‘অযোগ্যতা’র অভিযোগে আন্দোলনের মুখে উইলস লিটলের অধ্যক্ষের পদত্যাগ

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২১, ১৬:২১

ছবি: এফসি বাঁধন/সাহস২৪.কম

সাবেক ও বর্তমান শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন রাজধানীর রমনার খ্যাতনামা উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন।

প্রতিষ্ঠানে কোটি টাকার চাকুরী বাণিজ্য, দুর্নীতি, কথা বললে শিক্ষক-কর্মচারীদের বহিষ্কার বা চাকরীচ্যুত করা, বেতন ভাতা ও বোনাস - অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রাপ্য কল্যাণ ভাতা এবং গ্রাচুইটি প্রদান না করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিলো তার বিরুদ্ধে। শিক্ষকদের অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান টিটুর ক্ষমতাবলেই চলতো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের এ রমরমা অন্ধকার বাণিজ্য। 

গতকাল মঙ্গলবার (০৯ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে গণমাধ্যমকে তার পদত্যাগের বিষয়টি জানান আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি’।

মঙ্গলবার সকাল থেকে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ এর প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন শতাধিক সাবেক ও বর্তমান শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ। প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের নানান অপকর্মের কথা তুলে অপসারণের জোর দাবি তোলেন তারা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষকেরা জানান, ছয় বছর থেকে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিষদ দখল করে আছে বর্তমান গভর্নিং বডি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন। নীতিমালা থাকলেও দিচ্ছেন না স্থায়ী অধ্যক্ষের নিয়োগ। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে খেয়াল খুশি চালিয়ে যাচ্ছেন রাজত্ব। প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই দিন দুপুরে চলতো স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভা সমাবেশ। 

শিক্ষকেরা মঙ্গলবার সকালে দীর্ঘ সময় কাকরাইলের ভিআইপি রোড অবরোধ করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে ‘অযোগ্য’ উল্লেখ করে অপসারণের দাবি তোলেন তারা।

এক পর্যায়ে ঢাকা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। পরে রাতে আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন।

আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগ ছিল, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অদক্ষতায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। শিক্ষক-কর্মচারীরা ঠিকমতো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না।

সমাবেশে জনৈক বক্তা বলেন, আবুল হোসেন প্রায় ছয় বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এই দীর্ঘ সময়েও স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়নি। ফলে এখন কলেজে কোনও শৃঙ্খলা নেই। শিক্ষার মান খারাপ হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীও কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। অবসরে যাওয়া শিক্ষকেরাও ঠিকমতো সুবিধা পাচ্ছেন না। আরও কিছু অনিয়ম আছে। এসব কারণে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

কান্না জড়িত কণ্ঠে একজন সাবেক শিক্ষকের স্ত্রীর বক্তব্যে জানা যায়, উনার স্বামীর কল্যাণ ভাতা ও গ্রাচুইটি আটকে দেওয়ায় আত্মহত্যা করেন। ভুক্তভোগী শিক্ষকের স্ত্রী বক্তব্য প্রদানকালে এতটাই ভেঙে পড়ছিলেন যে তার পুরো বক্তব্যটি স্পষ্টভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল ও কলেজ দেশের প্রথম ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। সেন্ট জোসেফাইন উইলস ১৯৫৬ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশজুড়ে স্কুলটির সুনাম ছড়িয়ে পরে। তারই ধারাবাহিকতায় বিগত তিন মেয়াদে দেশের সেনাবাহিনীর প্রেষণে কর্নেল পদমর্যাদার একজন এডুকেশন কোরের অফিসারকে প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। একই সাথে বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশনার, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং সরকারের একজন মন্ত্রী প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

সর্বশেষ সেনা কর্মকর্তা চলে যাওয়ার পর সাময়িক সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে মো: আবুল হোসেনকে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু আজ দীর্ঘ ছয় বছরেও স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়নি।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেনের অপসারণ ছাড়াও কর্মচারীদের নির্যাতনের টর্চার সেল বন্ধ করা, বরখাস্তকৃত শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বপদে বহাল, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের স্থায়ী করা, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বৈশাখী ভাতা, বকেয়াসহ ইনক্রিমেন্ট প্রদান, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে সকল পদায়ন বাতিল করা, বিধি মোতাবেক অধ্যক্ষ নিয়োগ, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, অধ্যক্ষের অফিসে রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করা, এনটিআরসি ব্যতীত সকল নিয়োগ বন্ধ করা ও বিধি মোতাবেক জ্যেষ্ঠতা প্রদান করা ইত্যাদি দাবি না মানলে এ কর্মসূচি চলবে জানিয়ে কঠোর হুশিয়ারি দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষকেরা। এছাড়া এসব দাবি পূরণ না হলে আরও কঠোর পদক্ষেপেরও হুঁশিয়ারি দেন তারা।

সাহস২৪.কম/এসটি/এসএ.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত