ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে বরিস জনসনসহ আরো তিন এমপির পদত্যাগ

প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৩, ১৮:৪১

বিবিসি
বরিস জনসন। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশটির কনজারভেটিভ দলের এমপি বরিস জনসন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেছেন। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন, জানিয়েছে বিবিসি।

বরিস জনসনের পর এমপি পদ থেকে আরও দুজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। মাত্র দুই দিনের মধ্যে তিন এমপি সরে দাঁড়ানোয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের ওপর যুক্ত হয়েছে বাড়তি চাপ। এখন তাকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই তিন আসনে উপনির্বাচন আয়োজন করতে হবে।

শুক্রবার (৯ জুন) হাউজ অব কমন্স থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক নেতা বরিস জনসন। করোনা মহামারির লকডাউনের মধ্যেও জন্মদিনসহ অন্যান্য পার্টি করায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছিল প্রিভিলিজেস কমিটি। জনসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, লকডাউনে পার্টি করেও হাউজ অব কমন্সের সঙ্গে মিথ্যাচার করেছেন তিনি। তবে এ কমিটি রায় দেওয়ার আগেই সরে গেছেন তিনি

পদ ছেড়ে দিয়ে জনসন বলেছেন, পার্টিগেট কেলেঙ্কারিকে কেন্দ্র করে ‘পার্লামেন্ট ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে’ তাকে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আগেভাগেই ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সের প্রিভিলেজেস কমিটির খসড়া তদন্ত প্রতিবেদন দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন।

কোভিড-১৯ লকডাউন চলাকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটে করা পার্টি নিয়ে জনসন হাউস অব কমন্সকে বিভ্রান্ত করেছিলেন কিনা, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব পেয়েছিল ওই কমিটি।

দীর্ঘ বিস্ফোরক বিবৃতিতে জনসন এ কমিটিকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ অ্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, “তথ্যউপাত্ত যাই থাক না কেন, আমাকে দোষী বানানোই ছিল কমিটির উদ্দেশ্যই।” অন্যদিকে প্রিভিলেজেস কমিটি বলছে, তারা কেবল ‘পদ্ধতি ও নির্দেশনাই অনুসরণ’ করেছে।

অন্য দলের সদস্য থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ রক্ষণশীল এমপি নিয়ে গঠিত কমিটিটি জানিয়েছে, সোমবারই তদন্তের সমাপ্তি টানা হবে, এরপর যত দ্রত সম্ভব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। জনসনের পদত্যাগের ফলে এখন তার আসন অক্সব্রিজ ও সাউথ রুইস্লিপে উপনির্বাচন হবে।

নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় জনসন বলেন, যে খসড়া প্রতিবেদনটি দেখেছেন, সেটি ‘ত্রুটিপূর্ণ ও উল্টোপাল্টা কথায় সাজানো’।

“এটা পরিষ্কার, আমাকে পার্লামেন্ট থেকে বের করে দিতে তারা আমার বিরুদ্ধে যাবতীয় পদ্ধতি ব্যবহারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল।

“আমি জেনেশুনে বা বেপরোয়াভাবে কমন্সকে বিভ্রান্ত করেছিলাম, এ সংক্রান্ত এক টুকরা প্রমাণও দিতে পারেনি তারা। আমি মিথ্যা বলিনি,” জোর দিয়ে বলেছেন জনসন।

কমিটির চেয়ারওম্যান লেবার পার্টির হ্যারিয়েট হারমানকে ‘নির্লজ্জ পক্ষপাতদুষ্ট’ অ্যাখ্যা দিয়ে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাকে যেভাবে পার্লামেন্ট থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে, তাতে তিনি ‘বিস্মিত ও স্তম্ভিত’।

মার্চে শুনানিতে দেওয়া সাক্ষ্যে জনসন লকডাউনের মধ্যে ডাউনিং স্ট্রিটের পার্টি নিয়ে পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করার কথা স্বীকার করে নিলেও তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করেননি বলে দাবি করেছিলেন তিনি। ওই শুনানিতে তুমুল কথা কাটাকাটি হয়েছিল।

সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কোভিড লকডাউনের সময় ডাউনিং স্ট্রিটে জমায়েত হওয়াদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব সবসময় ‘সঠিক’ ছিল না, তবে তিনি যতখানি বুঝেছিলেন, সে অনুযায়ী নির্দেশনা সবসময় ঠিকঠাক অনুসরণ করা হয়েছিল।

জনসন তার চিঠিতে ঋষি সুনাকের বর্তমান সরকারেরও কড়া সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, পরিপূর্ণ রক্ষণশীল হতে ভয় পাওয়া উচিত নয় আমাদের। দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ঝুঁকির মুখে আছে বলে সতর্কও করেছেন তিনি।

২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোটের ফল উল্টে দেওয়ার লক্ষ্যেই তাকে ‘ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে’ বলে সমর্থকদের সাবধানও করে দেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত