দখলদারদের বাধার মুখে খাল খননে অনিশ্চয়তা

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২২, ১৮:৩৯

শেখ নাদীর শাহ্

নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে উদ্ভোধন হলেও শুরু করা যায়নি সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় খুলনার পাইকগাছা উপজেলার তালতলা খাল পুনঃখনন প্রকল্পটি। কাজের মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র দু'দিন বাকি থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত খননকাজ শুরু করতে পারেনি। স্থানীয় মৎস্য অধিদপ্তর এর জন্য দখলদারদের বাধার বিষয়টি বড় করে দেখলেও খালের ইজারাদার উত্তর সলুয়া আদর্শ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি বলছেন ভিন্ন কথা। এমন পরিস্থিতিতে খালটির পুনঃখননে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

জানাযায়, সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কপিলমনি ও হরিঢালী ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত নাছিরপুর-তালতলা খালের ৯ কিলোমিটার পুনঃখনন ও পোদা নদী খনন প্রকল্পে প্রায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। প্রকল্পের কার্যাদেশ অনুযায়ী তালতলা খালের খনন কাজ চলতি বছর ৬ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ৩০ মে শেষ হওয়ার কথা। এ লক্ষ্যে স্থানীয় খুলনা-৬ আসনের এমপি আক্তারুজ্জামান বাবু ২১ এপ্রিল খনন প্রকল্পের উদ্ভোধন করলেও এখন পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি। জানা যায়, কুষ্টিয়ার শহীদুল ইসলামের মালিকানাধীন ইউনুছ এন্ড ব্রাদার্স টেন্ডারটি পাওয়ার পর কাজ করতে আসলেও খালের কতিপয় দখলদারদের পক্ষে বাধা প্রদানের ঘটনায় তারা সেখানে কাজ করতে চাচ্ছেননা।

শনিবার (২৮ মে) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সালতা নদী থেকে সৃষ্ট খালটিতে দীর্ঘ দিন ধরে নাব্যতা হ্রাস পেয়ে পরিণত হয়েছে মরা খালে। এর দু'পাশে মাটি দিয়ে বেঁধে ছোট ছোট খণ্ড খণ্ড করে বাৎসরিক চুক্তিভিত্তিক ইজারা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া পাইকগাছা-খুলনা প্রধান সড়কের নির্মাণাধীন কাজে রাস্তার দু’পাশের মাটির প্রয়োজনে খালটি থেকে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে রাস্তার কাজে লাগানো হয়েছে।

এদিকে তালতলা খাল খননের অগ্রগতির ব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাশের নিকট জানতে চাইলে তিনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, খালের স্থানীয় দখলদারেরা পানি কমাতে বাধা দেওয়ায় মূলত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেখানে আর কাজ করতে চাইছেননা। সরকার খাল খননে মৎস্য অধিদপ্তরকে নওসি অনাপত্তিপত্র দিলেও দখলদারেরা খননকাজে বাঁধা প্রদানে বন্ধ রয়েছে খননকাজ।

এব্যাপারে খালের ইজারাদার উত্তর সলুয়া আদর্শ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি লুৎফর রহমান জানান, এখন অসময়ে তারা পানি কমাতে পারবেননা। সম্ভব হলে আগামী পৌষ-মাঘ মাসে সেখানে খনন কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। এব্যাপারে তালতলা খাল পরিচালক পাইকগাছা থানা যুবলীগ নেতা, কপিলমুনি বণিক সমিতির সদস্য সচিব ও কপিলমুনি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকের কাছে জানতে তার ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিক বার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। স্থানীয় কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার বলেন, খাল খননের স্বার্থে তিনি উদ্যোগী হয়ে দু'দিনের মধ্যে খালের পানি শুকিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।

স্থানীয়রা জানান, সালতা নদী থেকে সৃষ্ট তালতলা নাছিরপুর খালটি স্লইচ গেটের মাধ্যমে পানি ওঠা-নামা করানো হয়। তবে দীর্ঘ দিন ধরে এর নিয়ন্ত্রণ খাল ইজারাদারদের হাতে চলে যাওয়ায় অতিদ্রুত খালের নব্যতা হ্রাস পেয়ে এর মৃত্যু শুরু হয়েছে। একদিকে খালটির অপমৃত্যু অন্যদিকে চরভরাটি বিস্তীর্ণ জমিতে শুরু হয় দখল প্রতিযোগীতার। সর্বশেষ ইজারা গ্রহীতার পক্ষে খালের দুইধারে বেড়িবাঁধ দিয়ে ছোট প্লট আকারে আলাদাভাবে ইজারা দেওয়ায় খালের অপমৃত্যুর পাশাপাশি অতিদ্রুত দখল হয়ে যাচ্ছে মূল খালটি।

তারা আরও জানান, বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনে তালতলা-নাছিরপুর খালই তাদের একমাত্র ভরসা। খালের বর্তমান অবস্থায় বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের অভাবে অঞ্চলজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসময় ফসলহানির পাশাপাশি বহু পুকুর, জলাশয় ও মাছের ঘের তলিয়ে খালের সাথে মিশে যায়। সর্বশেষ সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় খালধারের অধিবাসীসহ বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলেও দখল প্রতিবন্ধকতায় খননে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে নানা আশংকা জেঁকে বসেছে।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত