দাবি মানার আশ্বাসে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত

প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২২, ১৩:৫৮

শেখ নাদীর শাহ্, খুলনা

দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দিবাগত রাত ২টার দিকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষনা দেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) অপরাজিতা হলের আবাসিক ছাত্রীদের রান্নার সরঞ্জাম জব্দের নোটিশের প্রতিবাদে ১০টার দিকে ছাত্রীরা প্রথমে হলের ভেতরের তালা ভেঙে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় তারা হল প্রাধ্যক্ষের বাজে আচরণ ও হুমকিরও প্রতিবাদ জানান। পরে অপরাজিতা হলের ছাত্রীদের সঙ্গে বিক্ষোভে যোগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য হলের শিক্ষার্থীরাও হাদী চত্বরে অবস্থান নিয়ে নিজেদের ১০ দফা দাবি জানান।

শিক্ষার্থীদের ১০ দাবি: রাইস কুকার ও রান্নার সরঞ্জামাদি ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। যৌন হয়রানির প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলার কারণে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও পারিবারিক শিক্ষা তুলে কথা বলায় ক্ষমা চাইতে হবে। হলে প্রয়োজনে অভিভাবক ও নারী আত্মীয়দের থাকার অনুমতি দিতে হবে। পানিতে পোকা ও খাবারের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে। প্রভোস্টদের নিজ ডিসিপ্লিনের স্টুডেন্টদের ডেকে ব্যক্তিগত এবং একাডেমিক বিষয়ে হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে। হলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে সিট বাতিলের হুমকি দেওয়া বন্ধ করতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে হলের ছাত্রীদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। আজকের (মঙ্গলবার) ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে হুমকি দেওয়া যাবে না। এবং দাবি না মানলে প্রভোস্ট কমিটিকে পদত্যাগ করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন অপরাজিতা হলের প্রভোস্ট রহিমা নুসরাত রিমি। তিনি বলেন, তাদের সকল দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। কারণ আমরা চাইনা সন্তানেরা কষ্ট পাক। তাদের হল, তারা যেভাবে চাইবে আমরা সেভাবে চালাব। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী কখনও প্রতিপক্ষ হতে পারে না। এটা আমরা বিশ্বাস করি না।

এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, হলের প্রতিটি কক্ষ থেকে ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম (রাইস কুকার, হিটার) আগামী সাতদিনের মধ্যে সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষ। কিন্তু ছাত্রীরা এটা করতে রাজি নন। এ নিয়ে বিভিন্ন মিটিংয়ে ছাত্রীদের বাবা-মা তুলে কথাও বলেছেন প্রাধ্যক্ষ। তিনি ছাত্রীদের ভয়-ভীতি দেখান ও হুমকি প্রদর্শন করেন। ছাত্রীরা ভয়ে এর প্রতিবাদ করতে পারেন না বলেও অভিযোগ করেন তারা।

হলের প্রোভোস্ট, সহকারী প্রোভোস্ট ছাত্রীদের সাথে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ধমক দেওয়া থেকে শুরু করে সিট বাতিলের হুমকি দেন। মঙ্গলবার এক ছাত্রী ওই হলে বটি দিয়ে নিজের গলা কাটে  আত্মহত্যার চেষ্টা করলে পরবর্তীতে হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেঁচে যান বলেও জানান তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রীদের রান্না করার সরঞ্জাম জব্দ করার নিদের্শ দেয় হল কর্তৃপক্ষ। নির্দেশনায় বলা হয়, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, রাইস কুকার, হিটারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম না সরালে, যার রুমে এগুলো পাওয়া যাবে তার সিট বাতিল হয়ে যাবে।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, কিছুদিন আগে ফেসবুকে কমেন্ট করাকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রীকে ৪৫ মিনিট ধরে ধমক দেয় এবং শাসায় হল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ছাত্রীরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জানালে সমস্যা সমাধান না করে উল্টো শাসানো হয়।

ছাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, সহকারী প্রভোস্ট ছাত্রীদের হুমকি দিয়ে বলেছেন, হল তোমাদের সুযোগ, অধিকার নয়। যার সমস্যা সে হল থেকে নেমে যাও। এ কারণে বিক্ষোভ শুরু করেছেন বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত