সবজির রাজ্য যশোরে নেই কোন হিমাগার

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩, ১৬:১৬

যশোর প্রতিনিধি
ছবি: সাহস

সবজির রাজ্য খ্যাত যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর ও কাশিমপুর ইউনিয়ন। এখানে বারো মাস সবজির চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু সবজি সংরক্ষণের জন্য এখানে নেই কোনো হিমাগার। ফলে সংরক্ষণ সুবিধার অভাবে সবজির নায্য মূল্য বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

চাষিরা বলছেন, হিমাগারে সবজি সংরক্ষণ করতে পারলে ব্যবসায়ীদের কারসাজি থেকে রেহাই পেতেন। এদিকে, সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, খুব শিগগিরি চাষিদের প্রাণের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। সবজির হিমাগার নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। 

যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, যশোর জেলায় ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমানে চাষ করেছেন চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর ও কাশিমপুর ইউনিয়নের চাষিরা। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, হৈবতপুর ইউনিয়নে ২ হাজার ৪৩২ হেক্টর, চুড়ামনকাটি  ইউনিয়নে ১ হাজার ২৬ হেক্টর ও কাশিমপুর ইউনিয়নে ৮৬৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে। শীতের ভরা মৌসুমে সবজির আবাদের পরিমাণ আরও বাড়বে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানকার উৎপাদিত সবজিকে ঘিরেই চুড়ামনকাটি ও বারীনগর সাতমাইল বাজারে প্রতিদিন সবজির পাইকারী হাট বসে। কৃষকরা খুব সকালেই বাইসাইকেল, ভ্যান অথবা আলমসাধুযোগে হরেক রকমের সবজি নিয়ে পাইকারি হাটে পৌঁছান। আবার কেউ কেউ মাথায় করেও শাক সবজি বাজারে নিয়ে আসেন। যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের চুড়ামনকাটি ও সাতমাইল বাজারের রাস্তার দুই ধারে সবজি আর সবিজ। এই সবজি কেনার জন্য ঢাকা, খুলনা চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার ব্যবসায়ীরা আসেন। তারা ট্রাক ট্রাক সবজি কিনে নিয়ে যান। 

কৃষকরা জানান, ভরা মৌসুমে তারা সবজি বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য পান না। তারপরেও বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করছেন। দাম না পেয়ে অনেক সময় ক্ষেতের সবজি গরু ছাগল দিয়ে খাইয়েও দেন।

ভুক্তভোগীরা আরও জানিয়েছেন, পাইকার ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারসাজিতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সিন্ডিকেট তৈরি করে ব্যবসায়ীরা দাম কমিয়ে দেয় বেশি লাভবান হওয়ার জন্য। তবে সবজির হিমাগার থাকলে ব্যবসায়ীরা কৃষকদের ঠকানোর সুযোগ পেতো না।

কৃষক হাফিজুর রহমান ও জসিম উদ্দিন জানান, হিমাগার থাকলে ব্যবসায়ীরা তাদের ঠকাতে পারতেন না। ন্যায্য দামে সবজি কিনতে বাধ্য হতেন। অন্যথায় দাম কম হলে বিক্রি না করে হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারতেন। পরে ন্যায্য দামে সবজি বিক্রি করতে পারতেন। এতে আর্থিকভাবে লাভবান হতেন তারা। হিমাগার স্থাপন অনেক কৃষকের প্রাণের দাবি হলেও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা শুধু আশ্বাস দিয়ে যান। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়না। কবে হিমাগার হবে তাও তারা জানেন না। আরেক কৃষক সুলতান জানান, চুড়ামনকাটি হৈবতপুর এলাকায় প্রতি মৌসুমে সবজির চাষ বাড়ছে। ফলে কৃষকদের সুবিধার্থে যত দ্রুত সম্ভব হিমাগার তৈরি করা প্রয়োজন।

কৃষি বিপণন অধিদফতর যশোরের সিনিয়র মার্কেটিং অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, জেলার মধ্যে সব চেয়ে বেশি সবজির চাষ হয় চুড়ামনকাটি হৈবতপুর ও কাশিমপুর ইউনিয়নে। ফলে সেখানে সবজি হিমাগার নির্মাণ করা ওই এলাকার কৃষকের দীর্ঘ দিনের দাবি। সেই প্রাণের দাবি বাস্তবায়ন হতে চলেছে। হৈবতপুরের কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের পিছনে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। সেখানে ৫ মেট্রিকটন সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগার তৈরি করা হবে। এতে করে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য পেয়ে কষ্ট ঘুচবে।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক জানিয়েছেন, চুড়ামনকাটি হৈবতপুর ও কাশিমপুর ইউনিয়ন সবজির রাজ্য হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। এখানকার কৃষকরা বারোমাস সবজির আবাদ করে।  ফলে এখানে সবজির হিমাগার তৈরির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। বিষয়টি তারা আমলে নিয়েছেন। কৃষকদের স্বপ্নের হিমাগার খুব শিগগিরি নির্মাণ হবে। তিনি আরও জানান, সবজির রাজ্যে প্যাকিং হাউজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে করে কৃষকরা সবজি প্যাকিং করে খুব সহজে বিদেশে পাঠাতে পারবে। কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে সব ধরণের পরিকল্পনা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত