বনানীর উদ্দেশে শেষযাত্রায় আলী যাকের

প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২০, ১৫:১৬

সাহস ডেস্ক
ছবি: প্রথম আলো

ক্যান্সারের সাথে লড়াই করার মাঝেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রখ্যাত অভিনেতা আলী যাকের শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। বেলা ১১টায় তাকে নেওয়া হয় আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে। সেখান থেকে বনানীর উদ্দেশে শেষযাত্রা। জানাজা শেষে বিকেলে বনানী কবরস্থানের সবুজ মাটিতে শেষ নিদ্রা হবে তার।

ইরেশ যাকের জানিয়েছেন, মৃত্যুর দুই দিন আগে তার বাবার করোনা শনাক্ত হয়। সংগত কারণে শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধার আয়োজন করা হয়নি। আজ আসরের নামাজের পর বনানী কবরস্থানের মসজিদে জানাজা পড়ানো হবে। তারপর বনানী কবরস্থানে আলী যাকেরকে দাফন করা হবে।

তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশের শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলী যাকেরের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এছাড়া শোকবার্তায় মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী।

রাষ্ট্রপতি তার শোক বার্তায় বলেন, বরেণ্য অভিনেতা আলী যাকের ছিলেন দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার মৃত্যুতে দেশ একজন বরেণ্য অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে হারাল।

এছাড়াও শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুননেসা ইন্দিরা প্রমুখ।

চট্টগ্রামে ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করা আলী যাকের ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিক হিসেবে কাজ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি অভিনয় শিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করেন এবং মঞ্চ, টেলিভিশন ও রুপালি পর্দায় বৈচিত্র্যময় সব চরিত্রে অভিনয় করে পরিণত হন অন্যতম সফল অভিনেতায়। 

তিনি ১৯৭২ সালে আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে নাট্যাভিনেতা হিসেবে গৌরবময় ক্যারিয়ারের সূচনা করেন। তিনি ওই বছরে দলটির সাথে মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে অভিনয় করেন। একই বছরে তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেন এবং শেষ দিন পর্যন্ত এদের সাথে জড়িত ছিলেন।

আলী যাকের তার নাটকের দলের হয়ে ২০১৯ পর্যন্ত ১৫ নাটকে নির্দেশনা এবং ৩১টিতে অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে কয়েকটি হলো- কোপেনিকের ক্যাপ্টেন, গ্যালিলিও, নূরলদীনের সারাজীবন, ম্যাকবেথ, অচলায়তন ও দেওয়ান গাজীর কিস্‌সা।

নূরলদীন, গ্যালিলিও ও দেওয়ান গাজীর ভূমিকায় আলী যাকেরের অভিনয় সমালোচক ও নাটকপ্রেমীদের কাছ থেকে বয়ে আনে বিশাল প্রশংসা। তিনি আজ রবিবার ও বহুব্রীহি টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করেও বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন।

বরেণ্য এ নাট্যজন শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হন। সেই সাথে তিনি তার বর্ণাঢ্য জীবনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক ও নরেন বিশ্বাস পদকসহ নানা সম্মাননা লাভ করেছেন।

আলী যাকের মৃত্যুকালে স্ত্রী সারা যাকের, ছেলে ইরেশ যাকের ও মেয়ে শ্রিয়া সর্বজয়াসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক আলী যাকেরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রী এক শোকবার্তায় বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশের শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলী যাকেরের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত