ব্রুস লি: মার্শাল আর্টের বর পুত্রের মৃত্যু রহস্য

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০১৯, ১৩:২৪

সংগৃহীত

দিনটা ছিলো ১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই। সেদিন হঠাৎ করেই তরুণ অভিনেতা এবং মার্শাল আর্ট শিল্পী ব্রুস লীর মৃত্যুর খবরে সারা বিশ্বেই শোক ছড়িয়ে পড়লো।

১৯৭৩ সালের জুলাই মাসে এমন একজন মানুষের মৃত্যু হয়েছিলো যিনি পশ্চিমা বিশ্বে চীনা সংষ্কৃতির ধারণা বদলে দিয়েছিলেন। জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন সনাতন মার্শাল আর্টের চর্চ্চা। তিনি ব্রুস লী।

তার বয়স হয়েছিলো মাত্র ৩২ বছর। হংকং এ কাউলুন টং-এর একটি বাড়িতে তিনি মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি বলছিলেন যে তার মাথা ধরেছে এবং এজন্যে তিনি মাথাব্যাথার ওষুধও খেয়েছিলেন। 

ব্রুস লী ছিলেন একজন সুপারস্টার। সারাবিশ্বেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো তার তরুণ ভক্তরা। অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্র গতিতে তিনি যেভাবে তার হাত ও পা ছুঁড়ে দিতেন সেই স্টাইল তরুণদের বিমোহিত করতো। সারা পৃথিবীতে হাতেগোনা যতো বিখ্যাত মানুষ আছেন এই ব্রুস লী তাদের একজন যিনি পশ্চিমা ও প্রাচ্যের সংস্কৃতির মধ্যে বৈষম্য দূর করে কিছুটা মিলন ঘটাতে পেরেছিলেন।


সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ব্রুস লীর হাজার হাজার ভক্ত। ব্রুস লীর মৃত্যু নাড়া দিয়েছিলো হংকং থেকে হলিউডকেও।
তার মরদেহ বহনকারী কফিন দেখার জন্যে রাস্তায় নেমে এসেছিল শোকাহত হাজার হাজার মানুষ। তাদের মধ্যে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রীরা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলো যুক্তরাষ্ট্রে চীনা কমিউনিটির খুবই সাধারণ লোকজনও


কোনো মুষ্টি বা ঘুসাঘুসি মোকাবেলা করা বা জিট কুন্ডোর ব্যাপারে ব্রুস লীর ছিলো নিজস্ব একটি দর্শন বা ধারণা। এতে মুগ্ধ হয়ে তরুণ ড্যান ইনোস্যান্টা এই কারাটে শেখার জন্যে উন্মুখ হয়ে পড়েছিলেন। এরপর ড্যান ইনোস্যান্টা ব্রুস লীর সাথে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, "মার্শাল আর্ট নিয়ে ব্রুস লী সবসময় গবেষণা করতেন। পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতেন। একেকটা দিন তার সবকিছু মনে হতো নতুন, একেবারে আনকোরা।"

আঠারো বছর হওয়ার আগেই তিনি বিশটির মতো ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন। প্রথম তিনি পর্দায় আসেন একজন শিশু চরিত্রে, গোল্ডেন গেইট গার্ল ছবিতে। মার্শাল আর্টে তার ক্যারিয়ার গড়ে তোলার চেষ্টার কারণে তিনি রুপালী পর্দা থেকে দূরে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি চোখে পড়েন প্রযোজক উইলিয়াম ডজিয়েরের। ১৯৬৬ সালে এবিসি টেলিভিশন সিরিজ দ্যা গ্রিন হর্নেটে তাকে দেখা যায় কেটো চরিত্রে।

একই সাথে তিনি মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজও চালিয়ে গেছেন। কয়েকটি ছবির কোরিওগ্রাফ্রার হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।

১৯৭১ সালে তিনি হংকং-এ চলে যান। তার গ্রিন হর্নেট ছবির জন্যে ততোদিনে তিনি হংকং-এর ঘরে ঘরে পরিচিত নাম হয়ে উঠেছিলেন।এখানে তিনি প্রথম প্রধান একটি চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটির নাম দ্য বিগ বস। এই ছবিটি তাকে খুব বড় ধরনের নাম এনে দেয়। বক্স অফিসেও বড় রকমের সাফল্য পায় এই ছবিটি।

১৯৭২ সালে ব্রুস লী অভিনয় করেন ফিস্ট অফ ফিউরি ছবিতে। এর আগে দ্য বিগ বস যে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলো সেটিকেও ভেঙে দেয় এই ছবিটি। কিন্তু তরুণ এই অভিনেতার প্রতিভা আসলে চোখে পড়ে তার তৃতীয় সিনেমা- ওয়ে অফ দ্যা ড্রাগনে। এই ছবিটির কাহিনী লিখেছেন তিনি। পরিচালক, প্রধান তারকা এবং কোরিওগ্রাফারও ছিলেন তিনি নিজেই।ব্রুস লীর ছবির সাফল্য তাকে জনপ্রিয় করে তোলে চীনেও। তারপর মার্শাল আর্ট ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে সারা বিশ্বে।

কিন্তু হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিনি। ১৯৭৩ সালের মে মাসে। ডাবিং করার সময়। তখন তার মস্তিস্কে এক ধরনের সমস্যা ধরা পড়ে যা চিকিৎসা শাস্ত্রে পরিচিত সেরেব্রাল এডেমো হিসেবে।

ডাক্তররা তার মস্তিস্কের ফুলে উঠা কমাতে সক্ষম হন। কিন্তু ছ'সপ্তাহেরও কম সময় পর তার মাথাব্যাথা শুরু হয়। তিনি তখন একটি পেইনকিলার বা ব্যাথানাশক ওষুধ খান যার মধ্যে ছিলো অ্যাসপিরিন ও ট্রা্ঙ্কুলাইজার

তাদের নায়ককে বিদায় জানাতে হংকং-এর রাস্তায় সেদিন লাইন ধরে নেমে এলো ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ। শোকাহত ভক্তদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের ব্যারিকেড বসাতে হয়েছিলো।

তার মরদেহ রাখা হয়েছিলো খোলা একটি শবাধারে, যাতে লোকজন তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাকে একবার হলেও শেষবারের মতো দেখতে পারেন এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেন। তারপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে, তার নিজের বাড়িতে।

তার এ মৃত্যু এখনো রহস্যে মোড়া। কিন্তু সে অন্য এক গল্প। সনাতন মার্শাল আর্টকে বহির্বিশ্বে জনপ্রিয় করে তোলা, পশ্চিমা সংস্কৃতির সাথে এশীয় সংস্কৃতি, বিশেষ করে চীনা সংস্কৃতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন ব্রুস লি। তার কারণে চলচ্চিত্র জগতে তৈরি হয়েছিল নতুন এক ধারা। এ ক্ষণজন্মা শিল্পীর মৃত্যুর এত বছর পরও তার ভক্তের সংখ্যা কমেনি, বরং দিনদিন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের কাছে তিনি এখনও চির নতুন জীবন্ত এক কিংবদন্তি।

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত