ঘাড় ব্যাথা ও তার চিকিৎসা

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৩, ১৬:৫৯

ডা. এম ইয়াছিন আলী
ডা. এম ইয়াছিন আলী
ঘাড় ব্যাথা কেন হয়?
অনেকগুলি কারণে ঘাড় ব্য্যাথা হতে পারে। বয়স অনুসারে ঘাড় ব্যাথা ভিন্ন ভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। 
যেমন-
- শিশুদের ক্ষেত্রে টরটিকলিস বা হঠাৎ ঘাড়ের মাংসপেশি টেনে ধরা, 
- তরুণদের ক্ষেত্রে সারভাইক্যাল রিবস বা ঘাড়ের অতিরিক্ত হাড়ের কারণে ও সারভাইক্যাল ডিক্স প্রলেপস বা সারভাইক্যাল ডিস্ক ডিজিজ ইত্যাদি। 
- বয়স্কদের ক্ষেত্রে খুব পরিচিত রোগ 
যেমন-
* সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস
* সারভাইক্যাল রিবস
* সারভাইক্যাল স্পনডাইলোলিসথেসিস 
* সারভাইক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস বা স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া
* সারভাইক্যাল ডিক্স প্রলেপস বা হারনিয়েশন 
* অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা রোগ
* সারভাইক্যাল অস্টিও-আর্থ্রাইটিস 
* হাড়ের ইনফেকশন
* ডিস্কাইটিস (ডিস্কের প্রদাহ)
* হাড় ও স্নায়ুর টিউমার ... ইত্যাদি।
 
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে টরটিকলিস কেন হয়? 
আমাদের সারভাইক্যাল স্পাইনের দুই পাশে দুইটি প্রধান মাংসপেশী থাকে। এই মাংসপেশিটির নাম স্টারনোক্লাইডো-মাস্টয়েড বলা হয়। এই মাংসপেশিটি আমাদের ঘাড়ের মুভমেন্ট বা নাড়াচাড়া করতে সাহায্য করে। 
 
এই মাংসপেশীটি যখন কোন কারণে হঠাৎ শক্ত হয়ে এক পাশে টেনে ধরে তখন এই অবস্থানকে টরটিকলিস বলে। 
 
 তাহলে টরটিকলিসের চিকিৎসা কি? 
এর প্রধান চিকিৎসা হল আক্রান্ত মাংসপেশিকে রিলাক্স করা। এক্ষেত্রে আমাদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় কিছু ম্যানুয়াল টেকনিক বা পদ্ধতি রয়েছে যাকে ম্যানুয়াল থেরাপি বলা হয় এর মাধ্যমে সহজেই মাংসপেশীকে রিলাক্স বা স্বাভাবিক করা সম্ভব। 
 
সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস রোগ সম্পর্কে এজানতে হবে
সারভাইক্যাল স্পানডাইলোসিস একটি পরিচিত রোগ। আমাদের বয়স্ক জনগোষ্ঠির বেশীর ভাগ মানুষই এর সাথে পরিচিত। এই রোগটি বয়স জনিত মেরুদন্ডের হাড়ের ক্ষয়জনিত রোগ। 
 
বয়স চল্লিশের উপর গেলে যেমন চুল পেকে যায় তেমনী মেরুদন্ডের হাড় বা কশেরুকা গুলিরও ক্ষয় হতে থাকে। পাশাপাশি  দুই কশেরুকার মধ্যবর্তি স্থান বা ইন্টারভার্টিব্র্যাল ডিস্ক স্পেস কমে যায় ও আক্রান্ত কশেরুকা গুলিতে ছোট ছোট হুকের মত হাড় বৃদ্ধি পায় যাকে মেডিকেল পরিভাষায় অষ্টিওফাইট বলে, যার ফলে আক্রান্ত নার্ভ রুটের উপর চাপ পড়ে এবং রোগী ব্যাথা অনুভব করে। 
 
 
 সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস কাদের বেশী হয়? 
এটি মহিলা ও পুরুষ উভয়েরই হয়। তবে কিছু কিছু পেশার মানুষের বেশী হয়ে থাকে। যেমন-কম্পিউটারে কাজ করেন, সামনে দিকে ঝুঁকে কাজ করেন, লেখালেখি করেন, গৃহিনী বা গৃহস্থীল কাজ করেন তারা বেশী আক্রান্ত হয়। 
 
সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস এর ক্ষেত্রে রোগীর কি কি উপসর্গ দেখা দেয় 
উপসর্গ - 
১. ঘাড় ব্যথা এবং এই ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে
২. কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভ‚তি বা অবশ ভাব
৩. বাহু, হাত ও আঙুল দুর্বল হতে পারে
৪. সব সময় ঘাড় ধরে বা জমে (স্টিফনেস) আছে এবং আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে
৫. ঘাড়ের মুভমেন্ট ও দাঁড়ানো অবস্থায় কাজ করলে ব্যথা বেড়ে যায়
৬. ঘাড় নিচু করে ভারি কিছু তোলা বা অতিরিক্ত কাজের পর তীক্ষ্ন ব্যথা
৭. হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়
৯. শরীরে অসহ্য দুর্বলতা লাগে, ঘুমের বিঘœ ঘটে এবং কাজ করতে অক্ষমতা লাগে, শারীরিক ভারসাম্য হারাবে
১০.প্রস্রাব ও পায়খানার নিয়ন্ত্রণ নষ্ট হবে।
১২. রাতে বেশি ব্যথা হলে বা ব্যথার জন্য ঘুম ভেঙে যায়
 
সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস এর ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কি ? 
খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। এই রোগে যে সমস্যাটি হয় আমার বলেছি মেরুদন্ডের  হাড়ের মধ্যেকার স্পেসটি কমে যায়। এই স্পেস বাড়ানোর জন্য আমাদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খুবই ইফেকটিভ বা ফলদায়ক। 
 
এক্ষেত্রে আমরা ট্রাকশন এর মাধ্যমে স্পেসটি বাড়িয়ে দিই পাশাপাশি কিছু এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম এর মধ্যে ঘাড়ের মাংসপেশিগুলোর শক্তি বৃদ্ধি করি, যেন পরবর্তীতে আবার স্পেসটি কমে না যায়।
 
ঘাড় ব্যাথার রোগীদের জন্য পরামর্শ কি? 
ঘাড় ব্যাথায় আক্রান্ত রোগীরা দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয়ে ব্যাথার সঠিক কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা নিন।
 
যারা এখনও ঘাড় ব্যাথায় আক্রান্ত হয়নি, তাদের জন্য পরামর্শ  
যারা এখনও ঘাড় ব্যাথায় আক্রান্ত হননি তারা কিছু নিয়ম মেনে চলুন তাহলে ঘাড় ব্যাথা প্রতিরোধ করতে পারবেন।
যেমনঃ 
১। সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না। কাজের মাঝে কিছু সময় বিশ্রাম নিন। 
 
২। যারা কম্পিউটারে কাজ কনে তাদের কম্পিউটারের মনিটর চোখের লেভেল অনুযায়ী রাখুন। যেন খুব বেশী ঝুঁকতে না হয়।
 
৩। শোবার সময় ১টা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন যার অর্ধেক টুকু মাথা ও বাকী অর্ধেকটুকু ঘাড়ের দিকে থাকবে। কারণ আমরা অনেকেই খুব নিচু বালিশ ব্যবহার করি যার ফলে আমাদের সারভাইক্যাল স্পাইনে যে স্বাভাবিক বক্রতাকে নষ্ট করে দেয়, তেমনী কেউ যদি খুব উঁচু বা ডাবল বালিশ ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক বক্রতা নয় হয়। 
 
৪। যাদের সারভাইক্যাল স্পাইনের ডিস্ক স্পেস কমে যাওয়ার কারণে ঘাড় ব্যাথায় ভুগছেন তারা ভ্রমণের সময় ঈবৎারপধষ ঈড়ষষধৎ ব্যবহার করবেন। যাতে গাড়ীর ঝাঁকুনিতে ডিস্ক স্পেস আরও কমে না যায়।
 
৫। সর্বোপরি ঘাড়ের মাংসপেশীর শক্তি ঠিক রাখার জন্য ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করুন।
 
 
ডা. এম ইয়াছিন আলী 
কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান - ফিজিওথেরাপি বিভাগ 
প্রো- অ্যাকটিভ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, 
চীফ কনসলটেন্ট , ঢাকা সিটি ফিজেওথেরাপি হাসপাতাল,
ধানমন্ডি, ঢাকা। মোবাইলঃ ০১৭৮৭-১০৬৭০২
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত