করোনার ৪র্থ ঢেউ: সতর্কতা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের

প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২২, ১৫:৪৫

সাহস ডেস্ক

করোনার অমিক্রণ ধরণের প্রকোপে প্রায় টাল মাটাল হয়ে পড়েছিলো দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। স্বাভাবিক প্রকৃয়ায় সে ধাক্কা কমে এসেছিলো বেশ বড়োসড়ো ভাবেই। আবার প্রায় চার মাস পর গত বুধবার দেশে একদিনে করোনা দাঁড়িয়েছে এক হাজার। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় মহামারির চতুর্থ ঢেউ শুরু হয়েছে। অমিক্রনের দুটি উপধরণ-বিএ.৪-৫- বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কোভিড সংক্রমণের হার বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। আশঙ্কা, আগামী সপ্তাহগুলোতে করোনা শনাক্ত আরও বাড়তে পারে। শুরু হতে পারে আবারো কমিউনিটি ট্রান্সমিশন।

দেশে বুধবার ১ হাজার ১৩৫ এবং বৃহস্পতিবার ১ হাজার ৩১৯ জন নতুন করে করোনায় শনাক্ত হয়েছে। এর আগে দেশে ২৫ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ দৈনিক ১ হাজারের বেশি (১ হাজার ৪০৯ জন) করোনা শনাক্ত হয়েছিল, যেখানে ১১ জন মারা গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ৯ হাজার ২১৪ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ১১ কোটি ৮৬ লাখের বেশি মানুষ এখন পর্যন্ত কোভিড ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ পেয়েছে এবং ১২ কোটি ৮৯ লাখের বেশি মানুষ প্রথম ডোজ পেয়েছে। এছাড়া দেশে ২ কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ বুস্টার ডোজ পেয়েছেন। সরকার এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ১২ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের কোভিড এর টিকা দিয়েছে।

তবে নতুন এ ঢেউ আগের তুলনায় কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, খুব বেশি সংখ্যক লোক সংক্রমণ বা টিকা দেয়ার মাধ্যমে কিছু ধরণের অ্যান্টিবডি অর্জন করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. রোবেদ আমিন, আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. এম মুশতাক হোসেন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা মুজাহেরুল হক বার্তা সংস্থা ইউএনবির বরাতে এসব পর্যবেক্ষণের কথা জানান। তারা কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলার ওপর জোর দেন। যার মধ্যে রয়েছে সবাইকে মাস্কের ব্যবহার এবং সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিদের সংক্রমণ কমাতে কোভিড ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজের কাভারেজের আওতায় আনার জন্য ভ্যাকসিনেশন বৃদ্ধি করা।

ডা. রোবেদ আমিন বলেন, অমিক্রনের সাব-ভেরিয়েন্ট বিএ.৪-৫ বিশ্বব্যাপী অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। তার মতে, এই দুটি সাব-ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ দেশে কোভিড শনাক্ত বৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রাখছে। এ বিষয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিন সিকোয়েন্সিং রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন তারা। তিনি বলেন, ভাইরাসে আক্রান্ত বৃদ্ধি আরও অন্তত তিন সপ্তাহ অব্যাহত থাকবে। তবে এই ঢেউ মারাত্মক নাও হতে পারে। যেহেতু ক্রমবর্ধমান শনাক্তের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এখনও খুব কম। তবে তিনি মনে করছেন, এই ঢেউ গুরুতর নাও হতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, ঢাকা শহরের বিভিন্ন গোষ্ঠী এখন বিভিন্ন ভাইরাসের ক্লাস্টার সংক্রমণ প্রত্যক্ষ করছে। লোকজন মাস্ক না পরে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি বজায় না রেখে এখানে-সেখানে ঘোরাফেরা করার কারণে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। তিনি আরো বলেন, এখনও কোভিড সংক্রমণের আসল চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ ভাইরাসের লক্ষণ রয়েছে এমন অনেক লোক কোভিড পরীক্ষা করছে না। রোবেদ বলেন, ‘কোভিড পরিস্থিতির আরও অবনতি হলেও আমরা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। প্রায় ২ হাজার হাসপাতালের বেড কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত।’ এর সঙ্গে জনগণকে ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। ডা. রোবেদ বলেন, এখনও অনেকে তৃতীয় ডোজ পাননি। টিকা দেয়ার মাধ্যমে সংক্রমণ বন্ধ নাও হতে পারে, তবে এটি তীব্রতা কমাতে পারে। সুতরাং, বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের সহবাসজনিত রোগ আছে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ম কঠোরভাবে বজায় রাখার পাশাপাশি তৃতীয় ডোজ গ্রহণ করা উচিত।

ডা. এম মুশতাক বলেন, হঠাৎ করে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি একটি ইঙ্গিত যে দেশে মহামারির চতুর্থ ঢেউ আসছে। তার মতে, মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলে তাহলে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে পারে। ভাইরাসটি ঢাকায় ক্লাস্টার ভিত্তিতে ছড়িয়ে পড়ছে। কিছু জেলাও বিক্ষিপ্তভাবে সংক্রমণ বাড়ছে। তবে শিগগিরই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হবে। তিনি বলেন, নতুন ঢেউ অনিবার্য ছিল। কারণ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি বজায় রাখতে এবং মাস্ক পরার জন্য মানুষের উদাসীনতার কারণে এটি কিছুটা আগে এসেছে। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক সংক্রমণ বা টিকা দেয়ার মাধ্যমে অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তিন মাস পর ক্ষয় হয়ে যায়। তিনিও আশাবাদী, এই ঢেউ মারাত্মক হবে না, কারণ প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ ইতোমধ্যে দুটি ডোজ গ্রহণ করেছে। অনেক লোকের ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবডি রয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, মৃত্যুহার কমাতে বয়স্ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ব্যক্তিদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ দেয়া উচিত। তার মতে, সরকারের উচিত স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা। গণসমাবেশ, জনসমাবেশ এবং সামাজিক সমাবেশকে নিরুৎসাহিত করা। ‘এখনো যারা টিকা পাননি তাদের খুঁজে বের করতে হবে। বয়স্ক মানুষ, বিশেষ করে যারা বুস্টার ডোজ নেননি, তাদের অবশ্যই টিকা দিতে হবে,’ বলেন ডা. মুশতাক। তিনি বলেন, সরকারের উচিত অবিলম্বে সংক্রমিত ব্যক্তিদের কাছাকাছি আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করা। আইসোলেশন পাঠানোর ব্যবস্থা করা। কঠোরভাবে এটি অনুসরণ করা উচিত কারণ শনাক্তের সংখ্যা এখনও কম- বলেন তিনি।

ডা. মুজাহের বলেন, ভাইরাসটি বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে মৃত্যুর হার কমাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদানের জন্য সরকারের উচিত উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত করা।

সাহস২৪.কম/এসটি/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত