বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ

প্রকাশ | ১২ আগস্ট ২০২২, ১২:২৪ | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২২, ১২:৩০

অনলাইন ডেস্ক

খেলাপি ঋণে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ সোয়া লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। একই সাথে গত এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। ঋণ শ্রেণিকরণ ও প্রভিশনিংয়ের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর প্রতিবেদনটি অনুমোদন করেছেন। ব্যাংকগুলোর দেওয়া তথ্যানুসারে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সোয়া লাখ কোটি হলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি।

সূত্র জানায়, গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। গত জুনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।  এই ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ১০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। গত মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বেড়েছে আরও ১১ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা। ওই ছয় মাসে বেড়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের জুনে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। এক বছরে অর্থাৎ গত বছরের জুনের তুলনায় গত জুনে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের জুন মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। যা এযাবৎকালের এটাই সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের অঙ্ক।

খেলাপিদের বিশেষ ছাড় বন্ধ না হলে খেলাপি ঋণ কমবে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতি বিশ্লেষক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ছাড় পেতে পেতে এমন অবস্থা হয়েছে যে, খেলাপিরা এখন মনে করছে আমি ঋণ পরিশোধ না করলে আগামীতে আরও ছাড় পাব। এ কারণে যতদিন ছাড় থাকবে ততদিন এ খেলাপি বাড়তেই থাকবে। এগুলো কমাতে হলে কঠিনভাবে আইন করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ইদানীং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত আসছে। যে নীতিমালাগুলো দিচ্ছে সেগুলো ঋণখেলাপিদের আরও উৎসাহিত করছে। অন্যদিকে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন ভালো গ্রাহক। এছাড়া ব্যাংকগুলোও খেলাপি ঋণ আদায়ে বিমুখ হয়ে পড়েছে। কারণ এর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তাদের জবাবদিহিতা করতে হয় না।

তিনি আরও বলেন, হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ বা নীতিগুলো হতে হবে দীর্ঘস্থায়ী এবং ব্যাংকের জন্য মঙ্গলজনক। যাতে করে খেলাপি ঋণ, পুনঃতফসিল, প্রভিশন ঘাটতি কমে আসে। এসব সমস্যা সমাধানে একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা উচিত। এর আগেও খেলাপি সমস্যার সমাধান হয়েছে ব্যাংকিং কমিশনের মাধ্যমে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে কোনো গ্রাহক ঋণ পরিশোধ না করলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে তাকে খেলাপি করা হয়নি। ফলে আদায় তলানিতে নামলেও খেলাপি ঋণ কম ছিল। ২০২১ সালে বিশেষ সুবিধার ছাড় কিছুটা কমায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর খেলাপি ঋণ গিয়ে ঠেকে ১ লাখ ৩ হাজার ২৩ কোটি টাকায়। এখন কিছু সুবিধা তুলে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু তারপরও গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করছে না। বিশেষ করে বড় ঋণগ্রহীতারা।

করোনার মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ঋণ পরিশোধে বড় ছাড় দেওয়া হয়েছে। ঋণ নিয়মিত পরিশোধ না করলেও এখন খেলাপি করা হচ্ছে না। কিস্তি পরিশোধও অনেক শিথিল করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ঋণ শ্রেণিকরণের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করছে না।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.