ব্র্যাক হোপ ফেস্টিভ্যাল

শহর মাতবে ফ্ল্যাশমবে, সাজবে শিল্পকর্ম ও কিওস্কে

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:০৯

সাহস ডেস্ক

ব্র্যাক হোপ ফেস্টিভ্যাল ২০২৩-কে সামনে রেখে মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) থেকে রাজধানীজুড়ে শুরু হচ্ছে বিভিন্ন আয়োজন। এ উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন স্থানে হতে যাচ্ছে ফ্ল্যাশমব, তৈরি হচ্ছে ইনস্টলেশন আর্ট এবং কিয়স্ক। আগামী ৯-১১ ফেব্রুয়ারি তিনদিনব্যাপী বর্ণিল অনুষ্ঠানমালা নিয়ে আসছে ব্র্যাক হোপ ফেস্টিভ্যাল।  

প্রথম ফ্ল্যাশমব অনুষ্ঠিত হবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে, ২৪ জানুয়ারি তারিখে। দ্বিতীয়টি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬ জানুয়ারি এবং শেষেরটি আয়োজিত হবে তেজগাঁও আড়ং ফ্ল্যাগশিপ স্টোরে ৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে।  

বিশ্বজুড়ে ৫০ বছর ধরে ব্র্যাকের আশা উদ্দীপনের যাত্রাকে ধারণ করে তৈরি থিম সং-এর আদলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফ্ল্যাশমবগুলো। বিশ্বের ১০ কোটির বেশি মানুষের জীবন পরিবর্তনের সহযোগী ব্র্যাকের নিরন্তর কাজ করে চলার গল্প গানটির উপজীব্য। এতে কণ্ঠ দিয়েছেন দেশের প্রখ্যাত শিল্পীবৃন্দ। গানটি ইউটিউবে দেখুন এই লিংকে। https://www.youtube.com/watch?v=7Sih7Og4-30

২৫ জানুয়ারি থেকে বসবে আর্ট ইনস্টলেশন: রাজধানীর একাধিক জনসমাগম স্থলে হোপ ফেস্টিভ্যালের প্রতিপাদ্যের ওপর নির্মিত শিল্পকর্ম স্থাপন করা হবে। এই উৎসবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রকাশের পাশাপাশি ব্র্যাকের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রার চিত্রও প্রতিফলিত হবে এই কাজগুলোতে। 

২৪ জানুয়ারি থেকে খুলবে কিয়স্ক:  অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের পাশাপাশি, রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রেজিস্ট্রেশন কিওস্কগুলো বসানো হবে। এখানে আগতরা রেজিস্ট্রেশনের পাশাপাশি নানান সামাজিক সমস্যার সমাধান (শিক্ষা, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও মানসিক স্বাস্থ্য) নিয়ে নিজেদের আইডিয়াও জমা দিতে পারেন। নির্বাচিত আইডিয়া প্রদানকারীরা দেশের প্রখ্যাত চেঞ্জমেকারদের কাছে তাঁদের আইডিয়া তুলে ধরার সুযোগ পাবেন।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্‌ বলেন, "আমরা বিশ্বাস করি, অংশীদারিত্ব ছাড়া কোনো সামাজিক পরিবর্তন সম্ভব নয়। বাধা মোকাবিলায় নতুন ও উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে আমাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। তরুণ প্রজন্মের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা আগামী দিনের পথচলায় ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে সবাইকে যুক্ত করতে চাই।" 

তরুণ প্রজন্মের মাঝে আশা ও অনুপ্রেরণার জাগরণ হোপ ফেস্টিফ্যালের লক্ষ্য। “হৃদয়ে বাংলাদেশ”, “সম্ভাবনার শক্তি” এবং “যে পৃথিবী আমরা গড়তে চাই” এই তিনটি প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাজানো হয়েছে তিন দিনের অনুষ্ঠানমালা। 

শিক্ষা, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও মানসিক স্বাস্থ্য এই পাঁচটি বিষয়ের ওপর বিশেষ আলোকপাত করা হবে এই অনুষ্ঠানমালায়। 

বাংলাদেশের প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ, হোপ ফেস্টিভ্যালের প্রথম দিনের প্রতিপাদ্য “হৃদয়ে বাংলাদেশ”। ৯ ফেব্রুয়রি বিকাল পাঁচটা থেকে উৎসব শুরু হবে। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে উদ্বোধনের পর ব্র্যাক প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবনীভিত্তিক সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেবেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্। এদিন রাগসঙ্গীত পরিবেশন করবে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়, পুথিঁপাঠ করবেন প্রখ্যাত অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। একটি প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে মহান মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হবে। শত প্রতিকূলতা পার হয়ে স্বপ্নজয়ী ডা. আফসানা আকতারের জীবনালেখ্য নিয়ে তৈরি প্রাচ্যনাট পরিবেশিত “প্রতিদিনের যোদ্ধা” প্রদর্শিত হবে। ডা. আফসানা নিজেও এদিন মঞ্চে উপস্থিত হয়ে নিজের জীবনের গল্প তুলে ধরবেন। দেশের সাংস্কৃতিক সম্ভারের নানা উপস্থাপনা-পরিবেশনার পাশাপাশি “লালন অ্যান্ড ফ্রেন্ডস” সঙ্গীত পরিবেশন করবে।  

“সম্ভাবনার শক্তি” প্রতিপাদ্যে সাজানো দ্বিতীয় দিনের লক্ষ্য চরম প্রতিকূলতা জয়ে মানুষের অদম্য আত্মশক্তির উদযাপন।  নিরন্তর সংগ্রামী মানুষ বাধার মুখে সাময়িকভাবে থমকে যায়, কিন্তু থামে না। এদিন নানা আয়োজনে সেইসব অদম্য মানুষের গল্পই তুলে ধরা হবে। এদিন সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও হবে এই প্রতিপাদ্যকে ধরে। এদিন ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামারা হাসান আবেদের স্বাগত বক্তব্যে মূল অনুষ্ঠানপর্ব শুরু হবে। বাক-প্রতিবন্ধীদের যোগাযোগের মাধ্যম ইশারা ভাষায় পরিবেশনা করবেন আহসান হাবীব ও তাঁর দল। সব লিঙ্গের মানুষের সমান অধিকারের দাবি তুলে ধরে “সমতন্ত্র” বিষয়ক পরিবেশনাও থাকবে এদিন। যাত্রিক-এর নৃত্যনাট্য, আড়ং-এর ফ্যাশন শো-র পাশাপাশি সঙ্গীত পরিবেশনা করবেন রেনেসাঁ, ফিডব্যাক, ইমন চৌধুরী অ্যান্ড ফ্রেন্ডস, মিফতাহ জামান এবং গার্ল পাওয়ার ব্যান্ড। 

“যে পৃথিবী আমরা গড়তে চাই” প্রতিপাদ্যে আয়োজিত তৃতীয় দিন সামাজিক পরিবর্তনে অবদানের জন্য তরুণ অগ্রপথিকদের “আমরা নতুন নেটওয়ার্ক ইয়াং চেঞ্জমেকার্স অ্যাওয়ার্ড” এবং পেশাগত ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তরুণ পেশাজীবীদের “তাগা আউটস্ট্যান্ডিং ইয়ং প্রফেশনালস অ্যাওয়ার্ড” প্রদান করা হবে। এদিন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করবে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস কোয়ার, নগরবাউল জেমস, আর্টসেল, নেমেসিস, সাউন্ডস অব চেঞ্জ বাই মাশা ইসলাম, চন্দনা মজুমদার প্রমুখ।  

উৎসবের তিনদিনজুড়ে থাকছে সংস্কৃতির পাঠসহ নানা বিষয়ে কর্মশালা। শিল্পী মোর্শেদ মিশুর পরিচালনায় একটি শিল্প কর্মশালা, রিকশা পেইন্টের ওপর কর্মশালা, পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে শিখনপর্ব, চেঞ্জমেকারদের উন্মুক্ত কর্মশালা, মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষ পর্ব এগুলোর অন্যতম। থাকছে শিশুদের খেলতে খেলতে শেখার জন্য ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলাপমেন্ট আয়োজিত একটি বিরাট প্লেল্যাব বা খেলার জগৎ। পুতুল নাচ, মানব-পাঠাগার, বায়োস্কোপ, প্রদর্শনীসহ আনন্দ উপভোগ আর ভাবনা উসকে দেওয়ার জন্য বহুবিধ আয়োজন। ব্র্যাকের সামাজিক মাধ্যমের পেজে গেলেও পাবেন এই পুরো আয়োজনের বিবরণী।

তিন দিনের উৎসবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও যাতে নির্বিঘ্নে শামিল হতে পারেন, উপভোগ করতে পারেন সব আয়োজন সেজন্য উৎসব কর্তৃপক্ষ প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

উৎসবস্থলে ব্র্যাকের প্রাতিষ্ঠানিক ইকোসিস্টেমটিকে ফুটিয়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা ও আয়োজনও রাখা হবে। এতে ব্র্যাক ব্র্যান্ডের বহুমুখী সামাজিক উন্নয়ন কার্যক্রম, সামাজিক ব্যবসা কর্মকাণ্ড, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিনিয়োগসহ বিস্তৃত পরিচয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ তুলে ধরা হবে। 

হোপ ফেস্টিভ্যালে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের সহ-আয়োজক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, বিকাশ, ব্র্যাক ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।

সাহস২৪.কম/এসএস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত