আমদানি শুল্ক কমানোর পরেও বেড়েছে চালের দাম

প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২২, ১৬:৫২

সাহস ডেস্ক

আমদানি শুল্ক কমানো সত্ত্বেও গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে চালের দাম বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) চালের সরবরাহ বৃদ্ধি ও মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য ৩৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়েছে সরকার। দেশের অন্যতম প্রধান চাল উৎপাদন কেন্দ্র, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় কয়েক দিন আগে থেকে প্রতি মণ ধানের দাম ১০০ টাকা বা ৭ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকায় পৌঁছেছে।

এ ব্যাপারে চাল কল মালিকরা জানান, আমদানি শুল্ক কমলেও দেশের বাইরে থেকে চাল আমদানি করতে যে খরচ, তাতে স্থানীয় বাজারে পণ্য বিক্রি করে তারা মুনাফা করতে পারবেন না। ফলে ধান ও চালের দাম বেড়েছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সংকলিত বাজার মূল্যের তথ্য অনুযায়ী, চিকন চালের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। ঢাকার খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি ৬৪ থেকে ৮০ টাকা দামে এই চাল বিক্রি করেছেন। ভোক্তাদেরও গত সপ্তাহের চেয়ে বেশি দামে মাঝারি মানের ও মোটা চাল কিনতে হয়েছে।

এদিকে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার স্থানীয় ধান ব্যবসায়ী আব্দুল বারী জানান, ১ সপ্তাহ আগে থেকে তার এলাকায় ধানের দাম প্রতি মণে প্রায় ১০০ টাকা বা ৭ শতাংশ বেড়ে প্রায় ১ হাজার ৪৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) খাদ্য মূল্য সূচকে দেখা যায়, চালের দাম মে মাসে গত ১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর আগের ৪ মাসেও ধারাবাহিকভাবে চালের দাম বেড়েছে।

চাল কল পরিচালনা ও শস্য আমদানির সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান মজুমদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিত্ত মজুমদার বলেন, ‘আমদানি শুল্ক পুরোটা প্রত্যাহার না করা হলে চালের দাম কমার তেমন সম্ভাবনা নেই।’

তিনি আরও জানান, সরকার আমদানি শুল্ক কমানো সত্ত্বেও ধানের দাম বেড়ে গেছে। আমদানির খরচ কমলেও তা আমদানিকৃত চালের দামের চেয়ে বেশি হবে। ফলে বর্তমান দামে বিক্রি করলে তাদের লোকসান হবে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে চিকন চাল আমদানি করলে এর মূল্য হবে প্রতি কেজিতে ৬৫ টাকা। কিন্তু একই মানের চালের পাইকারি মূল্য বাংলাদেশে প্রতি কেজিতে ৬১ থেকে ৬২ টাকা। আমদানি করা হলে মাঝারি মানের স্বর্ণা চালের দামও বেশি পড়বে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আমদানিকারকরা আগের ৬২ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে চাল আমদানি করতে পারবেন। তবে প্রতিটি চালান আমদানির সময় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। রবিবার (২৬ জুন) খাদ্য মন্ত্রণালয় শস্য আমদানির অনুমতি নেওয়ার জন্য আবেদন ফর্ম প্রকাশ করেছে। ব্যবসায়ীদের এই ফর্ম পূরণ করে অনুমতি নিয়ে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হবে।

নওগাঁ ধান ও চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা জানান, শুল্ক কমানোর পর ধানের দাম বেড়েছে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছিলো আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করতে। কিন্তু শুন্য শুল্কে আমদানির সুযোগ দেয়নি সরকার।

বগুড়ার একজন চাল কল মালিক ও আমদানিকারক গোলাম কিবরিয়া বাহার জানান, বাংলাদেশে আমদানি শুল্ক কমানোর পর ভারতে চালের দাম প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা করে বেড়েছে।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলি জানান, স্থানীয় বাজারে আমদানি শুল্ক কমানোর প্রভাব আসতে কিছুটা সময় লাগবে। কারণ আমদানিকারকরা এখনও ভারত থেকে আমদানি করার প্রক্রিয়া শুরু করেনি। এ মুহূর্তে চালের দাম বাড়ছে কারণ আমদানির পরিমাণ এবং বোরো মৌসুম তুঙ্গে থাকার সত্ত্বেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বোরো ধান থেকে পাওয়া চালের পরিমাণও তুলনামূলকভাবে কম।

সাহস২৪.কম/টিএ/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত