পদ্মা সেতু: শরীয়তপুরে মৎস খাত সোনালী সম্ভাবনা

প্রকাশ : ২১ জুন ২০২২, ১৪:১১

সাহস ডেস্ক

মৎস খাতে সোনালী সম্ভাবনার দাড়প্রান্তে পদ্মার দক্ষিণ পাড়ের শরীয়তপুর। পদ্মা সেতু চালু হলে শরীয়তপুরসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে দেশের অন্যতম মৎস্য উৎপাদনকারী শরীয়তপুর জেলার মৎস্য খাতের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।

মৎসজীবীরা বলছেন, পদ্মা সেতু খুলে দিলে বছরে পাঁচশ থেকে ছয়শ কোটি টাকার মাছ ঢাকার বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। পরিবহন খরচ কম ও দামে বেশি হওয়ায় লাভ বেশি হবে বলে ধারণা তাদের। বিশেষ করে পদ্মা নদীর সুরেশ্বর পয়েন্ট থেকে আহরণকৃত ইলিশসহ যে কোন মাছ খুব সহজেই পাঠানো যাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্তত ৪০টি জেলায়। এতে উপকৃত হবেন মৎস খামারি, ব্যবসায়ী ও প্রান্তিক জেলেরাও।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পদ্মা ও মেঘনায় ঘেরা শরীয়তপুর জেলায় মাছ ধরা হয় ১৫ হাজার ৮৪০ হেক্টর এলাকাজুড়ে। এছাড়া ২ হাজার ৬২৬ হেক্টর জমিতে আছে ১৫ হাজার ১৮২টি মাছের খামার। জেলার ছয়টি উপজেলা থেকেই মাছ সড়ক পথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। আগে শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় যেতে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হতো ফেরিঘাটে। অপেক্ষমাণ সময়ে গাড়িতে থাকা মাছ অনেক সময় নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে আমূল পরিবর্তন আসবে মৎস্য ব্যবসায়। খুব দ্রুত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঢাকার বাজারে পৌঁছে যাবে মাছ। ফলে সময় ও খরচ সাশ্রয়ের মাধ্যমে ব্যবসার প্রসার ঘটবে অনেক বেশি।

নড়িয়া উপজেলার মৎস্য খামারি সরোয়ার হোসেন জানান, আগে ট্রাকে করে মাছ ঢাকায় পাঠালে ফেরি ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। এই বিড়ম্বনার সঙ্গে যুক্ত হতো বাড়তি খরচ। এ কারণে ঢাকার মাছের বাজার ধরা আমাদের জন্য কষ্টকর ছিল। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আমরা খুব সহজেই ঢাকার বাজার ধরতে পারবো। মাছ ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান বলেন, ‘শরীয়তপুর থেকে মাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ বরফ দিয়ে ট্রাকে করে ঢাকায় পাঠানো হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মাছগুলো ঢাকা পৌঁছাতে না পারলে ভালো বাজারদর পাওয়া যায় না। পদ্মা সেতু চালু হলে এই বিড়ম্বনা আর থাকবে না।’ সুরেশ্বর ঘাটের মাছের আড়তদার ইমরান হোসেন বাবু বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ঢাকার বাজারে মাছ পাঠানো কষ্টকর ছিল। পদ্মা সেতু চালু হলে খুব সহজের ঢাকার বাজার ধরতে পারবো আমরা।’

জেলা মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলায় প্রায় ১৫ হাজার ৮৪০ হেক্টর এলাকাজুড়ে নদীতে মাছ ধরা হয়। এছাড়া ২ হাজার ৬২৬ হেক্টর জমিতে ১৫ হাজার ১৮২টি মাছ খামার রয়েছে। ২৪ হাজার ৯২০ হেক্টর জমির ২২৫টি প্লাবন ভূমি ও ১ হাজার ২৭ হেক্টর জমির ৩৩৪টি ধানখেতে মাছ চাষ করা হয়। জেলার ৪ হেক্টর জমিতে ৩০টি গলদা চিংড়ির হ্যাচারি রয়েছে। জেলায় বছরে ২৮ হাজার ৫৪৩ মেট্রিক টন মাছ চাষ, সাড়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশের উৎপাদন ও ২ হাজর ৯৫৩ মেট্রিক টন নদীর অন্যান্য মাছের উৎপাদন করা হয়। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ মাছ উৎপাদের সঙ্গে জড়িত। শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার বলেন, ‘বর্তমানে জেলায় প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার মাছ উৎপাদন ও আহরণ করা হয়। এতদিন ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে ব্যবসায়ীরা মাছের বড় বাজারগুলো ধরতে পারতেন না। সেতু চালু হলে ব্যবসায়ীরা এর সুফল পাবেন।’

সাহস২৪.কম/এসটি/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত