টিপিং পয়েন্ট অতিক্রমের মাধ্যমে মহাপ্রলয় সময়ের ব্যাপার মাত্র

প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২২, ০৩:২১

‘টিপিং পয়েন্ট’ এমন একটি সীমারেখা যা অতিক্রম করলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে থামানো অসম্ভবের পর্যায়ে চলে যাবে। মানে, একবার যদি টিপিং পয়েন্ট ক্রস করে এরপর পৃথিবীর সকল ইটভাটা, কলকারখানা, বৈদ্যুতিক বাতি, গাড়িসহ সকলপ্রকার পরিবেশ দূষণ বন্ধ করলেও পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়তেই থাকবে। এটা অনেকটা বন্দুকের ট্রিগারের মতো, একবার চাপ পড়লেই বুলেট আর ফেরত আসবে না। বর্তমানে আমরা সর্বশেষ বিন্দুতে অবস্থান করছি, আর একটু সামনে এগুলেই পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হবে তা পূর্বে থেকে নিশ্চিত হওয়াটাও অসম্ভব। কারণ, তখনকার পরিস্থিতি হবে মানুষের ধারণারও বাহিরে। 

টিপিং পয়েন্ট পার হলে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, দাবানল, খরা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি এবং নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে। কৃষি উৎপাদন ভেঙে পড়বে, দেখা দিবে খাদ্য এবং সুপেয় পানির তীব্র সংকট। ফলে উদ্বাস্তু হবে পৃথিবীর সংখ্যাগরিষ্ট বাসিন্দা। গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়বে মশা এবং মশাবাহিত রোগ। মেরু অঞ্চলের বরফ গলে উন্মুক্ত হবে ইতিহাসের অনেক জানা-অজানা ভাইরাস এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে তলিয়ে যাবে পৃথিবীর ব্যাপক অঞ্চল। বিলীন হবে অনেক প্রাণী প্রজাতি, কিন্তু মানুষের কিছুই করার থাকবে না। মূলতঃ পৃথিবীতে নেমে আসবে এক মহাপ্রলয়।

কয়েকদশক ধরে বিজ্ঞানিরা বারংবার বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিষয়ে সতর্কবার্তা এবং আসন্ন মহাবিপদ সম্পর্কে হুশিয়ার করলেও বিশ্বনেতারা তা কানে নেয়নি। বলা হয়েছিল- পরিবেশ দূষণ কিংবা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন একটি গুজব। অথচ, পরিবেশ দূষণ এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঘটেছে বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও দ্রুত গতিতে! আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে যদি অক্সিজেন, বিশুদ্ধ পানি এবং খাদ্যশূন্য একটি পৃথিবীতে দেখতে না চাই তাহলে কি করতে হবে? করতে হবে অনেককিছু এবং করতে হবে এখনই। তার মধ্যে কিছু এখানে উল্লেখ করা হলো।

জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে বিকল্প শক্তির ব্যবহার করতে হবে।
পেট্রোল, ডিজেল, অকটেন ইত্যাদির স্থলে বিদ্যুতের ব্যবহার করতে হবে।
পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, সোলার এবং উইন্ড টারবাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে।
তেল-গ্যাসচালিত সকল যানবাহন পরিবর্তন করে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের প্রচলন করতে হবে।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে এয়ার কন্ডিশন (এসি) ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।
দ্রুততর সময়ের মধ্যে কার্বন নির্গমন অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে।
গাছ কাটা এবং কাঠের ব্যবহারে যেকোন আসবাবপত্র, গৃহনির্মাণ অথবা কাঠজাতপণ্য উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে।
পৃথিবীজুড়ে ব্যাপক বনায়ন এবং বন রক্ষা করতে হবে।

কিন্তু- পৃথিবীর বর্তমান অবস্থা কি? বর্তমান বিশ্ব পুঁজিবাদী অর্থনীতি দ্বারা পরিচালিত। ফলে এখানে পরিবেশ সংরক্ষণ বিবেচ্য বিষয়ই নয়। বরং ব্যাপক উৎপাদন, অধিক মুনাফা এবং ভোগ-বিলাসই বিশ্ব এবং বিশ্বের মানুষের একমাত্র উদ্দেশ্য। বিশ্ব নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর কথা, কিন্তু বিশ্বনেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য রক্ষার ময়দানে। ফলে পৃথিবীতে প্রাণের পরিবেশ রক্ষার বৃহৎ উদ্যোগের ন্যূনতম সম্ভাবনাও দেখছি না। তাই, `টিপিং পয়েন্ট’ অতিক্রমের মাধ্যমে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত