কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন মারা গেছেন

প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২১, ২০:৪২

সাহস ডেস্ক
রাবেয়া খাতুন

হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।

আজ রবিবার (৩ জানুয়ারি) বিকেল ৫টায় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে বনানীর বাসায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চ্যানেল আইয়ের অনুষ্ঠান বিভাগের মহাব্যবস্থাপক ও শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম।

মহীয়সী নারী রাবেয়া খাতুনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাবেয়া খাতুনের স্বামী প্রয়াত এ টি এম ফজলুল হক ছিলেন দেশের চলচ্চিত্রবিষয়ক প্রথম পত্রিকা সিনেমার সম্পাদক ও চিত্রপরিচালক। বাংলাদেশের প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘প্রেসিডেন্ট’-এর পরিচালকও তিনি। ১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই তাঁদের বিয়ে হয়। তাঁদের চার সন্তান ইমপ্রেস টেলিফিল্ম চ্যানেল আই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, রন্ধন বিশেষজ্ঞ কেকা ফেরদৌসী, স্থপতি ফরহাদুর রেজা প্রবাল ও ফারহানা কাকলী। ফরিদুর রেজা সাগর এবং ফরহাদুর রেজা প্রবাল বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। আগামীকাল বিকেলে রাবেয়া খাতুনকে বনানী কবরখানায় দাফন করা হবে।

রাবেয়া খাতুন এর জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকার বিক্রমপুরে তাঁর মামার বাড়িতে। তার বাবার বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর গ্রামে। তাঁর বাবা মৌলভি মোহাম্মদ মুল্লুক চাঁদ এবং মা হামিদা খাতুন। তিনি আরমানিটোলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা (মাধ্যমিক) পাস করেন ১৯৪৮ সালে। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের মেয়ে হওয়ায় বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতেই তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর রচিত প্রথম উপন্যাস ‘নিরাশ্রয়া’ (অপ্রকাশিত)।

রাবেয়া খাতুন লিখেছেন উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, কিশোর উপন্যাস, স্মৃতিকথা। তাঁর লেখা থেকে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র ও নাটক। পঞ্চাশের দশকে এই অঞ্চলের মুসলিম নারীদের জীবন যখন নানা বিধিনিষেধের বেড়াজালে বন্দী, তেমন সময়ে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন একজন লেখক হিসেবে। কথাসাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত হলেও রাবেয়া খাতুন একসময় শিক্ষকতা করেছেন। সাংবাদিকতার সঙ্গেও দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন। ‘ইত্তেফাক’, ‘সিনেমা’ পত্রিকা ছাড়াও তাঁর সম্পাদনায় পঞ্চাশের দশকে প্রকাশিত হতো ‘অঙ্গনা’ নামে নারীদের একটি মাসিক পত্রিকা।

রাবেয়া খাতুন রচিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মেঘের পর মেঘ’ অবলম্বনে একই নামে ২০০৪ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম। ২০১১ সালে তাঁর আরেক জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মধুমতি’ অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন পরিচালক শাহজাহান চৌধুরী। ২০০৩ সালে তাঁর লেখা ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ অবলম্বনে এই নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন অভিনেত্রী মৌসুমী।

রাবেয়া খাতুন বাংলা একাডেমির কাউন্সিল মেম্বার। জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের গঠনতন্ত্র পরিচালনা পরিষদের সদস্য, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরিবোর্ডের বিচারক, শিশু একাডেমির কাউন্সিল মেম্বার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান ‘নতুন কুড়ি’র বিচারক। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জাতীয় বিতর্কের জুরিবোর্ডের বিচারক ও সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। যুক্ত ছিলেন বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, ঢাকা লেডিজ ক্লাব, বিজনেস ও প্রফেশনাল উইমেন্স ক্লাব, বাংলাদেশ লেখক শিবির, বাংলাদেশ কথাশিল্পী সংসদ ও মহিলা সমিতির সঙ্গে।

তাঁর লেখা বিভিন্ন উপন্যাসের মধ্যে আছে ‘মধুমতি’, ‘সাহেব বাজার’, ‘অনন্ত অন্বেষা’, ‘রাজারবাগ শালিমারবাগ’, ‘মন এক শ্বেত কপোতী’, ‘ফেরারী সূর্য’, ‘অনেকজনের একজন’, ‘জীবনের আর এক নাম’, ‘দিবস রজনী’, ‘সেই এক বসন্তে’, ‘মোহর আলী’, ‘নীল নিশীথ’, ‘বায়ান্ন গলির এক গলি’, ‘পাখি সব করে রব’, ‘নয়না লেকে রূপবান দুপুর’, ‘মিড সামারে’, ‘হানিফের ঘোড়া’, ‘হিরণ দাহ’, ‘এই বিরহকাল’, ‘হোটেল গ্রীন বাটন’, ‘বাগানের নাম মালনিছড়া’, ‘প্রিয় গুলশানা’, ‘বসন্ত ভিলা’, ‘ছায়া রমণী’, ‘সৌন্দর্যসংবাদ’, ‘হৃদয়ের কাছের বিষয়’, ‘মালিনীর দুপুর’, ‘রঙিন কাচের জানালা’ ইত্যাদি।

সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার-১৯৭৩, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার-১৯৮৯, একুশে পদক-১৯৯৩, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ-১৯৯৪, নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক-১৯৯৫, জসিমউদ্দিন পুরস্কার-১৯৯৬, শেরে বাংলা স্বর্ণপদক-১৯৯৬, শাপলা দোয়েল পুরস্কার-১৯৯৬, টেনাশিনাস পুরস্কার-১৯৯৭, ঋষিজ সাহিত্য পদক-১৯৯৮, অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার-১৯৯৮, লায়লা সামাদ পুরস্কার-১৯৯৯, অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৯৯৯, মিলেনিয়াম অ্যাওয়ার্ড-২০০০, টেলিভিশন রিপোটার্স অ্যাওয়ার্ড-২০০১, বাংলাদেশ কালচারাল রিপোটার্স অ্যাওয়ার্ড-২০০২, শেলটেক পদক-২০০২ এবং মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার-২০০৫ ইত্যাদি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত