গর্ভকালে চারবার সেবা গ্রহণ করি, নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করি

নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস আজ

প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৩, ১২:৪৯

সাহস, স্বাস্থ্য ডেস্ক
নিরাপদ মাতৃত্ব সব নারীর অধিকার

প্রতি বছরের মতো এবারও আজ (২৮ মে) বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। প্রতি বছর মতো এবারও ‘গর্ভকালে চারবার সেবা গ্রহণ করি, নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করি’ —এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সারাদেশে পালিত হচ্ছে দিবসটি। দেশে প্রতি বছর গর্ভধারণ করেন প্রায় ২৮ লাখ নারী। প্রতি লাখে মারা যান ১৬৮ জন। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৬৩ জন। ২০২৩ সালে সেই সংখ্যা কমেনি, বরং বেড়েছে।

নিরাপদ মাতৃত্ব সব নারীর অধিকার। একজন অন্তঃসত্ত্বা মায়ের তার পরিবার, সমাজ, সরকার ও স্বাস্থ্যকর্মীর কাছ থেকে উপযুক্ত সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য আমাদের সুস্থ ও সবল মা প্রয়োজন। কেননা মায়ের স্বাস্থ্য নিশ্চিত হলে শিশুর স্বাস্থ্যের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। 
 
বিশ্বে প্রতিদিন ৮৩০ জন মা মারা যান গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন জটিলতার কারণে। ৯৯% এ মৃত্যু ঘটে উন্নয়নশীল দেশে। ১৯৯৭ সাল থেকে ২৮ মে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালন করে আসছে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ উদ্যোগ টেকসই উন্নয়নের অন্তর্ভুক্ত করে। নিরাপদ মাতৃত্বের কার্যক্রম পরিচালনা করে সরকার, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংগঠন। এসব কার্যক্রমের ফলে ২০০০-২০১৭ পর্যন্ত মাতৃমৃত্যুর হার ৩৮ শতাংশ কমে এসেছে।

নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা হলো নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের উদ্দেশ্য। একজন নারী গর্ভধারণের পর থেকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রাখেন। শুধু মা-ই নন, মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠা শিশুরও যত্ন প্রয়োজন, যাকে বলা হয় গর্ভকালীন সেবা।

এই গর্ভকালীন যত্নের লক্ষ্য হলো মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং গর্ভজনিত কোনো জটিলতা দেখা দিলে তা প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা। এক কথায় মায়ের স্বাস্থ্যের কোনো অবনতি না করে পরিবার, সমাজ ও দেশকে একটি সুস্থ শিশু উপহার দেওয়া।

জাতিসংঘ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যমতে, শিশু জন্ম দিতে গিয়ে বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ নারী মারা যান। আর অন্ততপক্ষে সাত মিলিয়ন নারী প্রসব পরবর্তীতে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। এছাড়া প্রসবের পর নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় ভোগেন আরও ৫০ মিলিয়ন নারী।

বাংলাদেশে প্রতি বছর ১২ হাজার নারী গর্ভধারণ ও গর্ভধারণ সংক্রান্ত কারণে মারা যান বলে জানায় ডব্লিউএইচও। আমাদের দেশে প্রতি এক লাখ প্রসবের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার ১৬৫ জন। ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়নে এ সংখ্যা ৭০ জনে কমিয়ে আনতে হবে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে ২৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস ঘোষণা করেন। ১৯৯৮ সাল থেকে দেশব্যাপী ’নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস’ পালন শুরু হয়েছে।


গর্ভকালীন পরিচর্যা ও স্বাস্থ্যসেবা
গর্ভকালীন সময়ে একজন মাকে যে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয় তাই গর্ভকালীন সেবা । গর্ভধারণের সময় হতে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত সময়কালে মা ও শিশুর যত্নকে গর্ভকালীন যত্ন বা Antinatal Care বলে। এই গর্ভকালীন যত্নের লক্ষ্য হলো মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং গর্ভজনিত কোনো জটিলতা দেখা দিলে তার প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা। এক কথায় মায়ের স্বাস্থ্যের কোনো অবনতি না করে সমাজকে একটি সুস্থ শিশু উপহার দেয়া।

একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ প্রসব এবং প্রসব পরবর্তী স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা গর্ভবতীর স্বামীসহ পরিবারের সকলের সমান দায়িত্ব ।

গর্ভধারণের পরপরই একজন গর্ভবতী মহিলার গর্ভকালীন যত্নের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে অথবা ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। প্রথম ভিজিটের পর একজন গর্ভবতীকে সাধারণত ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিমাসে একবার, ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ১৫ দিনে একবার এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার এই গর্ভকালীন যত্নের জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে হয়।
৫ থেকে ৮ মাসের মধ্যে ২টি টিটি টিকা নিতে হয় ।

বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার ও প্রচুর পরিমাণ পানি পান করতে হবে ।

গর্ভকালীন সময় ভারি কোনো কাজ করা যাবে না ।

হাসিখুশি থাকতে হবে এবং দিনে ১ থেকে ২ ঘন্টা বিশ্রাম ও রাতে অন্তত ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে ।

যেকোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা ক্লিনিকে ডেলিভারি করানো নিরাপদ । যদি তা সম্ভব না হয়, তবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী দ্বারা ডেলিভারি করাতে হবে ।

তবে গর্ভকালীন সময়ে কোনো ধরনের জটিলতা দেখা দিলে অতি দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

গর্ভবতী মায়ের খাবার
এ সময় মা ও গর্ভের শিশু দু’জনের সুস্থতার জন্য একটু বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন । বিশেষ করে শিশু বেড়ে ওঠার জন্য আমিষ জাতীয় খাবার যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ বেশি করে খেতে হবে । এ ছাড়া সবুজ ও রঙিন শাকসবজি, তরকারি ও ফল ছাড়াও যেসব খাবারে আয়রন বেশি আছে যেমন কাঁচাকলা, পালং শাক, কচু, কচুশাক, কলিজা ইত্যাদি বেশি বেশি খেতে হবে । 

আর বেশি পরিমাণে পানি (দিনে ৮/১০ গ্লাস) খেতে হবে এবং রান্নায় আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করতে হবে ।

অনেকেরই ধারণা মা বেশি খেলে পেটের বাচ্চা বড় হয়ে যাবে এবং স্বাভাবিক প্রসব হবে না । অনেকে গর্ভবতী মাকে বিশেষ কিছু খাবার খেতে নিষেধ করে । যেমন- দুধ, মাংস কিছু কিছু মাছ ইত্যাদি । এগুলো খাওয়া তো নিষেধ নয়ই, বরং মা বেশি খেলে মায়ের ও বাচ্চার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে । 

মা প্রসবের ধকল সহ্য করার মতো শক্তি পাবেন এবং মায়ের বুকে বেশি দুধ তৈরি হবে ।

এ সময় স্বাভাবিক কাজকর্ম করা শরীরের জন্য ভালো । কিন্তু কিছু কিছু ভারি কাজ যেমন: কাপড় ধোয়া, পানি ভর্তি কলস কাঁখে নেয়া, ভারি বালতি বা হাঁড়ি তোলা উচিত নয় । 

এ সময় প্রতিদিন গোসল করা, দাঁত মাজা, চুল আঁচড়ানো, পরিষ্কার কাপড় পরা উচিত । এতে শরীর ও মন ভালো থাকে ।

গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে ৪ বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা চেকআপের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে মা ও গর্ভস্থ শিশুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গর্ভবতী মাকে গর্ভকালীন সময়ে কমপক্ষে ৪ বার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চেকআপের জন্য যাওয়ার সুপারিশ করেছে, এর মাধ্যমে ৬টি সেবা নিশ্চিত করা হয় । 

তবে মনে রাখা দরকার যে, গর্ভবতী মায়ের অবস্থা ও প্রয়োজন অনুযায়ী ৪ বার এর বেশি চেকআপে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে ।

বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা/চেকআপের সময়সূচি
১মঃ ৪র্থ মাসের মধ্যে (১৬ সপ্তাহ)
২য়ঃ ৬ষ্ঠ মাসে (২৪ সপ্তাহ)
৩য়ঃ ৮ম মাসে (৩২ সপ্তাহ)
৪র্থঃ ৯ম মাসে (৩৬ সপ্তাহ)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত