অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে সফল উদ্যোক্তা রাজীব হোসেন

প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:২১

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজীব হোসেন বাংলাদেশের অন্যতম একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তা।  অস্ট্রেলিয়ায় দীর্ঘ ৮ বছর পড়াশোনা করে দেশে ফিরে হয়ে উঠেছেন সফল উদ্যোক্তা। তার পড়াশোনা অর্থনীতিতে হলেও বর্তমানে তিনি চষে বেড়াচ্ছেন আইটি জগত। দক্ষতার সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান, তার মধ্যে রয়েছে আইটি রিলেটেড ফ্যানফেয়ার ও ট্যালেন্ট প্রো। রাজীব হোসেনের সফলতার গল্প থাকছে এবারের পর্বে। 

প্রশ্ন : কেমন আছেন?

উত্তর: জ্বী, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

প্রশ্ন : আপনার ছোটবেলার স্বপ্ন কি ছিল?

উত্তর: ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল অর্থনীতিবিদ হওয়া বা অর্থনীতি রিলেটেড কিছু করা।

প্রশ্ন: আপনার ২টি আইটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সে সম্পর্কে জানতে চাই। 

উত্তর: আসলে আমি পড়াশোনা করেছি অর্থনীতিতে । দেশের বাইরে পড়াশোনায় কাটিয়েছি অনেকটা সময়। কাজ্ করেছি বিখ্যাত আইটি প্রতিষ্ঠান Adobe-তে। সেখানে কাজ করতে গিয়ে আইটির উপরে একটা ভালো লাগা কাজ করে।  মনে হয়েছে আইটি নিয়ে কাজ করার অনেক স্পেস  রয়েছে। পরে দেশে ফিরে ভিডিও শেয়ারিং আ্যাপস ফ্যানফেয়ার আর সফট্ওয়্যার সলুশন কোম্পানি ট্যালেন্ট প্রো নিয়ে কাজ শুরু করি। 

প্রশ্ন: বর্তমানে ফ্যানফেয়ার বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় একটি ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম, সেটি সম্পর্কে জানতে চাই। 

উত্তর: চাকরি করার সময়ে আমি বরাবরই চেয়েছি টেক নিয়ে কাজ করতে। সে সময় থেকে এখন অবধি আমি নিয়মিত মার্কেটও রিসার্চ করেছি।  সবসময় আমি মার্কেটের গ্যাপ-টা খোজার চেস্টা করেছি। সেখান থেকে মনে হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের এন্টারটেইনমেন্ট-এর জায়গা খুবই কম। তখন আমি চেয়েছি এমন একটা প্ল্যাটফর্ম থাকবে যেখানে মানুষ আনন্দ খুঁজে পাওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও বেনিফিটেড হবে।ইউজারদের পাশাপাশি ছোট-বড় নানান ব্র্যান্ডও যুক্ত হতে পারবে এই আ্যাপে। কোন ব্যাবহারকারী মানস্মত ভিডিও কনটেন্ট শেয়ার করলে আর সেই কনটেন্ট ব্র্যান্ডের ভালো লাগলে ব্র্যান্ড সেই ভিডিও-তে স্পন্সর করতে পারবে। এর ফলে সেই ভিডিও ক্রিয়েটর পয়েন্টস আর্ন করবে। ব্যবহারকারীরা তাদের জমানো এফ:পয়েন্টস দিয়ে ফ্যানফেয়ার শপ থেকে পছন্দের সব প্রোডাক্টস ডিসকাউন্টে শপিং করতে পারবেন। সাথে সাথে এসব ব্র্যান্ডও তাদের প্রমোশনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রোডাক্টসও বিক্রি করতে পারবেন এই ফ্যানফেয়ার আ্যাপসের মাধ্যমে।

প্রশ্ন: ফ্যানফেয়ার নতুন কি কি ফিচার নিয়ে কাজ করছে?

উত্তর: আমার কাছে মনে হয়েছে বাংলাদেশে সোস্যাল-কমার্সের জায়গায় কাজের বড় একটি সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশে আলাদা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে অনেক ই-কমার্স ও সোস্যাল মিডিয়া রয়েছে। তবে যৌথভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ও ই-কমার্সের সকল সুবিধা নিয়ে কোনও প্ল্যাটফর্ম এদেশে  ব্যবহারকারীদের সামনে হাজির হতে পারেনি। সেই জায়গা থেকে আমি চেয়েছি সোস্যাল মিডিয়া এক্টিভিটি থাকবে, বিভিন্ন ব্র্যান্ড থাকবে, ইউজার থাকবে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্পন্সরশীপ থাকবে, ভিডিও কনটেন্ট থাকবে, প্রোডাক্টস শপ থাকবে এবং সর্বোপরি সোস্যাল মিডিয়া ও ই-কমার্সের যত কিছু আছে সব সুবিধা থাকবে এক প্ল্যাটফর্মে। নতুনত্বের আরেক জায়গা হচ্ছে ব্যবহারকারীদের ভিডিওতে মনিটাইজেশন পা্ওয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে যেমন অনেক শর্ত থাকে এখানে সেরকম কিছুই নাই। ভিডিও মানসম্মত হলে বা ব্র্যান্ডের পছন্দ হলে প্রথম ভিডিও থেকেই ব্যবহারকারীরা আর্ন করা শুরু করতে পারবেন। 

প্রশ্ন: ফ্যানফেয়ারে ইউজার ও ব্র্যান্ডরা কিভাবে কাজ করে?

উত্তর: ফ্যানফেয়ার যেহেতু ভিডিও শেয়ারিং আ্যাপস তাই এখানে ইউজাররা ৫ সেকেন্ড থেকে ৭ মিনিটের নানান ক্যাটাগরির ভিডিও শেয়ার করতে পারেন। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভিডিও, কুইজ ও পোলস কনটেস্ট চলছে এই আ্যাপে। এই সব জায়গায় ভিডিও শেয়ারের মাধ্যমে ব্যাবহারকারীরা পুরষ্কার ও এফ পয়েন্ট জিতে নিতে পারবে। ব্র্যান্ডরা বিভিন্ন ভিডিওতে স্পন্সরের পাশাপাশি কনটেস্ট, পোল এবং গেমস-এ স্পনসর করতে পারবেন। নামীদামী ব্র্যান্ডরা নিজেদের চ্যানেল ও নানান ধরনের অফার প্রমোট করার সুযোগ পাবে এই আ্যাপস-এ। ভবিষ্যতে পেইড এসাইনমেন্ট দিতে পারবে ছোট-বড় ইনফ্লুয়েন্সারদের। 

প্রশ্ন: আপনার এই অ্যাপে কি কি চ্যালেঞ্জ ছিলো?

উত্তর: শুরুর দিকে আসলে সব বিষয়েই চ্যালেঞ্জ থাকে। আমার ক্ষেত্রেও তাই। টেক চ্যালেঞ্জ, গ্লোবাল জায়ান্টদের সাথে প্রোডাক্টের তাল মিলানোর চ্যালেঞ্জ, কিভাবে প্রমোশন হবে, ইউজাররা কিভাবে যুক্ত হবে সব মিলিয়ে কঠিন ছিলো আরকি। তবে আলহামদুলিল্লাহ সব কিছুই সামলে নিয়েছি। যেহেতু এটি একদমই ইউনিক সেহেতু মানুষের এটি বুঝতে তো একটু সময় লাগবেই। 

প্রশ্ন: আপনার প্রতিষ্ঠানে কতজন কর্মী আছেন বর্তমানে?

উত্তর: আমার টেক রিলেটেড দুটি প্রতিষ্ঠান। ফ্যানফেয়ারে আছে ২৫+ জন আর ট্যালেন্ট প্রোতে আছে ৫০+ জন দক্ষ কর্মী। 
প্রশ্ন: সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের জন্য আপনার পরামর্শ কি?

উত্তর: আসলে সোস্যাল মিডিয়ার ভালো খারাপ দুইদিক-ই আছে। নেগেটিভ না নিয়ে পজেটিভ দিকটাই সময় দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

প্রশ্ন: ফ্যানফেয়ার নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? অন্য কোনও দেশে এর যাত্রার পরিকল্পনা আছে কি?

উত্তর: ফ্যানফেয়ার নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন আছে, আছে অনেক পরিকল্পনা। আমাদের এখন প্রায় দুই লাখ এর মত ইউজার। ফ্যানফেয়ারকে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় আ্যাপস বানাতে আস্তে আস্তে শক্তভাবে এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমি আর আমার পুরো টিম। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে সফল হলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এবং সেভেন সিস্টার্সের অন্তৰ্ভূক্ত স্থানগুলোতে ফ্যানফেয়ারের যাত্রার পরিকল্পনা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত