যন্ত্রের যত্নআত্মি

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩, ১৩:২৫

ফয়জুন্নেসা মণি


* টেলিভিশন কখনোই পরিষ্কার করতে গিয়ে টিভির পিছনের ঢাকনা খুলবেন না। কেননা খুললেই দেখতে পাবেন মূল যন্ত্রাংমের কতগুলি হাই ভোল্টেজ কম্পোনেন্ট আছে, সেখানে অসাবধান ছোঁয়ায় ঘটতে পারে বড় বিপর্যয়।


* টিভির সামনের কাঁচপরদা ধুলো ধূসরিত? প্লাস্টিক ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করুন। নইলে সামান্য স্পিরিট ন্যাপকিন কাগজে ঘষে ঘষে মুছে দিন।

*  ঝড় উঠেছে? বাইল বাতাস? চট্ করে টিভির প্লাগ আর কেবল কানেকশনটি খুলে দিন। বাজ পড়লে টিভি তড়িৎদাহ হবে না।

*  টিভি ঝাড়াঝুড়ি করার পক্ষে খুব উপযোগী যন্ত্র হলো ভ্যাকুয়াম ক্লিনার অথবা হেয়ার ব্লোয়ার দিয়ে একটু দূর থেকে গরম হাওয়া ছড়িয়ে পুরো যন্ত্রটির ধুলোর সর নড়িয়ে নিন, এবার হালকা ব্রাম দিয়ে ঝেড়ে ফেলুন।

মিক্সার বা ফুড প্রসেসর
*  অনেক জিনিসই আছে যা বাটার পর কিছুতেই মিক্সার পুরোপুরি সাফ করা যায় না অথচ বারবার ব্লেড খুলে পরিষ্কারের ঝামেলা অনেক। কয়েক ফোঁটা ডিটারজেন্ট সাবান আধ মগ জল দিয়ে আধ মিনিট মিক্সি চালান। দেখবেন মিক্সি বোল-এ ভরে উঠবে ফেনা। ভালো করে ধুয়ে নিন। জল শুকোন। নতুনের মতো হয়ে উঠবে মিক্সি। 

*  সবজি জাতীয় কিছু বাটতে বা রস করতে চান? খুব বড় বড় পিস মিক্সিতে না দিয়ে একটু ছোট পিস দিন। তাড়াতাড়ি কাজ হবে। যেসব মশলাপাতি বাইরে শুকনো কিন্তু পিষলে ভেজা তাদের মিক্সিতে দিতে হরে একটু সময় ভিজিয়ে রেখে মিক্সিতে চড়ান, বাটার সময় জল যোগ করুন।

*  বেশ চলছিলো। হঠাৎ চলছে না? দাঁড়ান, দাঁড়ান। মিস্ত্রি ডাকার আগে কটা জিনিস একটু চেক করে নিন। অনেক মিক্সিতে অটোম্যাটিক ক্যাপাসিটি চেকার থাকে যাতে ওভারলোড হলেই মেশিনটা অটো অফ হয়ে যায়। সাধারণত মিক্সির তলার দিকে একটি ছোট্ট বাটন থাকে যেটি টিপে মিক্সিটি আবার চালু করতে হয়।

*  কখনোই বেশি সময় ধরে টানা মিক্সার চালাবেন না। বন্ধ করে করে চালান। 

*  মিক্সারে গন্ধ? সামান্য বেকিং সোডা, পাতিলেবুর ছিবড়ে ও একটু জল দিয়ে এক মিনিট ব্লেন্ডিং করুন। গন্ধ উধাও।

ওয়াশিং মেশিন 
*  কোথায় আছে মেশিনটা? বাথরুমে? বারান্দায়, নাকি অন্য কোথাও? প্রথমেই দেখে নিন ময়লা জল বেরিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত ব্যবস্থা আছে তো?

*  কখনোই ক্যাপাসিটি ওজনের থেকে বেশি জামাকাপড় কাঁচতে দেবেন না। বিভিন্ন ধরনের কাপড় (যেমনÑ সিল্ক, সিন্থেটিক, সুতি, পশম ইত্যাদি) একসাথে কাঁচতে না দেয়াই উচিত। অজ্ঞতাবশন একটা প্রবণতা থাকে বেশি সাবান ব্যবহার করা। অবশ্যই নির্দেশ পুস্তিকা পড়ে তবে ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করুন। পর্দা, তোয়ালে, টেবিলক্লথ, বিছানার চাদর-এর মতো ভারি জিনিসের সাথে বাচ্চাদের জামা বা অর্ন্তবাসের মতো ছোটখাটো জিনিস একসাথে না কাঁচাই ভালো। আপনার ওয়াশিং মেশিনের বাইরেটা কি ধাতব? অর্থাৎ লোহার ওপর রঙ করা? মরছে ধরছে? এখনই মেশিনটিকে একটা ছোট্ট ভিত্তির ওপরে রাখুন। ইট বা কাঠ দিয়ে উঁচু করে। নিশ্চয়ই মেঝে থেকে জল উঠে মরচে ধরাচ্ছে মেশিনের গায়ে।

অন্যান্য যন্ত্রপাতি
*  পাখার ব্লেডে মোটা ধুলো? কিচেন স্পঞ্জ বা ক্রচ বাইট-এ সামান্য সাবান দিয়ে লম্বা টানে মুছুন। খবরের কাগজ দিয়ে শুকনো মুছে নিন। ভ্যাকুয়াম ক্লিনারে কাজটা করা আরো সহজ ও নিখুত।

*  সকালে ক পিস টোস্ট খেলেন? সারা পরিবার মিলেমিশে ষোলো পিস? এক্ষুনি টোস্টারের বলার লিড খুলে জমে থাকে ব্রেডক্রাম্ব ঝরিয়ে নিন। ব্রেডক্রাম্ব জমে জমে টোস্টারে ফুলকির মতো আগুন ধরে যেতে পারে।

*  টোস্টার কোনওদিন ইস্ত্রির মতোই জল দিয়ে পরিষ্কার করার চেষ্টা করবেন না।

*  প্লাক গুঁজেছেন? এমন আটকে গেছে যে খোলা যাচ্ছে না? কোনোক্রমে যদি একবার খুলতে পারেন প্লাগের ডাঁটি দুটোয় ভালো করে পেনসিলের শিস দিয়ে ঘষে নিন। চ্যানেল ক্লিয়ার। এখন আর আগের প্লাগ খোলা বন্ধ করায় কোনো সমস্যা হবে না।

*  বাড়িতে একটা নিয়ন টেস্টার রাখুন। প্রথমত অসময়ে কাজে লাগে, দ্বিতীয়ত এর মাধ্যমে পরীক্ষা কার সম্ভব আপনার বাড়ির যন্ত্রপাতিগুলোর মধ্যে কোনগুলো এখনই সারাতে দেয়া দরকার। যতদূর সম্ভব দুপিন প্লাগের বদলে থ্রিপিন প্লাগ ব্যবহার করুন। 

*  থ্রিপিন প্লাগের তিনিটি পিন কি কি জানেন তো? মাথার দিকের বড় মোটা ডাঁটিটির সাথে তাকে আর্থওয়্যারের সংযোগ। আর নিচের ছোট ডাঁটি দুটি যথাক্রমে লাইবওয়্যার ও নিউট্রাল ওয়্যার।

*  ইলেকট্রিক স্টোভের উপর যখন দুধ জ্বাল দেবেন কখনোই লোহার হাতল দিয়ে নাড়বেন না। কারণ দুধ উথলে ওঠাটা স্বাভাবিক ঘটনা। আর এ সময় লোহার হাতা ব্যবহার করা বা স্টোভের গায়ে হাত দেয়াÑ দুটিই মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। 

*  ইলেকট্রিক কেটলি থেকে যখনই জল ঢালবেন সব সময় তার সুইচ অবশ্যই বন্ধ করে নেবেন। 

*  ভিজা হাতে কখনোই প্লাগ ও সুইচবোর্ড-এ হাত দেবেন না। এমনকি শাওয়ার বেসিন এ সবের কাছে কখনোই প্লাগ পয়েন্ট রাখবেন না। এতে শর্ট-সার্কিট হওয়ার সম্ভবনা থাকে।

*  চালু অবস্থায় কখনো প্লাগ পয়েন্ট থেকে প্লাগ টেনে খুলবেন না। সবসময় সুইচ অফ করে এ কাজ করবেন নয়তো ভয়ঙ্কর বিপদ ঘটে যেতে পারে। 

*  বাড়ির ছোটখাটোই হোক বা বড়সরÑ যেকোনো ইলেকট্রিক কাজ করার আগে রাবারের অথবা কাঠের জুতো পরবেন। কারণ এ দুটোর কোনোটার মধ্য দিয়ে কারেন্ট পাস করতে পারে না। এতে শক খাওয়ার কোনো ভয় থাকে না। 

*  ইলেকট্রিক কাজ করার সময় যদি কেউ শক খান তবে সাথে সাথে সুইচ অফ করে দিন। আর সুইচটা যদি হাতের নাগালের বাইরে হয় তবে তার টেনে ডিসকানেক্ট করে দিন।

*  অথবা মেন সুইচও অফ করে দিন। যদি সম্ভব হয় তা হলে রাবারের জুতো পরে নিন অথবা কাঠের পিঁড়ির উপর দাড়ান।

কম্পিউটার
প্লাগ পয়েন্ট কাছে থাকাই বাঞ্চণীয়। তার পামে ফোন রাখাটা উচিত। ইন্টারনেট কানেকশনের জন্য সুবিধা হবে।
মাঝে মাঝে পুরনো টুথব্রাশ দিয়ে হালকা করে ঝেড়ে নেবেন। মেশিনে কাভার পরিয়ে রাখা প্রয়োজন। 

কম্পিউটার ভ্যাকুম করাটা প্রয়োজন, তবে বাড়ির ভ্যাকুম ক্লিনার নয়। পারলে ছোট একটা ভ্যাকুম ক্লিনার কিনে নিয়মিত ভ্যাকুম করুন কম্পিউটার।
        

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত