করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি সবক্ষেত্রে কার্যকর নয়

প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২০, ১৩:৪৩

সাহস ডেস্ক

কোভিড-১৯ চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে সারাবিশ্বে সমাদৃত হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা পদ্ধতির বিষয়ে বেশকিছু ভুল ধারণা রয়েছে। যা অনেক রোগীকে এর দিকে ধাবিত করলেও সবক্ষেত্রেই প্লাজমা পদ্ধতি কার্যকর হবে এমন কোনও নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না। চিকিৎসকদের মতে, কিছু সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতিতেই কেবল প্লাজমা থেরাপি কাজে দেবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমোটোলোজি বিভাগ প্রধান ডা. আলমগীর কবির বলেন, যদি রোগীর শরীরে অক্সিজেন অতিরিক্ত পরিমাণে কমে যায় তখন তাদের ভেন্টিলেটরের সহায়তা নিতে হয়। আর এই পর্যায়ের আগেই যদি প্লাজমা থেরাপি দেওয়া হয় তবে তখনই তা তুলনামূলকভাবে কার্যকর হবে। অনেক রোগী একেবারে শেষ অবস্থায় এসে প্লাজমা থেরাপি নেওয়ার চেষ্টা করেন, সেই অবস্থায় সাফল্যের নিশ্চিয়তা প্রায় থাকে না বললেই চলে।

ডা. আলমগীর জোর দিয়ে বলেন, কোভিড-১৯ চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি এখনও একটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ের পদ্ধতি এবং এটি কোনও নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত সমাধান নয়। প্লাজমা থেরাপি এখনও একটি পরীক্ষামূলক পদ্ধতি। আমাদেরকে এর সাফল্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে অন্তত আরও পাঁচমাস পর্যক্ষেণ করতে হবে। সারাবিশ্বেই এটি নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।

কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে এপর্যন্ত তিনজনকে প্লাজমা দিয়েছেন শাহাদাত হোসেন। তিনিও জানান, এই থেরাপি সবসময় কাজে দেয় না। খুব খারাপ পর্যায়ে চলে যাওয়ার পর রোগীর পরিবার থেকে প্লাজমা থেরাপি দেওয়ার জন্য জোর করা হয়। আমি সেরকম রোগীদের প্লাজমা দিয়েছি। তবে এরমধ্যে একজন রোগী প্লাজমা থেরাপি দেওয়ার দিনই মারা গিয়েছেন এমনও ঘটেছে।

বাংলাদেশে ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেল্থ সার্ভিসেস (ডিজিএইচএস) এপ্রিলের শুরুতে গঠন করা হয়। এর ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের পক্ষ থেকে গত ২৮ এপ্রিল কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশের প্রথম প্লাজমা ব্যাংকটি শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ডা. আশরাফুল হকের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠে। 

ডা. আলমগীরের সুরে সুর মিলিয়ে ডা. আশরাফুল বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কোনও রোগীর অক্সিজেনের পরিমাণ যদি ৮৮%এর নিচে নেমে যায়, সেক্ষেত্রে তাদের পক্ষে নিজে থেকে শ্বাস নেওয়া সম্ভব হয় না। এই পর্যায়ে যাওয়ার আগেই যদি তাকে প্লাজমা থেরাপি দেওয়া যায় তাতে বেশ ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। তবে শ্বাসযন্ত্রের ৫০%এর বেশি আক্রান্ত হলে সেক্ষেত্রে এটি আর কাজ করবে না।

তিনি জানান, ঠিক পর্যায়ে নিয়ে এলে প্লাজমা থেরাপিতে কাজ হওয়ার সমূহ সুযোগ থাকে। ৫০% সুযোগ থাকে যদি রোগী সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়েন। অন্যদিকে, রোগী যদি লাইফ সাপোর্টে চলে যান তখন এই থেরাপি আর কোনও কাজেই লাগে না।

ডা. আশরাফুল জানান, তাদের ন্যূনতম ৩০ ব্যাগ প্লাজমা প্রতিদিন প্রয়োজন পড়ে। তবে এই মুহূর্তে যে পরিমাণ সংগৃহীত হচ্ছে তা চাহিদার কাছাকাছিও যেতে পারছে না। গত বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) প্লাজমা ব্যাংক ৫৩ ব্যাগ প্লাজমা সংগ্রহ করে ঢাকায় ৮০জন রোগীকে সেবা দিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত