পাহাড়কাটার দায়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে ৭৮ লাখ টাকা জরিমানা

প্রকাশ | ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১৫:৫৪ | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১৬:৫৩

অনলাইন ডেস্ক
আলোকচিত্র :সংগৃহীত

পাহাড়কাটার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জালালাবাদ তালিমুল কোরআন মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে ৭৮ লাখ ৭ হাজার ৫শ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

গত ৩১ মার্চ ঢাকা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট উইং) বেগম রুবিনা ফেরদৌসী এক আদেশে এক লাখ ৫৬ হাজার ১৫০ ঘনফুট পাহাড় কাটার আনিত অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় এ জরিমানা করেন।

সোমবার (৫ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত এক আদেশের কপি পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে আসার পর  গণমাধ্যমে প্রকাশ পায় বিষয়টি। তবে এর আগে শুনানিতে হাজির হওয়ার জন্য মাদ্রাসা পরিচালকের নাম হাফেজ মো. তৈয়বকে তিনবার নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি হাজির হননি।

জানা যায়, মাওলানা তৈয়বের মাদ্রাসাটি জালালাবাদের পাহাড়ে গড়ে উঠা শত শত অবৈধ বসতির একটি। বিগত কয়েক বছর ধরে সরকারি খাস জমি দখল করে, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেখে নির্বিচারে পাহাড় কেটে তৈরি করেছেন বসতি। দীর্ঘদিন ধরে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকলেও গত বছর একটি অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের নজরে আসে পাহাড় কাটার বিষয়টি।

এদিকে পাহাড় কাটা নজরে আসার পর যৌথভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় উপজেলা ভূমি সার্কেল আলাদা কমিটি গঠন করে। গতবছরের ২১ ও ২৬ জুলাই পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক ও দুই পরিদর্শকের সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত টিম পাহাড় কাটার বিষয়টি সরেজমিন পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করেন। একইসাথে হাটহাজারী উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ও চিকনদণ্ডী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দুই উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সরকারি খাস খতিয়ানের জায়গা দখলের সত্যতা পান।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তদন্ত টিম পৃথক পাঁচ অংশে প্রায় এক লাখ ৮০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটার প্রমাণ পান। পরিবেশ অধিদপ্তরের তদন্ত টিম তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, জালালবাদ তালিমুল কোরআন মাদ্রাসার নামে ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়েছে। পাহাড় কেটে বানানো হয়েছে বেশ কয়েকটি বসতিও। বসতি নির্মাণকৃত জায়গাগুলো মাওলানা তৈয়্যবের কাছ থেকে কিনেছেন বলেও বসবাসকারী লোকজন তদন্ত টিমকে জানিয়েছেন।

অন্যদিকে হাটহাজারী ভূমি অফিসের তদন্ত টিম জালালাবাদ তালিমুল কোরআন মাদ্রাসা সরকারি খাস খতিয়ানের ৬ দশমিক ৫৩ একর জায়গা অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে বলে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। এ পদক্ষেপের পর পরিবেশ অধিদপ্তর মহানগর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন মাদ্রাসা পরিচালক। পরবর্তীতে পাহাড়কাটার অভিযোগের প্রতিবেদনের উপর শুনানির জন্য চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয় থেকে যাবতীয় নথি পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এনিয়ে গত বছরের ১৬ আগস্ট দৈনিক আজাদীতে ‘জালালাবাদে পাহাড় কেটে অবৈধ বসতি; মাদ্রাসার নামে সরকারি জায়গা দখল’ শীর্ষক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট উইং) বেগম রুবিনা ফেরদৌসী স্বাক্ষরিত একটি চিঠির বরাতে জানা যায়, শুনানিতে হাজিরের জন্য হাফেজ মো. তৈয়বকে তিনবার নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি হাজির না হওয়ায় চার স্থানে সর্বমোট এক লাখ ৫৬ হাজার ১৫০ ঘনফুট পাহাড় কাটা এবং একটি ছড়া শ্রেণির জমি ভরার করার অপরাধে পরিবেশ আইন অনুযায়ী তাকে ৭৮ লাখ ৭ হাজার ৫শ টাকা জরিমানার আদেশ দেন। জরিমানার টাকা আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অনুকূলে ডিমান্ড ড্রাফট কিংবা পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

পাশাপাশি আগামী তিন মাসের মধ্যে (৩০ জুন তারিখের মধ্যে) কর্তনকৃত পাহাড় পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই আদেশ মানা না হলে মামলা দায়েরসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক নূরুল্লাহ নূরী বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেন, জালালাবাদে মাদ্রাসার নামে নির্বিচারে পাহাড় কাটা হয়েছে। মাওলানা মো. তৈয়ব নামের ওই ব্যক্তি এসব পাহাড় কেটেছেন। এর আগে কিছু পাহাড় কাটার অভিযোগে তাকে ৩২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। বিষয়টি তিনি মন্ত্রণালয়ে আপিল করেছেন। এখন পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আলাদাভাবে আরো ৭৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সোমবার আমরা পত্রটি হাতে পেয়েছি। এখন সরকারি টাকা আদায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যথা মামলাসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।