পোশাক শিল্প অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে: রুবানা হক

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২১, ০২:৪৮

সাহস ডেস্ক

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে রপ্তানির নিম্নমুখী প্রবণতা সম্ভবত আগামী এপ্রিল পর্যন্ত বজায় থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক।

বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে তিনি এ কথা বলেন।

রুবানা হক বলেন, শিল্প আজ সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে। যথাযথ পুনর্গঠনের সুযোগ এমনকি প্রস্থান নীতি না থাকায় পশ্চিমা ক্রেতাদের দেওলিয়াত্ব বরণ, নির্দয়হীনভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল এবং ফোর্স মেজার্স ক্লোজেজের কারণে পোশাক শিল্প চরমভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কারখানাগুলো টালমাটাল পরিস্থিতির সাথে প্রাণান্তকর সংগ্রাম করে কোনোভাবে টিকে রয়েছে।

তিনি বলেন, শিল্প ভালো করছে এবং সরকারের কাছ থেকে সকল সহযোগিতা পাচ্ছে- এই যে একটি ধারণা অনেকেই পোষণ করছেন তার আজ প্রকৃত পুনর্মূল্যায়ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

খোলা চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২০২১ সালের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার এ মর্মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পত্র জারি করেছে।

লক্ষ্যণীয়  বিষয় হলো, এই নির্দেশনা এমন সময়ে দেয়া হলো যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে শিল্প গভীর অনিশ্চয়তায় হাবুডুবু খাচ্ছে। 

তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ অন্তত পক্ষে ৬ মাসের জন্য স্থগিতকরণ অথবা প্রণোদনা পরিশোধের মেয়াদ অন্তত পক্ষে আরও অতিরিক্ত এক বছর (বর্তমানে ২৪ মাস) সম্প্রসারিত করা না হলে শিল্পকে টিকিয়ে রাখা দুরূহ হবে।

রুবানা হক বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সদ্য ২০২০-এর ডিসেম্বর মাসের যে রপ্তানি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেখানেও আমাদের রপ্তানির উদ্বেগজনক চিত্র বহাল আছে। ডিসেম্বরে পোশাক রপ্তানিতে ধারাবাহিক পতন অব্যাহত থেকে পতন হয়েছিল ৯.৬৪ শতাংশ যে কারণে ২০২০ সালের বার্ষিক রপ্তানিতে ১৬.৯৪ শতাংশ দৃষ্টান্তহীন পতন ঘটেছে।

তিনি বলেন, ২০২০ সালের জুনের পর থেকে ওভেন পোশাক রপ্তানিতে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হয়েছে ডিসেম্বর মাসে। এ মাসে রপ্তানি প্রবদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৮.০৭ শতাংশ। উল্লেখিত মাসে নিটওয়্যার রপ্তানি ঋণাত্মক ০.৪৫ শতাংশ প্রবদ্ধি নিয়ে তূলনামলকভাবে স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। এর পেছনে রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে সৃষ্ট নিটওয়্যারের চাহিদা।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, গত দুই বছরের রপ্তানির প্রবণতার দিকে তাকালে আমরা দেখি যে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর সময়ে রপ্তানি প্রবদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ২৬.০৩ শতাংশ এবং ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর সময়ে প্রবদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ১৪.৩২ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসের রপ্তানিতে (২ বছরের) প্রবদ্ধির পরিবর্তন হয়েছে ঋণাত্মক ৮.৫৫ শতাংশ। এর অর্থ হলো, আমরা ২০২০ সালে যা রপ্তানি করেছি, তা ২০১৮ সালে যা রপ্তানি করেছিলাম তার তুলনায় ৮.৫৫ শতাংশ কম।

তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্ব দেখেছে, ইউরোপ ও মার্কিন যক্তরাষ্ট্রে লকডাউনের প্রভাব কী এবং খুচরা বিক্রয় ও চাহিদার ওপর সেগুলো কী প্রভাব রেখেছে। বিশ্ব দেখেছে স্মরণকালের সবচেয়ে মন্দ ক্রিসমাস সেল। এসবের প্রভাবে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে পণ্যের মূল্য কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ।

‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অনিশ্চয়তা আর শঙ্কায় আমরা বিপর্যস্ত। যেহেতু টিকা প্রাপ্যতা এখনও নিশ্চিত হয়নি এবং এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরাজ করছে, তাই আমাদের আশঙ্কা, রপ্তানির এই নিম্নমুখী প্রবণতা সম্ভবত চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বজায় থাকবে’।

এ পরিস্থিতিতে বিজিএমইএ সভাপতি নীতি নির্ধারকদের শিল্পের বর্তমান প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝাতে সক্ষম হওয়ার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত