মধ্যবিত্তের সমন্বয় সমাচার

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২৩, ১৯:০৭

রিয়াজুল হক
রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

যারা মাসিক বেতনেরভিত্তিতে কাজ করেন, যাদের আয় নির্ধারিত, যাদের বেতনের বাইরে কোন আয় নেই, অনেকের মতে তারাই মধ্যবিত্ত। সহজ কথায়, মধ্যবিত্তরা দারিদ্র্যসীমার উপরে বসবাস করেন কিন্তু তারা উচ্চবিত্ত নয়। 

মধ্যবিত্তের মোটামুটিভাবে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে-

  • তারা শিক্ষিত, রুচিশীল এবং মননশীল বিশিষ্টের হয়ে থাকেন
  • প্রবল আত্মসম্মান বোধ
  • অভাব-অনটন মুখ বুজে সহ্য করেন, তবু কারো কাছে হাত পাততে পারেন না
  • বিত্তবান কিংবা বিত্তহীনদের মত যেকোন কাজ করতে পারেন না
  • সমাজ কি বলবে -এ নিয়ে চিন্তিত থাকেন
  • সৃজনশীল ভূমিকা পালন করে থাকেন তারা

বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে উচ্চবৃত্ত বা নিম্নবিত্তের মানুষের কোন মিল নেই, তা বলা যাবে না। 

যেকোন সমস্যায় উচ্চবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্তের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী মধ্যবিত্তরা। তাদের সীমিত আয়। খরচ বেড়ে যাওয়ার একটা বিষয় থাকে। তাদের আয়ের বাড়িভাড়া ও গাড়িভাড়া খরচ দিতে হয় বেশি। বাচ্চাদের শিক্ষাবাবদ, ওষুধের খরচ, গ্যাস ও বিদ্যুৎবিল, মাসিক ডিপিএস ইত্যাদি খরচ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট যা থাকে তা দিয়ে দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী কেনেন। অর্থাৎ কোন খাতে তারা কত ব্যয় করবেন, তা মাসের শুরুতেই নির্ধারিত থাকে।

যদি কোন মধ্যবিত্ত পরিবারে মাসের ২৫ তারিখের পর বাকিতে পণ্য কিনতে হয়, তাহলে তার সারা বছরই সেইভাবে চলতে থাকে। যদি কোন মাসে বাচ্চার লেখাপড়ার খরচ কিংবা ওষুধের খরচ বেড়ে যায়, তবে সেই মাসে খাবারের জন্য কিছুটা কম খরচ করতে হয়।

আয় নির্দিষ্ট হওয়ায় হিসাব নিকাশ করে খাদ্যের ওপর খরচের সব ভার পড়ে।

যদি বাড়ি ভাড়া বেড়ে যায়, পরের মাস থেকে খাবারের মান একটু কমে, যতদিন পর্যন্ত বেতন না বাড়ে। এই হচ্ছে মধ্যবিত্তের অবস্থা। কোন দিকে যদি খরচ বেড়ে যায়, তাহলে তার প্রভাব পড়ে দিনের খাদ্য তালিকার উপর।

বাজারে যদি কোন পণ্যের চাহিদা তৈরী হয় তবে তার মূল্য বাড়িয়ে বিক্রি করা হয়। অনেক সময় কৃত্রিম সংকট তৈরি করেও মূল্য বাড়ানো হয়। ৬০ টাকা কেজি দরের চাল একদিন পর ৭০ টাকা। মধ্যবিত্ত পরিবার চাইলেই কিন্তু বেশি পরিমাণে কিনে রাখতে পারেন না।

কারণ তার আয় নির্দিষ্ট এবং খরচের তালিকা আগে থেকেই নির্ধারিত। যে কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর দাম বাড়লে তাদের খাদ্যের তালিকা বা পরিমাণ বিবেচনা করতে হয়। হয়ত আগে সপ্তাহে ৪দিন দুপুরে মাছ খেতেন, তখন কমিয়ে ২দিন খাচ্ছেন। সয়াবিনের পরিবর্তে কিনছেন পামওয়েল।  

মধ্যবিত্তরা চাইলেই বাচ্চার টিউশনি বন্ধ করে দিতে পারেন না, গ্রামে বাবা-মায়ের কাছে টাকা পাঠানো বন্ধ বা কারো কাছে হাত পাততে পারেন না। পারেন শুধু খাদ্য তালিকা পরিবর্তন করে জীবনমান পরিচালনা করতে।

তারা পারেন না অন্যের কাছে ছোট হতে। যে কারণে শুধু সমন্বয় করে কৌশলী হয়ে চলতে জানেন তারা।

  • লেখক: রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত