ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮

নাগরিকদের উপর চাপিয়ে দেয়া একটি কালো আইন

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৮:৩৮

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীপরিষদ। ‘এই আইনের আওতায় কেউ যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনও ধরনের প্রপাগান্ডা চালান, তাহলে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। 

২৮ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি ধর্মীয় বোধ ও অনুভূতিতে আঘাত করে, তাহলে ১০ বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

এ আইনের ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রবেশ করে কোনও ধরনের তথ্য উপাত্ত, যেকোনও ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি দিয়ে গোপনে রেকর্ড করে, তাহলে সেটা গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হবে এবং এ অপরাধে ১৪ বছর কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডর বিধান রাখা হয়েছে।

অনুভূতি ও বিবেচনাবোধ মাপার মাপকাঠি কি? এ মাপকাঠি নির্ধারণের দায় কার হাতে? আইন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা যাবে? নাকি তা শিক্ষা ও সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিতে জাগরুক করতে হবে?

রাজনৈতিক নেতারা পীর - পয়গম্বর নন যে তাঁদের নামে আলোচনা ও সমালোচনা করা যাবে না। মুক্ত সমাজে আলোচনা ও বাক বিতণ্ডার মধ্য দিয়েই ইতিহাসের গতিপথ নির্ধারিত হবে। এর ব্যত্যয় ঘটানো মানেই হচ্ছে ইতিহাসের নির্মোহ সমালোচনাকে এড়িয়ে যাওয়া ও তার পথ রুব্ধ করা, এটি অন্যায়।

ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে এ সরকারের মধ্যে এক ধরণের অস্বস্তি কাজ করছে, মোল্লাতন্ত্র একটু নড়ে চড়ে বসলেই সরকার দাওয়াতের কার্ড নিয়ে কাঠমোল্লাদের আস্তানায় দৌঁড়ায়।

দর্শন, অর্থনীতি, সমাজ ও রাজনীতির যে কোন চর্চাতেই ধর্মের আলোচনা ও সমালোচনাকে এখন মোল্লতন্ত্রের হাতে সঁপে দেয়া হলো। আদতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মোল্লাতন্ত্রের বাড় বাড়ন্ত করবে।

রাজনৈতিকভাবে মোল্লাতন্ত্র এ আইনটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের উপর প্রয়োগ করবে। ক্ষেত্র বিশেষে এ আইনটি ক্ষমতাসীনরাও বামপন্থীদের উপর প্রয়োগ করবে।

সরকারের অথর্ব আমলাতন্ত্রের কার্যকলাপ কোন ব্যক্তি রেকর্ড করলেই তাঁকে ফাঁসিয়ে দেয়া যাবে। সরকারি অফিসগুলোতে হাজার হাজার লোক নিজেদের কাজকর্মের জন্য যায়, সেখানে নানা অনিয়মের কায়কারবার যদি কেউ হাতের মোবাইলে ধারণ করে তা গুপ্তচরবৃত্তি হবে কি? এ উদ্ভট বুদ্ধির যোগানদাতা কে?

জনতার স্বার্থে প্রতিকার পাবার জন্য দৃশ্যধারণ করলে ১৪ বছরের জেল! গত ৪৫ বছরে এ দেশের আমজনতাকে এই রকম তুঘলকি আইনের বেড়ী না পরানোর ফলে কত তথ্য পাচার হয়েছে দেশের, কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে দেশের? ক্ষমতাসীনরা আমাদের মত আমজনতাকে তা জানাবেন কি?

এ ধারাটি দিয়ে আমলা - গামলাতন্ত্রকে আরও বেশী উদরপূর্তির ব্যবস্থা করা হলো। একই সাথে আমলাতন্ত্রকে শক্তিশালী একটি হাতিয়ার উপহার দেয়া হলো জনতাকে নিপীড়নের জন্য।

৫৭ ধারার পরিবর্তে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ আরও কঠিন করা হলো। ইন্টারনেটের বিস্তৃতিতে সহায়তার জন্য সরকার কোথায় উদার ও মানবিক আইন তৈরী করবে তা না করে দেশের নাগরিকদের উপর একটি কালো আইন চাপিয়ে দিলো!

আওয়ামী লীগ বরাবরই কালো আইন পছন্দ করে, ১৯৭৪-এ বিশেষ ক্ষমতা আইন, এবার ক্ষমতায় বসে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ৫৭ ধারা যোগ করা, এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮'এর নামে আরও একটি কালো ও জবরদস্তিমূলক আইন জাতির উপর চাপালো।

ক্ষমতাসীনদের বুব্ধির মুক্তির চর্চা ও মুক্তচিন্তা রুব্ধ করার এ সমস্ত কালো আইন বানানো ও প্রয়োগের নিন্দা এবং ধিক্কার জানাই।

লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত