ঐতিহাসিক পাখি মোহনচূড়া

প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:২৬ | আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ০৩:৩৬

অনলাইন ডেস্ক
আলোকচিত্রঃ আবুল বাশার শিবলী, হজরতপুর, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

পাতি হুদহুদ বা মোহনচূড়া (Upupa epops) (ইংরেজি Eurasian Hoopoe) মাঝারি আকারের পাখি। এর গ্রামীন নাম হুদ হুদ,কাঠকুড়ালি ইত্যাদি নামে পরিচিত। পাখিটির নামকরণ 'মোহনচূড়া' দিয়েছেন কথা সাহিত্যিক বনফুল। ঐতিহাসিক এই পাখিটি একবার দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। মনটা অন্য রকম এক ভালো লাগার আবেশে ভরে যায়। 

অনন্যসুন্দর সেই পাখিটির নাম মোহনচূড়া। বাংলাদেশের পাখিটি  বিরল। পাখিটির শরীর বাদামি এবং ডানা ও লেজে সাদা-কালো দাগ রয়েছে। মাথায় আছে রাজমুকুটের মতো সুন্দর একটি ঝুঁটি। সেই ঝুঁটির হলদে বাদামি পালকের মাথাটা কালো রঙের।

উপমহাদেশে পাখিটি বেশি দেখা যায়। মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশ, মিসর, চাদ, মাদাগাস্কার, এমনকি ইউরোপের কোনো কোনো দেশেও এর দেখা পাওয়া যায়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং আমাদের দেশেও মাঝেমধ্যে এই পাখির দেখা পাওয়া যায়। আমাদের দেশের মানুষ এটিকে মোহনচূড়া বা কাঠকুড়ালি হিসেবে চেনে। 

যেহেতু মোহনচূড়া পাখির অনেক উপপ্রজাতি আছে, তাই আমাদের দেশের মোহনচূড়াই সুলাইমান (আ.)-এর হুদহুদ কি না তা নিয়ে সংশয় আছে। ইংরেজিতে একে হুপো বা হুপি বলে ডাকা হয়। আরবি ও উর্দুতে একে ডাকা হয় হুদহুদ নামে। ইতিহাসের পাতায় স্থান পাওয়া পাখি মোহনচূড়া ২৫-৩২ সেন্টিমিটার (৯.৮-১২.৬ ইঞ্চি) পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাখা দুটি ছড়িয়ে দিলে তা ৪৪-৪৮ সেন্টিমিটার (১৭-১৯ ইঞ্চি) পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। ওজন ৪৬-৮৯ গ্রাম পর্যন্ত। আমাদের দেশে পাখিটি ‘মোহনচূড়া বা “হুপো নামে” পরিচিত। ডাকে উপ..উপ...উপ আওয়াজ করে।  এরা সাধারণত মরুভূমিসংলগ্ন এলাকায় থাকতে ভালোবাসে। মাটিতে ঠোঁট ঢুকিয়ে পোকা খেয়ে জীবন ধারণ করে। এদের পর্যবেক্ষণক্ষমতা অসাধারণ।

এই মোহনচূড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে বেশ পরিচিত। পাখিটি শুধু ওমান নয়, মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশ এবং আফ্রিকার মিসর, চাদ, মাদাগাস্কার, এমনকি ইউরোপের কয়েকটি দেশ, এশিয়ার ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একাধিক দেশেও অতিপরিচিত। দেশভেদে কেবল নামকরণেই কিছুটা পার্থক্য। ইংরেজিতে একে হুপো বা হুপি বলে ডাকা হয়। আরবির মতো উর্দুতেও একে হুদহুদ নামে ডাকা হয়। মূলত ইউরেশিয়া এলাকার এই পাখিটি ‘ওল্ড ওয়ার্ল্ড বার্ড’বলে পরিচিত। সাধারণত মরুভূমিসংলগ্ন এলাকায় থাকতে অত্যন্ত ভালোবাসে। মাটিতে ঠোঁট ঢুকিয়ে পোকা খেয়ে জীবনধারণ করে। 


ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে এটি ফসলের জন্য উপকারি পাখি হিসেবে সমাদৃত। তাই অনেক দেশে আইন করে একে রক্ষা দেয়া হয়েছে। মানব সভ্যতার বিভিন্ন যুগের সংস্কৃতিতে একে সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়। প্রাচীন মিসরে একে পবিত্র জ্ঞান করা হত। বাইবেল ও কুরআনে এই পাখির উল্লেখ আছে। কুরআনের সুরা নামলের ২০-২২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, একটি হুদহুদ পাখি নবী হযরত সুলাইমান -এর পোষা ছিল এবং এর কাজ ছিল বিভিন্ন স্থান থেকে খবরাখবর সংগ্রহ করে নবীকে জানানো। নবী হজরত সুলাইমান (দঃ) এই পাখির দ্বারা ভূগর্ভস্থ জল ও আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করতেন। প্রাচীন পারস্যে এই পাখিকে সততার প্রতীক হিসেবে দেখা হত। তবে ইউরোপে একে চোর হিসেবে গণ্য করা হত। এস্তোনিয়ায় একে মৃত্যুর প্রতীকরূপে দেখা হয়। ২০০৮ সালের পাখিটিকে দেশের জাতীয় পাখির স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। (ওয়াইনেট নিউজ)

তথ্যসূত্র: বিবিসি, উইকিপিডিয়া, Birdlife International, বিজ্ঞানচিন্তা(প্রকাশ ১৩ জানুয়ারি ২০২২),ওয়াইনেট নিউজ।

সাহস২৪.কম/এবি