বিদেশে বাড়ছে দেশি ছবির বাজার

প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২২, ১৭:১৮

সাহস ডেস্ক

বলিউড সিনেমার ব্যবসার মাইলফলক স্পর্শ করার অন্যতম কারণ ভারতের বাইরের অনেক প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা মুক্তি পাওয়া। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে বিপুল আয় করেছে ছবিগুলো। হিন্দি সিনেমার পাশাপাশি তামিল, তেলেগুসহ ভারতের অন্য আঞ্চলিক সিনেমাগুলো বিদেশে মুক্তি পাচ্ছে। তবে দেরিতে হলেও বাংলাদেশি সিনেমাও সেই পথেই হাঁটছে।

এরই মধ্যে ‘পাপ পুণ্য’ গত ২৭ মে উত্তর আমেরিকার ১১২ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। এখনো দেশটির বেশ কটি হলে চলছে ছবিটি। একইভাবে ‘শান’ মালয়েশিয়া শেষ করে এখন প্যারিসের বেশ কিছু হলে চলছে। ২৪ জুন থেকে উত্তর আমেরিকার ৮০টি থিয়েটারে চলবে ছবিটি। অন্যদিকে বেশ কয়েকটি উৎসব ঘুরে ৫ মে থেকে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মুক্তি পেয়েছে ‘রিকশা গার্ল’। ধারাবাহিকভাবে দেশি সিনেমা দেখার সুযোগ পেয়ে প্রবাসী দর্শকরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন এসব ছবি নিয়ে। এভাবে তৈরি হতে পারে বিদেশে বাংলাদেশি সিনেমার বাজার।

এর আগে ২০১৬ সালে কানাডাসহ বেশ কয়েকটি দেশে মুক্তি পায় অমিতাভ রেজার ‘আয়নাবাজি’। এবার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তিনি মুক্তি দিয়েছেন ‘রিকশা গার্ল’। এ ব্যাপারে অমিতাভ রেজা বলেন, ‘আয়নাবাজি যখন মুক্তি দেই, তখন খুব একটা ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। কিন্তু গত কয়েক বছরে দেশের বাইরে বাংলাদেশের সিনেমার একটা নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে। যদিও এখনো বাণিজ্যিক সাফল্য আসেনি। কিন্তু এই প্রক্রিয়া বাংলা সিনেমার জন্য নতুন পথ খুলে দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশের বাইরে বাংলাভাষী অনেক দর্শক আছেন। দেশের টানে দেশি সিনেমা দেখতে চান তারা। অবশ্যই এসব দর্শকের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশের সংস্কৃতির আবহে সিনেমা বানাতে হবে। বিদেশের মাটিতে দেশি সিনেমার বাজার বাড়াতে হলে গুণগত মানের বিকল্প নেই। কেননা হলিউড, বলিউডের সিনেমা দেখে অভ্যস্ত তারা।’

শুরুর দিকে বিদেশে অনেক বাংলাদেশি সিনেমা ব্যক্তি উদ্যোগে হল ভাড়া করে দেখানো হতো। ২০১৬ সালের শুরুর দিকে ‘অস্তিত্ব, মুসাফির, সম্রাট’ দেশের বাইরে এ প্রক্রিয়াতেই দেখানো হয়। সে সময় ছবিগুলো অতটা সুবিধা করতে পারেনি। পরে ‘শিকারি, আয়নাবাজি, নবাব, দেবী, ঢাকা অ্যাটাক, স্বপ্নজাল’ দেশের বাইরে দর্শক আলোচনায় আসে।

গিয়াস উদ্দিন সেলিমের আরেকটি সিনেমা ‘স্বপ্নজাল’ ২০১৮ সালে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে মুক্তি পায়। এই পরিচালকের জানান, দেশি সিনেমা যেভাবে দেশের বাইরে মুক্তি শুরু হয়েছে, এই প্রক্রিয়া ঠিকমতো চললে আগামী চার-পাঁচ বছরে বাংলাদেশি সিনেমা বিশ্ববাজারে কিছুটা হলেও জায়গা নিতে পারবে। তিনি আরও বলেন, “২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় শো ভাড়া করে ‘মনপুরা’ দেখিয়েছি। এখন বড় চেইন থিয়েটারে মুক্তি পাচ্ছে আমাদের ছবি। একসময় হিন্দি ছবিও ভারতের বাইরে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে শো ভাড়া করে দেখাতে হতো। এখন তারা কোথায় চলে গেছে। বিশ্ববাজারে ভারতীয় সিনেমার মহা দাপট। তাহলে আমরা পারব না কেন? গত ১৫ বছরে সিনেমার গল্প বলার জায়গায় এগিয়েছি আমরা। শুধু বাজেট দিলেই সিনেমা ভালো হয় না। বাজেটের সঙ্গে কাজটি ঠিকমতো করতে হবে। আমাদের কাছে সিনেমার বিশ্ববাজার ধরা ব্যাপার না। এ জন্য সিনেমা তৈরি থেকে প্রেক্ষাগৃহে নেওয়া পর্যন্ত সঠিক পথে এগোলেই হয়।”

স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো, বঙ্গজ ফিল্ম, বায়োস্কোপ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বাইরে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিবেশনার কাজ করছে। বঙ্গজ ফিল্ম ২০১৭ সাল থেকে দেশের বাইরের পরিবেশনার কাজ করছে। বিদেশে মুক্তি দেওয়া তাদের প্রথম ছবি ছিল ‘ভুবন মাঝি’। এরপর থেকে এ পর্যন্ত ৩২টি বাংলা সিনেমা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিবেশন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ৮ জুন ‘রিকশা গার্ল’, ১১ জুন ‘পাপ পুণ্য’ ও ২৯ জুন ‘শান’ অস্ট্রেলিয়ায় পরিবেশন করবে তারা।

বঙ্গজ ফিল্মের প্রতিষ্ঠাতা তানিম মান্নান বলেন, ‘শুরুর দিকে আমাদের সিনেমাগুলো থিয়েটার হল ভাড়া নিয়ে প্রদর্শন করতাম। তখন ভাড়া নিলেও হলের ওয়েবসাইটে আমাদের ছবির পোস্টার বা তথ্য জায়গা পেত না। কারণ তাদের আস্থার জায়গাটা কম ছিল। গত পাঁচ বছরে সেই বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়েছে। আমরা বড় বড় চেইন থিয়েটার হলে সিনেমা মুক্তি দিতে পারছি। ছবির তথ্যও তাদের ওয়েবসাইটে স্থান পাচ্ছে। এটি কিন্তু বাংলা সিনেমার একটা অর্জন। এখন আমাদের দেশের তরুণেরা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর কাজে ভালো করছেন। একসময় এই তরুণেরা সিনেমার ভিএফএক্স, অ্যানিমেশনের কাজ করবেন। তখন শুধু গল্পই নয়, চিত্রায়ণ, কারিগরি দিক থেকেও আমরা এগিয়ে যাব ’।

এর আগে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় প্রদর্শিত হয়েছে যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘শিকারি’ ও ‘নবাব’।

ছবির প্রযোজক আবদুল আজিজ বলেন, ‘এটি বাংলা সিনেমার জন্য অবশ্যই ভালো। বাজার বড় হচ্ছে। অবশ্যই যেন মান ভালো থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাইরে মুক্তির আগেই দেশে ছবিটি যেন হিট হয়। কারণ দেশে আলোচিত হলে বাইরের দর্শকেরও আগ্রহ বাড়ে।’
তবে বাংলাদেশি সিনেমা দেশের বাইরে মুক্তি দিতে অন্যান্য পণ্যের মতো সিনেমাশিল্পের জন্যও সরকারের নগদ সহায়তা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন এই প্রযোজক।

সাহস২৪.কম/টিএ/রাজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত