ভুল কসমেটিকস ব্যবহারে ত্বকের ক্ষতি

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩, ১৬:৪৩

ফয়জুন্নেসা মণি
প্রসাধনী ব্যবহারে সদা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে

আমরা সবাই দৈনন্দিন প্রয়োজনে নিজেদের পছন্দমত কিছু না কিছু কসমেটিকস ব্যবহার করে থাকি। অনেকে হয়ত বছরের পর বছর ধরে একই কসমেটিক্স ব্যবহার করেন কিন্তু এগুলোর কার্যকারিতার ব্যাপারে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। ফলে প্রকারান্তরে আমরা অর্থের অপচয় করি ও ত্বকের ধ্বংস ডেকে আনি। 

সতের বছর বয়স থেকে যে ক্লিনজার, টোনার ও ময়েশ্চারাইজার জাতীয় প্রসাধনী দৈনিক দু’বার ব্যবহার করা হয়েছে এখন আর এই বয়সে সেটা কাজ করছে না এবং মুখমন্ডলের রেখা প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। 

ত্বক নিষ্প্রভ ও মলিন হয়ে যাচ্ছে, সম্ভবত ভুল ময়েশ্চারাইজার অথবা বিভিন্ন কসমেটিক্স ব্যবহার করার কারণে। অনেক সময় দেখা যায় কোন কোন মহিলা একই কসমেটিক্স সবসময় ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। যেহেতু তারা নির্দিষ্ট ময়েশ্চারাইজারের সুগন্ধ ভালবাসেন, তাই অভ্যাস হয়ে গেছে। 

বিশ থেকে ত্রিশ বছর বয়সের সময় ত্বক খুব টানটান এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা শক্তি খুব সক্রিয় থাকে। তাছাড়া তৈলগ্রন্থি ও ঘর্ম নিঃসরণ গ্রন্থিগুলোও খুব সক্রিয় অবস্থায় বিরাজমান থাকে। এই সময় অনেকের মধ্যে সাবান দিয়ে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করার প্রবণতা দেখা যায়। তাই ভালো হয় যদি এই সময় ফোম জেল জাতীয় ক্লিনজার ব্যবহার করা যায়, কারণ এগুলো রুক্ষ নয়। 

অথবা কমপক্ষে যেগুলোর উপর লেবেল আটা আছে যে, ফেসিয়াল, ক্লিনজিং বার ইত্যাদি। এগুলো মুখ পরিষ্কারক কিন্তু সাবানমুক্ত। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের তেল উৎপাদন ও নিঃসরণ কমতে থাকে এবং এই সময় বেশী সাবান ব্যবহারে ত্বকের ক্ষতি হয়। বেশীরভাগ সাবান ক্ষারধর্মী। তাই এগুলো ধুলে সহজে পরিষ্কার হয় না এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে তার কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। 

বেশীরভাগ নারী-পুরুষ এখনও জানে না সঠিকভাবে ত্বক কিভাবে পরিষ্কার করতে হয়। আমরা অনেকেই তুলো দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করি। তবে এতে ক্লিনজার পদার্থের অবশিষ্টাংশ ত্বকে থেকে যেতে পারে। ক্লিনজিং পরিষ্কারের আদর্শ হচ্ছে বাচ্চাদের ন্যাপকিন অর্ধেক কেটে গরম পানিতে চুবিয়ে তারপর ব্যবহার করা। 

এই প্রক্রিয়া তিনবার করা যেতে পারে। যখন ত্বক উষ্ণ থাকবে তখন এই ন্যাপকিন টুকরো দিয়ে মুখের ত্বকের যে সকল অংশে মরা কোষ বা চামড়া দেখা যাবে বিশেষ করে নাকের ভাঁজে, চিবুকে যেখানে মরা কোষ বেশী জমা হতে পারে, সেই সকল স্থানে শেষবার ঠান্ডা পানিতে ডুবিয়ে মুখে ব্যবহার করবেন। প্রতিদিন এভাবে ব্যবহার করলে ত্বকের মরা কোষ দূরীকরণে আলাদা আর কোন ব্যবস্থা নেয়ার দরকার হয় না।

সঠিক ময়েশ্চারাইজার বেছে নিনঃ ময়েশ্চারাইজার নির্বাচনের পূর্বে প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে এমন কসমেটিক্স বেছে নেয়া যা আপনার ত্বকের জন্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে। এক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজারে ব্যবহৃত ফর্মূলা গৌণ। 

সকালবেলা ব্যবহারের জন্য ময়েশ্চারাইজারের প্রধান গুণ হচ্ছে যে, এক্ষেত্রে যেন রৌদ্র থেকে সুরক্ষাকারী সঠিক উপাদান অবশ্যই থাকে। কিন্তু শুষ্ক ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজারে যেন পর্যাপ্ত তেল অথবা ফ্যাট থাকে। এগলো গালে, কপালে এবং চোখের চারিপার্শ্বে ব্যবহার করতে হয়। চোখে যাতে কোনরকম জ্বালা বা ইরিটেশন না হয় সেজন্য বিশেষ আইক্রিম ব্যবহার করা দরকার। 

আপনার ত্বক তৈলাক্ত হলে হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে উপকার হতে পারে। এজন্য চোখের চারিপার্শ্বে, গালের কিনারায় ও গলায় ব্যবহার করবেন। 

তৈলমুক্ত এবং ব্রণ সৃষ্টি করবে না এমন ময়েশ্চারাইজার ত্বকের শুষ্ক এলাকায় ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু ত্বকের পরিবর্তন হচ্ছে, সুতরাং ময়েশ্চারাইজারেরও পরিবর্তন করতে হবে এবং মুখের বিভিন্ন অংশেও পরিবর্তন করা দরকার। যাদের ত্বক শুষ্ক তাদের ক্ষেত্রে চিবুক ও নাকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।

মওসুমী আবহাওয়ার সাথে প্রসাধন বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ভ‚মিকাও বিবেচনায় আনা উচিত। যেমন শীতকালে বিভিন্ন ধরনের ত্বকের বেলায় হালকা মাত্রার দিকে যেতে হবে। যেসব মহিলার ত্বক তৈলাক্ত তারা শুষ্ক ত্বকের জন্য ব্যবহৃত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন এবং এভাবেই হালকা মাত্রার দিকে যেতে হবে। 

অন্যদিকে গ্রীষ্মকালে যখন বাতাসে আর্দ্রতা বেশী থাকে তখন হালকা মাত্রার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। তবে যেন কমপক্ষে সানস্ক্রিণে ঝচঋ-১৫ অবশ্যই থাকে। বয়স যখন ত্রিশের কোঠায় পৌঁছায় তখন ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা শক্তি কমে যায়। তার ফলে মুখে বলিরেখা ও কুঞ্চন দেখা দিতে শুরু করে। 

তাই এই সময়ে বয়সের ছাপ নিরোধক প্রসাধনী ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই সময় অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত