন্য জোতদাররা এদেরকে দাসের মতো ব্যবহার করে। উৎপন্ন ফসলের পরিবর্তে একসময় কৃষককে বাধ্য করা হয় অর্থ দিয়ে খাজনা পরিশোধ করতে। ফলে কৃষকেরা গ্রামীণ মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হন। সর্বস্বান্ত হয়ে এক সময়ের সমৃদ্ধ বাংলার কৃষক পরিণত হন আধিয়ার আর ক্ষেত মজুরে।

জমিদার-জোতদারদের এই শোষণ কৃষকের মনে বিক্ষোভের জন্ম দেয়। এই বিক্ষোভকে সংগঠিত করে ১৯৩৬ সালে গঠিত হয় 'সর্ব ভারতীয় কৃষক সমিতি'। ১৯৪০ সালে ফজলুল হক মন্ত্রিসভার উদ্যোগে বাংলার ভূমি ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব দেয় 'ফ্লাউড কমিশন'। এই কমিশনের সুপারিশ ছিল জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ করে চাষিদের সরাসরি সরকারের প্রজ্ঞা করা এবং তাদের উৎপাদিত ফসলের তিনভাগের দুইভাগের মালিকানা প্রদান করা। এই সুপারিশ বাস্তবায়নের আন্দোলনের জন্য কৃষক সমাজ ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। এছাড়া জনসাধারণের কাছ থেকে হাটের 'তোলা' ও 'লেখাই' সহ নানা কর আদায় করা হতো। এসব বন্ধের জন্য আন্দোলন জোরদার হয়।

এদিকে যশোর, দিনাজপুর, রংপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ, চব্বিশ পরগণা, খুলনাসহ মোট ১৯টি জেলায় আন্দোলন আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়লেও তীব্র হয়ে ওঠেনি পূর্ববাংলায়। অনেক ভূমিমালিক স্বেচ্ছায় কৃষকদের তেভাগা অধিকার দিতে রাজি হন। ১৯৪৮-৫০ সালে দ্বিতীয় দফায় তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়। পাকিস্তান সরকার আর পাঁচটা আন্দোলনের মতোই তেভাগা আন্দোলনকেও ভারতের ষড়যন্ত্র বলে খেতাব দেয়। ইলা মিত্র ছিলেন এই সময়ের প্রধান পথ প্রদর্শকদের একজন। ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে কৃষক আন্দোলন জোরদার হয়। কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কমিউনিস্ট নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে অত্যাচার-নিপীড়ন চালানো হয়। এজন্য ইলা মিত্র ও তার স্বামীকে আত্মগোপনে থাকতে হয়।

১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ইলা মিত্র ও রমেন মিত্র। ছত্র ভঙ্গ কৃষকদের সংগঠিত করতে ইলা মিত্র ছুটে যান গ্রাম থেকে গ্রামে। ১৫০ জন কৃষককে পুলিশ হত্যা করে। নাচোল কৃষক আন্দোলন চিরতরে বন্ধ করে দিতে শাসকগোষ্ঠী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। ইলা মিত্রের একনিষ্ঠ আত্মত্যাগের ফলে সাঁওতালদের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে উঠে। তিনি তাদের প্রতিরোধের প্রশিক্ষণ দেন। শাসক গোষ্ঠী যখন সাঁওতাল অধ্যুষিত চণ্ডিগড় গ্রামকে লক্ষ্য করে ১৯৫০ সালে অভিযান শুরু করে, তখন ইলা মিত্র সেখানেই ছিলেন। তেভাগার বিদ্রোহীরা এ গ্রামে লুকিয়ে আছে এমন খবর পেয়ে ১৯৫০ সালের ৫ জানুয়ারি পুলিশ গ্রামে হানা দিয়ে তেভাগা আন্দোলনে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার করতে আসে দুজন কৃষককে। কিন্তু তখন সারা গ্রামেই জ্বলছে বিদ্রোহের আগুন। গ্রামের কৃষকদের ভয় দেখাতে গুলি ছুঁড়লে মৃত্যু হয় এক কৃষকের। উত্তেজিত গ্রামবাসী হত্যা করে ৬ জন পুলিশকে।

শুধু এরকম একটি ঘটনার অপেক্ষাতেই ওৎ পেতে বসেছিল যেন সরকার। পুলিশ মিলিটারী মিলে ৭ জানুয়ারি গ্রাম ঘেরাও করা হয়, শেষমুহুর্তে দলবলসহ ধরা পড়ে যান ইলা মিত্র। গ্রেফতার করার পর তার উপরে চলে পাশবিক নির্যাতন। এমনকি গণধর্ষণও বাদ যায়নি। ইলা মিত্রের জবানবন্দি বইটিতে ইলা মিত্র বলেছেন-

“প্রচণ্ড তর্জন গর্জনে শব্দ শুনে চমকে উঠলাম, চেয়ে দেখি, হরেককে দলের মধ্য থেকে মারতে মারতে বার করে নিয়ে আসছে। ওদের মুখে সেই একই প্রশ্ন, বল, ইলা মিত্র সে-ই পুলিশদের হত্যা করবার আদেশ দিয়েছিল। না বললে মেরে ফেলব, একদম মেরে ফেলব। আমি চেয়ে আছি হরেকের মুখের দিকে। অদ্ভুত ভাববিকারহীন একখানি মুখ। অর্থহীন দৃষ্টিতে শূন্যপানে তাকিয়ে আছে। ওদের এতসব কথা যেন ওর কানেই যাচ্ছে না। ক্ষেপে উঠল ওরা। কয়েকজন মিলে ওকে মাটিতে পেড়ে ফেলল। তারপর বুট দিয়ে বুকে পেটে সজোরে লাথি মেরে চলল… আমাদের ছেড়ে চলে গেছে হরেক। আর কোনোদিন ফিরে আসবে না। একটু আগেই আমি কেঁদেছিলাম। কিন্তু এখন আমার সমস্ত কান্না শুকিয়ে গেছে। তার পরিবর্তে ভিতর থেকে প্রচণ্ড একটা জেদ মাথা তুলে জেগে উঠেছে। আমার মন বলছে, মারুক, মারুক, ওরা আমাকেও এমনি করে মারুক। আর মনে হচ্ছে, এই যে আমাদের কয়েকশো সাথী এদের কাউকে দিয়ে ওরা কথা বলাতে পারবে না, কিছুতেই না। ওদের হার হয়েছে। ওদের হার মানতে হবে।”

অস্ত্রে সজ্জিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে তীর ধনুকে সজ্জিত সাঁওতাল, হিন্দু ও মুসলিম কৃষকদের বেশিক্ষণ যুদ্ধ চালানো সম্ভব ছিল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রামবাসী পিছপা হতে শুরু করেন। যে যেদিক পারলেন গা ঢাকা দিলেন। গ্রামবাসী সরে যাওয়ার পর আন্ডার গ্রাউন্ডের নেতাদের অবস্থান বের করা সহজ হয়ে যায়। রমেন্দ্র মিত্র ও মাতলা মাঝি পালিয়ে ভারতে চলে যান।

ইলা মিত্র ৭ জানুয়ারি সাঁওতাল বেশ ধারণ করে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ভারত সীমানা পার হওয়ার প্রস্তুতিকালে ইলা মিত্র ও তাঁর সঙ্গীরা রোহনপুর রেলওয়ে স্টেশনে ধরা পড়ে যান। তাঁদের ধরে আনা হয় নাচোল স্টেশনে। পুলিশ শুরু করে পাশবিক অত্যাচার। ইলা মিত্র ও তাঁর সাথীদের উপর্যুপরি নির্যাতন চালানো হচ্ছিলো। কারণ যেভাবেই হোক স্বীকার করাতে হবে পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবল হত্যার পিছনে তাঁদের ইন্ধন ও পরিকল্পনা ছিল। নাচোল স্টেশনে ইলা মিত্রর সাথীদের মধ্যে আনুমানিক ৫০ থেকে ১০০ জন পুলিশী নির্যাতনে সেসময় মারা যান।

ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আজো ইলা মিত্রের বাড়িটি দাঁড়িয়ে থাকলেও রয়েছে বে-দখল অবস্থায়। ভেঙে পড়তে শুরু করেছে ইটের গাথুনিগুলো। চওড়া দেয়ালে ঘেরা প্রাচীরের অনেক অংশ ভেঙে ফেলেছে দখলদাররা। শুধু বাড়ি নয়, দখল করা হয়েছে বাবা নগেন্দ্রনাথ সেনের রেখে যাওয়া শত শত বিঘা জমি। সরকারের খাতায় এগুলো ভিপি তালিকাভুক্ত হলেও বাস্তবে এলাকার প্রভাবশালীদের দখলে।

ইলা মিত্র বাংলাদেশের কিংবদন্তী নারী। বাবা নগেন্দ্রনাথ সেনের চাকরির সুবাদে ইলা সেনের জন্ম কলকাতায়। ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা নগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন বেঙ্গলের ডেপুটি অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল। মা মনোরমা সেন গৃহিনী।

ঝিনাইদহের বাগুটিয়া গ্রাম তাদের পৈত্রিক নিবাস। ইলা মিত্রের জন্ম কলকাতায় হলেও ছোট বেলায় তিনি বেশ কয়েকবার বাগুটিয়া গ্রামে এসেছেন। ১৯৪৫ সালে চাপাইনবাবগঞ্জের রামচন্দ্রপুরের জমিদার বাড়ির রমেন্দ্রনাথ মিত্র’র সঙ্গে ইলা সেনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার নাম হয় ইলা মিত্র।

ইলা মিত্রের রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, ১৯৪৩ সাল থেকে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত চাপাইনবাবগঞ্জের নাচোল অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এই আন্দোলনের সময় তার ওপর পাকিস্তান সরকারের পুলিশ বাহিনী অমানবিক নির্যাতন চালায়।

১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন। এরপর প্যারোলে মুক্তি পেয়ে কলকাতায় চলে যান। তিনি কলকাতার বিভিন্ন রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। কলকাতার মানিকতলা নির্বাচনী এলাকা থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হন। কর্মজীবনে তিনি কলকাতা সিটি কলেজের বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে ১৯৮৯ সালে অবসর নেন।

ইলা মিত্রের পৈত্রিক বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় পুরাতন আমলেন নিদর্শন চুন-সুড়কির তৈরি দ্বিতল বাড়িতে বসবাস করছেন হাজি কিয়ামউদ্দিনের তিন সন্তান। বড় ছেলে আলী হোসেন জানান, তারা বাগুটিয়া ১১৬ নং মৌজার ২৩৪৫ দাগের জমির উপর বাড়িটিসহ ৮৪ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। বাবা হাজি কিয়ামউদ্দিন বহু আগে ইলা মিত্রের বাবা নগেন্দ্রনাথ সেনের শাশুড়ি সরোদিনি সেনের কাছ থেকে এই জমি ক্রয় করেন। সরোদিনি সেন কিভাবে এই জমির মালিক হলেন তা তিনি বলতে পারেন না বলে জানান। তিনি ছাড়াও তার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুর রশিদ ও রাশিদুল ইসলামের পরিবার এখানে বসবাস করেন। মূল ঘরটির পাঁচটি রুম ব্যবহার করা যায়। সেগুলো ভায়েরা ভাগ করে নিয়েছেন। বাকি রুমগুলো নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।

কিংবদন্তী নারী ইলার শৈশব কৈশোর সময় পার করা বাগুটিয়া, গোপালপুর, শেখরা, রঘুনন্দপুর, শাহাবাজপুরসহ কয়েকটি গ্রামে। তাঁর বাবা নগেন্দ্রনাথ সেন, মা মনোরমা সেন, দাদা রাজমোহন সেনের নামে রয়েছে কয়েকশ’ বিঘা জমি। এসব ভিপি সম্পত্তি হিসাবে সরকারি খাতায় থাকলেও তার সবটুকুই এখন বে-দখল। তবে ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা জানান এসব সম্পত্তির ব্যাপারে সেটেলমেন্ট অফিসে আপত্তি ও দুই শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। ইলা মিত্রের পরিবার সম্পর্কে ওই গ্রামের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম জানান, তারা শুনেছেন নগেন্দ্রনাথ সেন নামে এক ব্যক্তি তাদের এলাকার ছোট-খাটো জমিদার ছিলেন। বাগুটিয়াসহ পাশ্ববর্তী কয়েকটি মৌজায় ইলা মিত্রের বাবা নগেন্দ্রনাথ সেনের অঢেল জমি ছিল। যা বর্তমানে এলাকার প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে।

কিয়াম উদ্দিন ছাড়াও আমিনুল ইসলামের দখলে রয়েছে ওই নগেন্দ্রনাথ সেনের সিংহভাগ জমি। তবে তিনি যে ইলা মিত্রের বাবা ছিলেন এটা তারা জানতেন না। তার দাবি বাড়িটি যদি ইলা মিত্রের হয় তাহলে এটি সংরক্ষণ করা জরুরি। কারণ এটা রক্ষা হলে এক কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাস রক্ষা হবে।

নতুন প্রজন্মের মানুষের কাছে ইলা মিত্র ও এই অঞ্চলের ইতিহাস তুলে ধরা উচিত। এর জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।বাগুটিয়াসহ পাশবর্তী বেশ কয়েকটি মৌজায় জনৈক নগেন্দ্রনাথ সেন, তার স্ত্রী মনোরমা সেন, পুত্র নৃপেন্দ্রনাথ সেন নামীয় বেশ কিছু জমি ১৯৬৫ সালের ভিপি তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে পুরাতন ওই ভবনটিও রয়েছে।

২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর বাংলার এই মহিয়সী নারী কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। ইলা মিত্রের অসাধারণ সাহসী ও সংগ্রামী জীবন বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার প্রগতিশীল মানুষের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস। বাংলার শোষিত ও বঞ্চিত কৃষকের অধিকার আদায়ে এগিয়ে এসেছিলেন যিনি তিনি ইলা মিত্র, বাংলার কৃষকের রাণীমা। অভাবী আর বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে বিসর্জন দিয়েছিলেন নিজের জীবনের সব সুখ আর স্বাচ্ছন্দ্য। তবু নিজের আদর্শ থেকে পিছপা হননি এতটুকু। সংগ্রামী এই নারী আমৃত্যু লড়াই করেছেন সাধারণ মানুষের জন্য।