প্রায় দশ কোটি ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২০, ২০:২০

সাহস ডেস্ক

ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট ও গ্যাভি মিলে বাংলাদেশকে প্রায় দশ কোটি করোনা ভ্যাকসিন দিচ্ছে। দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই এরই মধ্যে চুক্তি হয়েছে। ভ্যাকসিনের দাম হবে দুই থেকে ছয় ডলার বা দুই থেকে ৫শ টাকা।

ভারতের তিন কোটি এবং গ্যাভির ছয় কোটি ৮০ লাখ মোট নয় কোটি ৮০ লাখ করোনার ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ। 

বুধবার (২৫ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন ভবনে ‘কোভিড-১৯ এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক হালনাগাদ তথ্য অবহিতকরণ’ সভা শেষে একথা জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

খুরশীদ আলম বলেন, ‘নতুন বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে দেশে টিকা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ সব টিকা মাঠপর্যায়ে প্রয়োগের জন্য ২৬ লাখ স্বাস্থ্য সহকারী ও সরকারের ইপিআই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারা এটি বাস্তবায়ন করবে।’

তিনি বলেন, ‘ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশকে করোনা তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেবে। টিকাগুলো আনলেই হবে না, এগুলো মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করতে হবে। কোল্ড চেইন মেনটেইন করে আনতে হবে। বেক্সিমকোর সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য জেলায় পর্যন্ত সরবরাহ করবে।’

খুরশীদ আলম আরো বলেন, ‘প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে‌। তারপর করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি এমন ব্যক্তিদের। ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক ও আগে থেকেই দুরারোগ্য রোগে আক্রান্তরা প্রাধান্য পাবেন। এরপর ধাপে ধাপে মিডিয়াকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে এ টিকার আওতায় আনা হবে।’

এমএনসি অ্যান্ড এএইচ লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে অনেক প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। যে ভ্যাকসিন আগে পাওয়া যাবে সেটাই আমরা নেবো। এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে গ্যাভি ও কোভ্যাক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। পরে গ্যাভির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। গ্যাভি ছয় কোটি ৮০ লাখ ভ্যাকসিন দেবে। এ ভ্যাকসিন দিয়ে প্রতি দুই ডোজ একজন হিসেবে তিন কোটি ৪০ লাখ মানুষকে দেওয়া যাবে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘এই ভ্যাকসিনের দাম পড়বে ১ দশমিক ৬ থেকে দুই ডলার (১ ডলার সমান ৮৫ টাকা)। আমরা একটা জাতীয় পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। এ পরিকল্পনা আগামী দু-একদিনের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে।’

শামসুল হক বলেন, ‘এই ভ্যাকসিন প্রয়োগে অন্য কোনো নিয়মকানুন আছে কিনা সেটা আমাদের জানা নেই। এটা অন্য কোনো টিকার মতো দেওয়া যাবে কিনা, পরিবহনের জন্য কী পদ্ধতি ব্যবহার করবে, সব বিষয়ের উপর স্বাস্থ্য সহকারী ও ইপিআই কার্যক্রম যারা বাস্তবায়ন করছে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এসব ভ্যাকসিন ছাড়াও বাংলাদেশ সরকার ভ্যাকসিন কেনার জন্য সরাসরি প্রস্তুতি নিয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সংস্থা ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মার সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। এর দাম পড়বে চার ডলার এবং পরিবহন ও মেনুফ্যাকচারিংসহ সাড়ে পাঁচ ডলার খরচ হবে (১ ডলার সমান ৮৫ টাকা)। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশকে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেবে।’

শামসুল হক আরো বলেন, ‘এছাড়াও সিনোভ্যাক, রাশিয়ার স্পুটনিক, সানোফি, ফাইজারের মতো ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। যেটা আগে পাবো সেটা যেন শুরু করতে পারি। পাওয়া মাত্রই আমরা যেন ভ্যাক্সিনেশন শুরু করতে পারি সে জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

সভায় কোভিড তথ্য ব্যবস্থাপনা ও ই-সেবা, কোভিডের বর্তমান প্রেক্ষাপট, কোভিড ভ্যাকসিন, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সার্বিক চিত্র, শীতকালীন রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ে আলোচনা হয়।

এসময় আরো বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা, এমআইএস বিভাগের পরিচালক ও লাইন ডাইরেক্টর ডা. মো. হাবিবুর রহমান, এমআইএস (মেডিক্যাল বায়োটেকনোলজি) বিভাগের ডিপিএম মো. মারুফুর রহমান অপু, সিডিসি পরিচালক ও লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিয়া, আইসিডিডিআরবির পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত